জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি তার পদত্যাগ পত্র বায়রার সভাপতি আবুল বাসারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পদত্যাগপত্রে তার বিরুদ্ধে বায়রার সদস্যদের অভিযোগের কথা ‘ভিত্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করলেও তিনি জানিয়েছেন, পদত্যাগের কারণ তার ব্যক্তিগত। তবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘গভীর দুঃখের সাথে আমি বায়রা কার্যনির্বাহী কমিটির মহাসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করছি। গত ৩০ জানুয়ারি বায়রার বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকা হয়েছিল। সেখানে কিছু দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির কারণে বায়রার অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধন অনুসারে এটি স্থগিত করতে হয়। মুলতবি সভার পরবর্তী তারিখ আজ (গতকাল) ১১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছিল। সভায় এজিএম স্থগিত হওয়ার পরিস্থিতির জন্য আমাকে যুক্তিহীন এবং অযৌক্তিকভাবে দায়ী করা হয়েছে।’
পদত্যাগপত্রে তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়াদে আমি সর্বদা সভাপতির নির্দেশ এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুসারে কাজ করেছি। তাই আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো অবাঞ্ছিত এবং অগ্রহণযোগ্য।’
পদত্যাগপত্রে বায়রার মহাসচিব বলেন, ‘আমি বায়রার সভাপতির ইচ্ছায় কাজ করি এবং সেই মোতাবেক নির্বাচিত মহাসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে এসেছি। বায়রার কল্যাণে আমি আমার জীবন দিয়েছি। তবে সমিতির সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কারণে আমি অবিলম্বে মহাসচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করা প্রয়োজন অনুভব করেছি। তাই আমি বায়রা থেকে পদত্যাগ করলাম।’
এই প্রসঙ্গে সভাপতি আবুল বাসারের কাছে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে বায়রার কয়েকজন সদষ্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারি এজিএম মুলতবি ঘোষণা করা হয়। এর পেছনে কারণ হিসেবে বলছেন, বায়রার আর্থিক প্রতিবেদন এজিএম এর ১৪ দিন আগে সদস্যদের কাছে পৌঁছানোর বাধ্যবাধকতা আছে। মহাসচিব হিসেবে এটি তার দায়িত্ব। বায়রার সদস্যরা তা না হওয়ায় তাকে দোষারোপ করেছেন। তাতে বায়রার ৩০ লাখ টাকার মতো আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির কারণে তার পদত্যাগ দাবি করেছে একটি অংশ।
বায়রা সূত্রে জানা যায়, মহাসচিব নোমান প্রথম সভাতেই নিজেই ভুল স্বীকার করে দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন যে, এটি তার ভুল ছিল।
বায়রার যুগ্ম মহাসচিব মো. ফখরুল আলম বলেন, ‘কিছু সদস্য তার পদত্যাগ দাবি করেছিল। আর্থিক প্রতিবেদন সময়মতো উপস্থাপন না করায় তিনি তার দায় স্বীকার করেছিলেন। তিনি এজন্য সদস্যদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।’
বায়রার এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘তার এই ভুলের সুযোগ প্রতিপক্ষের কয়েকজন লুফে নেন।’
এই প্রতিপক্ষ কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার নিয়ে একটা চক্র সক্রিয় সদস্যদের মধ্যেই। তারা মূলত সিন্ডিকেট চায়। নোমান সাহেব মূলত এই বাজার উন্মুক্ত করতেই চাইতেন, যদিও তার লাইসেন্স সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যেই একটি। মালয়েশিয়ার বাজার নিয়ে অনেকেরই ক্ষোভ ছিল। তার সঙ্গে এটার সম্পর্ক আছে। তিনি এই বাজার উন্মুক্ত করার জন্য বড় আকারে কাজ করছিলেন। সিন্ডিকেট যারা চায় তাদের মধ্যেই অনেক ক্ষোভ ছিল মহাসচিবকে নিয়ে।’
বায়রার ইসি কমিটির কয়েকজন সদস্য জানান, কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক অভিযোগ করেছেন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এ নিয়েও অনেকের মনেই ক্ষোভ ছিল।
প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার ‘সিন্ডিকেটমুক্ত’ করতে গত ২ ফেব্রুয়ারি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা। সেদিন সকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এই সভা শুরু হয়। পুরো সভার মধ্যে সিন্ডিকেট ইস্যুতে হট্টগোল চলে। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের ওপর ব্যবসায়ীদের চড়াও হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা তখন জানান, সকাল থেকে দফায় দফায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভায় সিন্ডিকেট ইস্যুতে হট্টগোল চলে। বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটিতে সিন্ডিকেটের সদস্য আছে কি নেই; সে প্রসঙ্গ নিয়েই হট্টগোল হয়। এক পর্যায়ে হোটেলে ক্রিকেট দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী এবং গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা অনুষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করেন।
এছাড়া সভায় উপদেষ্টা পদ থেকে ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারি নূর আলীকেও অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। [বাংলা ট্রিবিউন]