রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ১০:৫৫ অপরাহ্ন




মুখ থুবড়ে পড়েছে চালকদের ডোপ টেস্ট

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ১:২৯ pm
Dope test biological material urine hair blood breath sweat oral fluid ড্রাগ টেস্ট মাদক পরীক্ষা মাদকাসক্ত সনাক্তকরণ পেশাদার মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু নবায়ন চালক ডোপ টেস্ট চালকদের
file pic

মাত্র ৪ বছরের মাথায় মুখ থুবড়ে পড়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ডোপ টেস্ট প্রকল্প। প্রকল্পটির একাধিক বিষয়ের ফাঁকফোকর চিহ্নিতের পর সেটি বাতিল করে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। পাশাপাশি সরকারের সকল বিভাগের কারিগরি মতামত নিয়ে আগে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়েছে ডিএনসি। নতুন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ডিএনসি একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে।

ডিএনসি’র একটি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৮৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। সেই অনুযায়ী ১২টি জেলা ও ৮টি বিভাগীয় শহর নির্বাচিত করা হয়। তবে গত ১২ই ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় এটি বাতিল করে দেয়া হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডোপ টেস্টের এখতিয়ার রয়েছে।

সরকারি চাকরি প্রার্থী ছাড়াও বেসরকারি চাকরিজীবী এবং সরকারি চাকরিতে কর্মরত চালকসহ বিদেশে যাওয়া জনশক্তির নিয়মিত ডোপ টেস্টের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশালে বিভাগীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগার নির্মাণপূর্বক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আজিজুল ইসলাম জানান, ‘প্রকল্পটি চালু হয়েছিল। শুরু হয়েছিল কাজও। কিন্তু, পরিকল্পনা কমিশন বলেছে যে, একটি নীতিমালা প্রয়োজন রয়েছে। নীতিমালা হলে দ্রুতই শুরু হবে কার্যক্রম।’

ডিএনসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের সর্বত্র ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গাড়িচালক ও সরকারি চাকরি প্রার্থীরা। দেশের সবগুলো জেলা হাসপাতালে ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা না থাকায় অনেককেই ঢাকা বা বিভাগীয় শহরে যেতে হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রকল্প বাতিল হওয়ায় এই ভোগান্তি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি ঢাকায় এসেও অনেকে নির্দিষ্ট করে জানেন না কোথায় ডোপ টেস্ট হয়।

সূত্র জানায়, বিআরটিএ গত বছরের ১২ই জানুয়ারি পেশাদার মোটরযান লাইসেন্সের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করে একটি পরিপত্র জারি করে।

চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার স্বাক্ষরিত ওই পরিপত্রে বলা হয়, গাড়িচালকদের লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নকালে প্রার্থীদের আবেদনপত্রের সঙ্গে সরকারি হাসপাতাল কর্তৃক সম্পাদিত ডোপ টেস্ট রিপোর্টের সনদ দাখিল করতে হবে। ডোপ টেস্ট প্রতিবেদনে কেউ মাদকাসক্ত হলে তাকে লাইসেন্স দেয়া হবে না। ডোপ টেস্ট সারা দেশের সকল পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে এবং ঢাকা মহানগরীর ক্ষেত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠানে করা যাবে।

পরিপত্রে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।

সূত্র জানায়, চাকরি প্রার্থীদের অন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরীক্ষার সময় মুখের লালা পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ সাত দিন, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ দুই মাস, চুল পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ ১২ মাস এবং স্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষার মাধ্যমে ৫ বছরের মধ্যে কেউ মাদক গ্রহণ করলেও তা পরীক্ষায় ধরা পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু, বর্তমানে শুধু ইউরিন বা মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি নমুনা সংগ্রহের পূর্ববর্তী ১০ দিনের মধ্যে কোনো মাদক গ্রহণ করলে তা পরীক্ষায় ধরা পড়ে। এতে কেউ ওষুধ সেবন করলেও কখনো কখনো পজেটিভ হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, গত বছরের এপ্রিল মাসে এক নারী চাকরি প্রার্থী ডোপ টেস্ট করতে গিয়ে পজেটিভ হন। তিনি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ওষুধ সেবন করেছিলেন। পরবর্তীতে এজন্য তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি হতে হয়েছে। অনেক দৌড়ঝাঁপের পর তিনি চাকরি পেয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রকল্পটির নীতিমালা যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয় এজন্য কমিশনে চিঠি দিয়েছে ডিএনসি।

চিঠিতে বলা হয়, ডোপ টেস্ট দ্রুত চালু করা হোক। এই কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কারণে বিদেশগামীদের চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ছাড়াও অনেকই সনদের জন্য সদর দপ্তরসহ ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। চিঠিতে নতুন নীতিমালা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, টেস্টের আগে কেউ ডাবের পানি পান করতে পারবে না। কারণ অনেক পরীক্ষার্থী ডোপ টেস্টের ফলাফল নিজের অনুকূলে নেয়ার জন্য আগেই ডাবের পানি পান করে থাকেন।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD