শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ০২:৫৬ অপরাহ্ন




ই–কমার্স খাত

সংকটে অনলাইনে কমেছে বেচাকেনা

আউটলুকবাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ ৪:০৭ pm
digital commerce digital marketing business card marketplace platform online ecommerce e-commerce ডিজিটাল বাণিজ্য নিবন্ধন অনলাইন ব্যবসা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিটি ডিবিআইডি ওয়েবসাইট ফেসবুকে পেজ জেল কারাদণ্ড টাকা জরিমানা ওয়ালেট ক্যাশ ভাউচার বাংলাদেশ ব্যাংক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ডিজিটাল কমার্স কেনাকাটায় ভোক্তা ই-কমার্স এফ-কমার্স ডিজিটাল মার্কেট প্লেসে অনলাইন মার্কেট প্লেসের ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং পেমেন্ট গেটওয়ে ডেবিট কার্ড ক্রেডিট কার্ড ডিজিটাল ফান্ড ট্রান্সফার ব্যাংক
file pic

করোনাকালে সায়রা ইসলাম প্রতিদিনই খাবার কিনতেন অনলাইনে। দীর্ঘদিন অনলাইনে খাবার কিনতে কিনতে অনেকটাই তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় তাঁর। এখন তিনি সপ্তাহে এক বা দুবার অনলাইনে খাবারের ক্রয়াদেশ দেন। এ ছাড়া অনলাইনে অন্যান্য কেনাকাটায়ও লাগাম টেনেছেন সায়রা ইসলাম। নিতান্ত দরকার না হলে অনলাইনে কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন তিনি। সায়রা ইসলাম বলেন, পরিস্থিতির কারণে এখন একটু বুঝে চলতে হচ্ছে।

করোনার কারণে অনলাইন কেনাকাটায় মানুষের আগ্রহ যেভাবে বেড়েছিল, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা সেখানেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। তাতে ই–কমার্স, এফ–কমার্স (ফেসবুকভিত্তিক) বা ডিজিটাল কমার্স খাতে ব্যবসা কমে গেছে। দেশে ডিজিটাল কমার্সের বার্ষিক বাজার এখন ৩২ কোটি টাকার বেশি। ক্রেতা আছেন দেড় কোটির মতো। ডিজিটাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধারণা ছিল, করোনা–পরবর্তী স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পরও প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু করোনা শেষ হতে না হতেই রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপসহ পুরো বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। বাংলাদেশেও তার ধাক্কা লাগে। তাতে গত ছয় মাসে এ খাতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চলতি বছর পরিস্থিতির উন্নতির কোনো আশা দেখছেন না তাঁরা।

ওমেনহুড নামে একটি অনলাইন বুটিক রয়েছে সুরাইয়া ইয়াসমিনের। তিনি বলেন, ‘অনলাইনে কেনাকাটা কমে যাওয়ার চিত্র বছরখানেক ধরেই টের পাচ্ছি। আমার প্রতিষ্ঠানের বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে।’

এফ–কমার্সভিত্তিক আরেক উদ্যোক্তা জানান, তাঁর বিক্রি প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। আবার যেটুকু বিক্রি হয়, তার জন্যও ক্রেতারা নানা ধরনের মূল্যছাড় চান। এমনিতেই বেচাবিক্রি কম। তার মধ্যে সব ধরনের খরচই বেড়েছে। এ অবস্থায় পণ্যের দাম বাড়ালে ক্রেতা আরও কমে যাবে। তাই অনলাইন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ই–কমার্স ও এফ–কমার্সভিত্তিক উদ্যোক্তারা জানান, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরবরাহ খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। যার প্রভাব পণ্যের দাম ও বিক্রির ওপর পড়ছে। কুরিয়ার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ই–কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, গত এক বছরে প্রায় ২০ শতাংশ লজিস্টিক ব্যয় বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, করোনার প্রকোপ শুরুর পর ডিজিটাল ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটে। ২০২০ সালের এপ্রিলে ই–কমার্সে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫৪ কোটি টাকা। মে মাসে তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়। এযাবৎকালের মধ্যে ই–কমার্সে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ২০২১ সালের জুনে। ওই মাসে ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। এরপরই ইভ্যালিসহ বিভিন্ন ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার অভিযোগ আসতে শুরু করে। তাতে এ খাতের লেনদেনেও ভাটা পড়ে। তবে ২০২২ সালের দিকে বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে ই–কমার্সে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকায়।

দারাজ বাংলাদেশ জানিয়েছে, তাদের গড় বাস্কেট সাইজ প্রায় ১২ ডলার। গত দুই মাসে তা প্রায় ১০ ডলারে নেমেছে। প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান আহাদুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব ই-কমার্স খাতে কমবেশি রয়েছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। গত বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বরের পর থেকেই বিশ্ববাজারে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেতে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই–ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার পণ্য সরবরাহ করা হয়। করোনার আগে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫০ শতাংশ। করোনার সময় নিত্যপণ্যের প্রবৃদ্ধি ৩০০ শতাংশ, খাদ্য সরবরাহ সেবায় প্রবৃদ্ধি ছিল ২৬৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে সে সময় ই–কমার্সের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ।

ই–ক্যাব বলছে, করোনার পরে ২০২১-২২ সালে প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা আরও বেশি ছিল। কিন্তু গত বছরের শেষ দিক থেকে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রবৃদ্ধি কমে ৪০ শতাংশে নেমে আসে। ডলার–সংকটের কারণে আমদানিনির্ভর বিভিন্ন পণ্য এখন আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ডলার–সংকট না কাটলে এই প্রবৃদ্ধি আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ই–কমার্স ব্যবসায়ীদের এ সংগঠন।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকের ডিলের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, ছয় মাস ধরেই অনলাইনে কেনাকাটা কমতির দিকে। ইলেকট্রনিকসহ দামি পণ্য কেনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া যাঁরা বাইরে থেকে পণ্য আনেন, ডলার–সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা আগের মতো পণ্য আনতে পারছেন না। লজিস্টিক সেবারও খরচ বেড়েছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, অন্যান্য দেশও এ ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই ধাক্কা সামলাতে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতে কর্মী ছাঁটাই চলছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ক্রয়াদেশের পরিমাণ ও বেচাবিক্রি কমলেও ঈদকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রেও ব্যবসা আগের বছরের ঈদের মতো হবে না বলেই মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।




আরো






© All rights reserved © 2022-2023 outlookbangla

Developer Design Host BD