বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন




কবরে প্রশ্ন করা হবে না যাদেরকে

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১১:২৪ am
মৃত্যু মৃত্যুবরণ grave dead body buried funeral burial মৃত কবর দাফন জিয়ারত যিয়ারত জানাজা
file pic

মানুষ মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। তিনি নিজেই কুরআনে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন, ‘তোমাদেরকে উত্তম জাতি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে অসৎ কাজ থেকে মানুষকে নিষেধ করবে।’ (সূরা আলে ইমরান-১১০)

মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে সে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত-বন্দেগি করবে। তাঁর দাসত্ব ও গুণগানে মগ্ন থাকবে এবং দ্বীন ইসলামের আহকামগুলো পালন করবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি জিন এবং মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য।’ (সূরা জারিয়াত-৫৬)

মহান আল্লাহ দেখতে চান কে পৃথিবীতে ভালো আমল করে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে পারে। তিনি বলেন, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন জীবন ও মরণ, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা মুলক-২)

যারা আল্লাহর বিধিনিষেধ ভালোভাবে পালন করবে তাদেরকে প্রতিদান হিসেবে জান্নাত উপহার দেবেন। আর যারা তার বিধিনিষেধ অমান্য করবে তাদের প্রতিদান হিসেবে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করতে হবে। মানুষ আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবীতে নির্দিষ্ট একটি সময় বিচরণ করে। এই বিচরণকালীন সময়ের অবসান হবে মৃত্যু নামক বাস্তবতার মাধ্যমে। মৃত্যুর পর আখিরাতের প্রথম মঞ্জিল শুরু হবে কবরে। যারা আখিরাতের এ প্রথম মঞ্জিল পার হতে পারবে পরের মঞ্জিলগুলোতে পার হওয়া তার জন্য সহজ হবে।

তবে আল-কুরআন ও হাদিসের ভাষ্য মতে, যদি কোনো মুসলমানের ভেতরে পাঁচটি গুণ বিদ্যমান থাকে, তাহলে তাকে কবরে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। সে আখিরাতের প্রথম মঞ্জিল বিনা জবাবে পার হতে পারবে।

ওই ব্যক্তি যে ইসলামী রাষ্ট্রের ভূ-খণ্ডকে পাহারা দেয়

যে সেনারা ইসলামী রাষ্ট্রের ভূ-খণ্ডকে শক্রর হাত থেকে অক্ষত রাখার জন্য পাহারা দেয়, মুসলমান ভাইদের নিরাপত্তায় নিজেকে নিয়োজিত রাখে এবং তা যদি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে থাকে তাহলে সেই পাহারাদার বা বর্ডার গার্ড কবরে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে না।

শহীদ

যারা আল্লাহর তাওহিদ বা একাত্মবাদকে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ তায়ালার আহকাম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাতিলের আঘাতে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দেয় তারাই শহীদ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা অনুভব করতে পারো না।’ (সূরা বাকারা-১৫৪) কিন্তু অনেক শহীদকে আল্লাহ তায়ালা প্রশ্নের মুখোমুখি করবেন, যারা দুনিয়াতে নিজের প্রতিপত্তি লাভের আশায়, লোকে তাকে বীরপুরুষ বলবে- এই আশায় নিজের জীবন দেয়, আল্লাহর রাস্তায় মরলেও তারা শহীদ বলে বিবেচিত হবে না। যারা আল্লাহকে খুশি করার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেন, দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ যার থাকে না তারাই প্রকৃত শহীদ। প্রকৃত শহীদরা কবরে প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন না।

সূরা মুলক নিয়মিত পড়বে যারা

সূরা মুলক পবিত্র কুরআনুল কারিমের ৬৭তম সূরা, আয়াত সংখ্যা ৩০, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়। যারা নিয়মিত সূরা মুলক তিলাওয়াত করবে তারা কবরে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে না। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ‘তোমরা সূরা মুলক শিখে নাও এবং তোমাদের স্ত্রী-সন্তানদের শেখাও। এটি কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবে এবং এই সূরা তিলাওয়াতকারীর জন্য কিয়ামতে সুপারিশ করবে ও তাকে মুক্ত করবে। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত সূরা মুলক তিলাওয়াতের আমল করবে, সে কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাবে।’

জুমার দিনে মৃত্যুবরণ করা

জুমার দিনের ফজিলত অনেক। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! জুমার দিন তোমাদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়ছেন।’ (মুয়াত্তা, ইবনে মাজাহ, মিশকাত) এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে তাহলে তাকে কবরে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে না। শর্ত হলো- ওই ব্যক্তি অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণ হতে হবে।

পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী

পেটের পীড়ায় কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে কবরে সে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে না। পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারীকে শহীদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। শহীদ প্রথমত দুই প্রকার- ক. যারা সরাসরি আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয়; খ. হুকুমি শহীদ অর্থাৎ তারা শহীদের মর্যাদা পাবে। জাবের রা:-এর বর্ণনা মতে, ‘সন্তান প্রসব বেদনায় মৃত্যুবরণকারী নারীও শহীদের মর্যাদা পাবে।

উপরে উল্লিখিত পাঁচটি গুণ যার ভেতরে থাকবে তারা কবরে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে না। এই গুণগুলো প্রত্যেক মুসলমানের ব্যক্তিজীবনে অর্জন করা উচিত।

লেখক: আব্দুল কাইয়ুম, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD