আতিকুর রহমান নগরী: রহমত-মাগফিরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবারো এলো মাহে রমজানুল মোবারক। রমজান এসেছে আমাদের পাপগুলোকে ‘জ্বালিয়ে দিতে, ভস্মীভূত করতে, পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে দিতে, নিঃশেষ করে দিতে।
আজ জুমাবার একদিকে সায়্যিদুল আইয়্যাম তথা দিনসমূহের সর্দার এ দিনটি। অন্যদিকে রমজানের প্রথম দিন। হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৪৪৪ হিজরির রমজান মাস শুরু আজ থেকে। রহমতের প্রথম দশকের প্রথম দিন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বছর শেষে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা আর আল্লাহ্ তা’আলার তরফ থেকে বেশুমার নেয়ামত নিয়ে মাহে রমজান আমাদের কাছে উপস্থিত। আহ্লান সাহ্লান মাহে রমজান; স্বাগতম মাহে রমজান; খোশ আমদেদ মাহে রমজান। আজ থেকে ১৪৪৪ হিজরি বছর আগে উম্মতে মুহম্মদীর ওপর রোজা ফরজ হয়েছিল। সেই থেকে অদ্যাবধি মুসলিম উম্মাহ্ মাসের সেরা মাস রমজানুল মোবারকে সিয়াম সাধনার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আরবি বারো মাসের মধ্যে রমজান হচ্ছে নবম মাস।
আসমানী রহমতের বার্তা আর অফুরন্ত মাগফিরাতের আহ্বান নিয়ে এ মোবারক মাহিনা আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। বছরের বাকি এগারো মাসের তুলনায় এ মাসটির ফযিলত ও বরকত অনেক বেশি। মানবজাতি যখন সারাটি বছর খোদার নাফরমানি করে কাটিয়ে দেয়, ঠিক তখনই সেসব ভুলের মাশুল দিতে ক্ষমার স্লোগান নিয়ে মানুষকে নিষ্পাপ আর পাপরাশিকে ভস্ম করার জন্য আগমন করেছে মাহে রমজান। ‘রমজান’ আরবি শব্দ। যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু মূলত: এর অর্থ হচ্ছে ভস্ম করে দেয়া, ঝলসে দেয়া। এ মাসটির নামকরণের কারণ হচ্ছে, সর্বপ্রথম রোজার বিধান যে মাসে এসেছিল সে মাসটি ছিল প্রচ- গরমের। ঝলসে দেয়ার মতো গরম, তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘রমজান’।
তবে আলেমগণ বলেন, ‘বান্দাহ্ এ মাসের বিধানাবলি সূচারুরূপে পালন করে বিধায় আল্লাহ্তা’আলা তার সমস্ত পাপকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেন। তাই এ মাসকে ‘রমজান’ বলা হয়। রহমত, মাগফিরাত ও দোজখ থেকে মুক্তি লাভের মাস রমজান। আসমানী বরকতে ভরপুর এ মাসে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল মুসলিম উম্মাহ্র একমাত্র পথনির্দেশিকা মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। সাওম আরবি শব্দ। এর বহুবচন হচ্ছে সিয়াম। আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। আর শরীয়তের পরিভাষায় এর অর্থ হচ্ছে যে, সুব্হে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে কোনো রকমের পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত থাকা। এ সম্পর্কে হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, আদম সন্তানের নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সত্তরগুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
আল্লাহ্ পাক বলেন, সিয়াম আমার জন্য এবং এর প্রতিদান আমি নিজেই। কেননা সিয়াম পালনকারীরা একমাত্র আমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা পরিত্যাগ করে থাকে। কোরআনুল ক্বারিমে বর্ণিত হয়েছে- ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আ-মানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়ামু কামা কুতিবা আলাল লাজিনা মিন কাবলিকুম লাআল্লাকুম তাত্তাকুন।’ অর্থাৎ হে মমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন করতে পারো।
অতএব, রমজান মাসে আমাদের রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্য হবে তাক্ওয়া অর্জন করা। আল্লাহ্তাআলা আমাদের সবাইকে তাক্ওয়া অর্জন করার মতো রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।