কভিড মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি, ডলারের দামের তুলনায় অন্যান্য মুদ্রার দাম কমে যাওয়াসহ নানা কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। বড় করপোরেট কোম্পানিগুলোও তাদের নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০২৩ সালেও দাম বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার। কোম্পানিটি বলছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ডিটারজেন্ট, সাবান ও প্যাকেটজাত খাবারের দাম বাড়বে। এরপর মূল্যবৃদ্ধির এ ধারা কিছুটা সহজ হবে। খবর রয়টার্স।
ফেইরি ওয়াশিং আপ লিকুইড, ডাভ সাবান, বেন অ্যান্ড জেরি’স আইসক্রিমের মতো জনপ্রিয় সব পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানটি মূল্যস্ফীতির এ প্রভাব ২০২৩ পুরোটাই বিরাজমান থাকার কথা জানিয়েছে।
মূলত মহামারীর পর থেকে সব ধরনের কাঁচামালের দামই বাড়তে শুরু করেছে। ময়দা থেকে শুরু করে ভোজ্যতেল, কোকোয়া সবকিছুর দামই বেড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্যাকেটজাত খাবারের দামও বাড়াতে হয়েছে। শিল্প খাতটি এখনো কভিড মহামারীর কারণে সৃষ্ট সরবরাহ চেইনের সংকটই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় কাঁচামালের দাম আরো বেড়ে গেছে। সেসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জ্বালানি ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দামও।
ইউনিলিভারের প্রধান নির্বাহী অ্যালান জোপ বলেন, ‘চলতি বছর প্রবৃদ্ধির বেশকিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেখা পাওয়া যাবে।’
২০২৩ সালে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব যে ক্রেতা সংখ্যার ওপর পড়বে, সে বিষয়ে আমরা পুরোপুরি অবগত। সেসঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকার জন্য হলেও দাম কমানো উচিত আমাদের। এর পরও মূল্যস্ফীতির কারণে কিছু পণ্যের দাম বাড়াতেই হচ্ছে।’
অবশ্য বছরের দ্বিতীয়ার্ধে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি এ শীর্ষ কর্মকর্তা। ইউনিলিভার বলছে, এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতিজনিত ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ পূরণ হয়েছে। মোট মার্জিন পুনরুদ্ধারে ১০০ শতাংশ ব্যয় পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন।
ইউরোপের কিছু কোম্পানি জানিয়েছে, কাঁচামালের দাম কমায় ও জ্বালানির খরচ কিছুটা কমে আসায় সামনের বছরগুলোয় পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়া হবে। যাতে ক্রেতার ঘরে কিছুটা স্বস্তি পৌঁছে দেয়া যায়।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছরটি ইউনিলিভারের জন্য বেশকিছু কারণেই নাটকীয় ছিল। জিএসকে’র স্বাস্থ্য খাতের ব্যবসা কিনতে তিনবার নিলামে অংশ নিলেও তাতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। একই সময় ইউনিলিভারের পর্ষদে যুক্ত হন অ্যাক্টিভিস্ট নেলসন পেলজ এবং প্রধান নির্বাহী অ্যালার জোপ কোম্পানি ছাড়ার ঘোষণা দেন। জানা গেছে, ডেইরি খাতের নির্বাহী হেইন শুমাখার নতুন প্রধান নির্বাহী হিসেবে যোগ দিতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন প্রধান নির্বাহী পণ্যের দাম কমানোর বিষয়ে উদ্যোগী হবেন।