বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন




উপরে নীল আকাশ, চারদিকে শান্ত জলরাশি

ঘুরে আসুন টাঙ্গুয়ার হাওর

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ২:২৫ pm
Tanguar Tangua Haor located Dharmapasha Tahirpur Sunamganj unique wetland ecosystem national importance international focus টাঙ্গুয়ার টাঙ্গুয়া হাওর সিলেটের সিলেট সুনামগঞ্জ জেলা হাওর নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল বর্ষাকাল পাখি শীতকালে নীলাদ্রি লেক লাকমাছরা ওয়াচ টাওয়ার জাদুকাটা নদী বারিক্কাটিলা Haor হাওর বুক Tourism ভ্রমণ পর্যটন ট্রাভেল ট্যুরিজম Bangladesh Parjatan Corporation haour Tangua Haor হাওর বুক Tourism ভ্রমণ পর্যটন ট্রাভেল ট্যুরিজম Bangladesh Parjatan Corporation haour Tanguar
file pic

উপরে নীল আকাশ, চারদিকে শান্ত জলরাশি। স্বচ্ছ নদীমাতৃক বাংলাদেশের অপরূপ প্রতিচ্ছবি। নৌকা নিয়ে গোটা বিল চষে বেড়ানো, পাশেই উড়ন্ত সাদা বকের ঝাঁক, চারপাশ জুড়ে চেনা-অচেনা পাখিদের মিলন মেলা; শীতের ভ্রমণের অন্যতম এক আকর্ষণ। শীতের সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে উড়ে আসা পাখিদের কলতানে মুখরিত হয়ে থাকে আমাদের দেশের এসব হাওর অঞ্চল। শীতের সময়ে এসব হাওরের রূপ-বৈচিত্র্য দেখার জন্য ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে।

টাঙ্গুয়ার হাওর মানুষের কাছে ভ্রমণের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। বর্ষা ও শীত দুই ঋতুতেই টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়া যায়। দুই মৌসুমে হাওরে দেখতে পাবেন দুই রূপ। শীতে দেখতে পাবেন হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলি আর বর্ষাকালে পানির খেলা। দুই মৌসুমই আপনার মন মাতাতে বাধ্য। ভ্রমণ পিপাসুদের তাই টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রতি আগ্রহ এখন অনেক বেশি। চলুন জেনে নিই এই কনকনে শীতে টাঙ্গুয়ার হাওরের ভ্রমণবৃত্তান্ত।

দর্শনীয় জায়গা

প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। এটি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরনা এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি।

স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি ‘নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল’ নামেও পরিচিত। এখানে হাওরের পাশাপাশি আপনারা আরও যে যে স্থানগুলো দেখতে পাবেন তা হলো—

১. যাদুকাটা নদী ২. বারেকের টিলা ৩. টেকেরঘাট এবং বরছরা ৪. চুনাপাথরের লেক ৫. অদ্বৈত শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাড়ি

টাঙ্গুয়ার হাওরে যেতে হলে আগে সুনামগঞ্জ যেতে হবে, তাই সময় পেলে ঘুরে আসুন সুনামগঞ্জে দেখার মতো এ জায়গাগুলো:

১. শাহ আরেফিনের মাজার ২. শাহ আব্দুল করিমের বাড়ি ৩. হাসন রাজার বাড়ি এবং তাঁর সমাধি ৪. নারায়ণতলা ৫. গৌরারং জমিদার বাড়ি

কীভাবে যাবেন ?

শীতকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণের রুটটা একটু পরিবর্তন হয়। প্রথমে ঢাকা থেকে আপনাকে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। তার পর সুনামগঞ্জের নতুন ব্রিজ থেকে আপনি লেগুনা, বাইক অথবা সিএনজি করে আসবেন তাহেরপুর। সেখানে আপনি সকালের খাবার খাবেন এবং দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য বাজার করে নিবেন। তাহেরপুর থেকে আপনাকে যেতে হবে সোলেমানপুর। যেহেতু শীতকালে পানি কমে যায় সে কারণে নৌকায় সোলেমানপুর ঘাট থেকে উঠতে হয়। দুপুরে আপনি হাওরের স্বচ্ছ পানিতে গোসল করেতে পারেন। আর রান্না নৌকাতেই করবেন, তাতে করে ছোট্টবেলার চড়ুইভাতির মতো মজা পাবেন। খাবারও সেখানেই। সোলেমানপুর থেকে নৌকা করে ওয়াচ টাওয়ার এর কাছে নৌকা ভিড়াবেন। রাতে দেখতে পাবেন তারাভরা আকাশ, নৌকার উপরে শুয়ে তারা ভরা আকাশ দেখার অনুভূতিটাই অন্যরকম। সকালে অতিথি পাখি দেখার পালা। অতিথি পাখি দেখার জন্য মূল নৌকা থেকে নেমে আপনাকে ছোট ডিঙি নৌকায় উঠতে হবে। তারপর চলে যাবেন পাখি দেখার জন্য। কিন্তু ভুল করেও পাখি মারার বা ধরার অথবা কেনার চেষ্টা করবেন না। তারপর শ্রীপুরে গিয়ে মোটরসাইকেলযোগে টেকেরঘাট, সেখান থেকে বারেকেরটিলা এবং যাদুকাটা নদীর পাড়। চাইলে নতুন দর্শনীয় জায়গা শিমুলবাগানও দেখে আসতে পারেন। সবগুলা জায়গা দেখা শেষ করে সুনামগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে ব্যাক করবেন।

যা দেখতে পাবেন

ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি হিজল-করচ শোভিত, পাখিদের কলকাকলি মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজপ্রাণির এক বিশাল অভয়াশ্রম। অতিথি পাখি দেখতে প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসছেন পাখিপ্রেমিক ও পর্যটকরা। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে প্রচণ্ড ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে নেপাল, চীন, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসে অতিথি পাখি। লেনজা, মৌলভী, বালিহাঁস, সরালি, কাইম, কলাকুড়াসহ শতাধিক প্রজাতির লাখ লাখ অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয় টাঙ্গুয়ার হাওর। এ হাওরে প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে।

পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিরল প্রজাতির প্যালাসেস, ঈগল, বড় আকারের গ্রে-কিংস্টক আসে এই হাওরে। স্থানীয় জাতের মধ্যে শকুন, পানকৌড়ি, কালেন, বৈদর, ঢাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক, শঙ্খচিল উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আছে বিপন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। এ ছাড়া ছয় প্রজাতির স্থন্যপায়ী প্রাণি, চার প্রজাতির সাপ, বিরল প্রজাতির উভচর, ছয় প্রজাতির কচ্ছপ, সাত প্রজাতির গিরগিটিসহ বিভিন্ন রকমের প্রাণির বাস। এসব পাখি হাওরের জীববৈচিত্র্যকে করেছে ভরপুর।

এ ছাড়াও নলখাগড়া, দুধিলতা, নীল শাপলা, পানিফল, শোলা, হেলেঞ্চা, শতমূলি, শীতলপাটি, স্বর্ণলতা, বনতুলসী ইত্যাদিসহ ২০০ প্রজাতিরও বেশি গাছগাছালি। হাওর ছাড়াও মেঘালয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো অত্যন্ত মনোরম ও সুন্দর দৃশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।

স্বল্প খরচে এক-দুইদিনের মধ্যে ঘুরে আসার জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো জায়গা হাতের কাছে পাবেন না। একা না গিয়ে দলবেঁধে যাওয়াই ভালো। হোটেল, খাবার, যাতায়াতের ব্যাপারে আগে থেকে দরদাম ঠিক করে নিবেন, নাহলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD