মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন




নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষাবর্ষের আড়াই মাসেও বই সংশোধন হয়নি

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০২৩ ৮:০৫ pm
বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি NCTB Boi Mela Dhaka Book Fair Amor Ekushe Grantha Mela Ekushey Book Fair অমর একুশে গ্রন্থমেলা বইমেলা বই মেলা ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি চত্বর book fair নতুন বই উৎসব পাঠ্যবই book
file pic

শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় আড়াই মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো এখনো কাটেনি। প্রত্যাহার করা দুটি বই কীভাবে পড়ানো হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানায়নি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আবার যে তিনটি বই সংশোধনের কথা, তারও কিছু হয়নি। এনসিটিবি সূত্র বলছে, সংশোধনের কাজ শেষ করতে এ মাস লেগে যাবে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।

জিপিএর পরিবর্তে ফলাফল হবে তিন স্তরে। এর মধ্যে প্রথম স্তরকে বলা হবে পারদর্শিতার প্রারম্ভিক স্তর। দ্বিতীয় স্তরকে বলা হবে অন্তর্বর্তী বা মাধ্যমিক স্তর। আর সর্বশেষ, অর্থাৎ সবচেয়ে ভালো স্তরটিকে বলা হবে পারদর্শী স্তর।

মূল্যায়ন নিয়েও আছে অস্পষ্টতা। কোনো কোনো বিদ্যালয় শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা অমান্য করে আগের মতোই পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে বা নিচ্ছে। এ অবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) আদেশ জারি করে জানাল, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেওয়া যাবে না।

এখন শুধু প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

‘শিগগির’ বলতে কত দিন

গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। একইভাবে ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে তা বাস্তবায়ন হবে। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই বদলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে চালু হওয়া তিন শ্রেণির বইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর পরই পাঠ্যপুস্তকের ভুল ও অসংগতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়। এই বিতর্কের মুখে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি। নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ওই দুটি বইয়ের নাম একই।

এনসিটিবি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়েরও কিছু অধ্যায় সংশোধন করা হবে। তিনটি বইয়ের সংশোধনী ‘শিগগিরই’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানো হবে। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তি জারির এক মাসের বেশি সময় পার হলেও সংশোধনী দিতে পারেনি এনসিটিবি।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বুধবার বলেন, তিনটি বইয়ের সংশোধনীর কাজ চলছে। যাচাই-বাছাইয়ের (ট্রাই আউট) জন্য আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সারা দেশের প্রায় ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এনসিটিবির কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করবেন। এরপর ২০, ২১ ও ২২ মার্চ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এ নিয়ে কর্মশালা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। এরই মধ্যে পাঠ্যবই সংশোধনীর বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে বিশেষজ্ঞ কমিটি করেছিল, সেই কমিটিও প্রতিবেদন দেবে বলে তাঁরা আশা করছেন। সব কটির ভিত্তিতে ২৭ থেকে ৩১ মার্চ পরিমার্জনের কাজ করা হবে। তারপর সংশোধনী পাঠানো হবে। এর অর্থ হচ্ছে, আগামী এপ্রিলের আগে শিক্ষার্থীরা বইয়ের সংশোধনী পাচ্ছে না।

এনসিটিবির সূত্র বলছে, সংশোধনীর পরিমাণ বেশি হলে অংশবিশেষ (ডিউ পার্ট) ছাপিয়ে দেওয়া হবে। আর সংশোধনীর পরিমাণ কম হলে ওয়েবসাইটে সংশোধনী দেওয়া হবে। একই সঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তা বিদ্যালয়গুলোতে পড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিন মাসেও সংশোধনী দিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সমস্যার কথা জানালে এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, সাধারণত যেসব অধ্যায় সংশোধন হচ্ছে, সেগুলো পাঠ্যসূচি অনুযায়ী এখনো পড়ানোর সময় হয়নি। এ ছাড়া পবিত্র রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটিও আছে। ফলে সমস্যা হবে বলে তাঁদের মনে হয় না।

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথাগত পরীক্ষা কমে যাচ্ছে, জিপিএর পরিবর্তে ফলাফল হবে তিন স্তরে। এর মধ্যে প্রথম স্তরকে বলা হবে পারদর্শিতার প্রারম্ভিক স্তর। দ্বিতীয় স্তরকে বলা হবে অন্তর্বর্তী বা মাধ্যমিক স্তর। আর সর্বশেষ, অর্থাৎ সবচেয়ে ভালো স্তরটিকে বলা হবে পারদর্শী স্তর।

দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন বিষয় পড়ানো হবে, বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডের অধীনে দুটি পরীক্ষা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিখনকালীন) বড় অংশের মূল্যায়ন হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। পুরোটাই মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। আর চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ের (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান) কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন এবং বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে (পরীক্ষার মাধ্যমে)। অবশিষ্ট পাঁচটি বিষয়ের পুরোটাই মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে সামষ্টিক মূল্যায়ন বেশি হবে (৭০ শতাংশ সামষ্টিক ও ৩০ শতাংশ শিখনকালীন)।

নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, সামষ্টিক মূল্যায়ন এখনকার মতো শুধু কাগজ-কলমনির্ভর পরীক্ষা হওয়ার কথা নয়। অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, যোগাযোগ, হাতে-কলমের কাজ ইত্যাদি বহুমুখী পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। তবে বিদ্যমান কোচিং-প্রাইভেট বহাল রেখে নতুন এ মূল্যায়ন পদ্ধতি কতটা সঠিকভাবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে অভিভাবকদের অনেকের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে।

ধারাবাহিক মূল্যায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের রেকর্ড সংরক্ষণ করা হবে। এ জন্য অ্যাপ তৈরি করার কথা থাকলেও রাজধানীর একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, এখনো অ্যাপ পাননি। তাই তাঁরা ডায়েরিতে রেকর্ড সংরক্ষণ করছেন।

অ্যাপে এটি করার উদ্দেশ্যে হচ্ছে, প্রতিদিনকার মূল্যায়ন আপলোড করার পর আর সংশোধনীর সুযোগ নেই, কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে নম্বর এদিক-ওদিক করে পক্ষপাতের সুযোগ আছে।

আবার কোনো কোনো বিদ্যালয় এ বিষয়ে এখনো অস্পষ্টতায় আছে। কেউ কেউ তা অমান্য করে প্রচলিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিচ্ছে বা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এমনকি প্রথম শ্রেণিতেও আগের মতো পরীক্ষা নিচ্ছে কোনো কোনো বেসরকারি বিদ্যালয়। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতেও কোনো কোনো বিদ্যালয় একই প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।

তবে মাউশির গত সোমবার জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এনসিটিবির তৈরি শিক্ষক সহায়িকা ও শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা অনুসারে করতে হবে। প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেওয়া যাবে না।

অভিযোগ আছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষা বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ঠিকমতো মনিটরিং করছেন না।

এ অবস্থায় নতুন শিক্ষাক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান। তিনি বলেন, এ জন্য তদারকি ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে। [প্রথম আলো]




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD