পণ্য আমদানিতে ডলার সংকট ও দেশীয় ফলের ব্যবহার বাড়াতে আসন্ন রমজান উপলক্ষে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি বিদেশি ফল ছাড়া বাকি সব বিদেশি ফল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণের পক্ষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করবে সংস্থাটি।
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে পাইকারি ও খুচরা ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানিয়েছেন খোদ মহাপরিচালক এএইচএম. সফিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতিত্ব করেন।
সফিকুজ্জামান বলেন, রমজান উপলক্ষে খেজুর, মালটা, আপেল, আঙুর ও কমলার চাহিদা মেটানোর জন্য এলসি খোলা সহজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে থাইল্যান্ডের আম ১ হাজার টাকায় কেন কিনতে হবে! অনেক ফল আছে, যেগুলোর মান ও স্বাদ কম। এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিদপ্তর অতিমূল্যের বিদেশি ফল আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করবে। খেজুর, মাল্টা, আপেল, আঙুর ও কমলা ছাড়া অন্যান্য বিদেশি ফল আমদানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকবে। এলসি খোলার ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ করা হবে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। তবে চলমান পরিস্থিতি অধিদপ্তরের সুপারিশ থাকবে, যাতে পর্যায়ক্রমে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
ভোক্তার মহাপরিচালক বলেন, রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ এ দেশের প্রেক্ষাপটে একটি চ্যালেঞ্জ। আবার বৈশ্বিক অস্থিরতা পরিস্থিতির মধ্যে সেটা এবার আরও বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেটা করতে হবে। সবাইকে সহনশীল হতে হবে। ব্যবসায়ীদের কম লাভ করতে হবে। ভোক্তাকেও সহনশীল হতে হবে এখন। মনে রাখবেন, রমজান খরচের মাস নয়, সংযমের মাস। আসুন বিলাসিতা বন্ধ করি, রমজানের পবিত্রতা বজায় রাখি। উত্তরা থেকে চকবাজারে এসে ইফতার কেনা বন্ধ করি। এ বছর খারাপ সময় যাচ্ছে। সবাই মিলে চেষ্টা করে এ খারাপ সময় ভালোভাবে পার করব।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা একমত হয়েছেন, আমদানি করা ড্রাগন, রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো ও রকমেলনের মতো বিলাসবহুল ফল উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশি ফলের বাজারে। পাশাপাশি আপেল, আঙুর ও কমলার মতো বিদেশি ফলের দামও বাড়ছে।
আমদানি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অতি বিলাসবহুল ফল আমদানি আপাতত বন্ধ রাখা যেতে পারে। ভবিষ্যতে দেশে এসব বিদেশি ফল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করতে পারে কিনা সেটা দেখতেও আমরা সুপারিশ করেছি। এখন আবার করব। তবে খেজুর, মাল্টা, আপেল, কমলা ও আঙুর আমদানিতে সহায়তা দেওয়া হবে বলে সরকারের এই দপ্তর জানিয়েছে। সভায় ফল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ফলের দাম গত বছরের তুলনায় এবছর এমনিতেই বাড়বে। ডলারের দামের কারনে আমদানি ফলের দাম এবছর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়বে।
ফল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশে ফলের যে চাহিদা তার মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়। বাকি ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এ ছাড়া রমজানে ৪০ হাজার টন ফল আমদানি করতে হয়। কিছু ফল ইতোমধ্যে আমদানি করলেও এলসি বন্ধ থাকায় চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা যায়নি। ফলে চাহিদা অনুসারে জোগান না থাকলে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভোক্তার মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন বিদেশি ফল সময়মতো বন্দরে খালাস করা যায় না। সেজন্য তারা আর্থিক ক্ষতিতে পড়েন। আমরা বিদেশি ফল আমদানিতে বন্দরে আটকে থাকার বিষয়টি দেখব। দ্রুত ফল খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও এ নিয়ে যোগাযোগ করা হবে। সভায় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নান, ফল ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।