বাংলাদেশে একসময় মূলত রোজার মাসে খেজুর খাওয়া হতো। তবে এখন কমবেশি সারা বছরই খেজুর খান অনেকে। পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠান আয়োজনেও খেজুরের ব্যবহার দেখা যায়। বিশেষ করে সম্প্রতি উপহার হিসেবেও দামি খেজুরের চাহিদা বেড়েছে।
এ দিকটি মাথায় রেখেই দেশে দামি ও ভালো মানের খেজুরের জন্য একাধিক বিক্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে। দেশীয় কোম্পানির পাশাপাশি এসেছে বৈশ্বিক বহুজাতিক ব্র্যান্ড। অর্থাৎ বিভিন্ন শোরুম বা বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে যেভাবে ব্র্যান্ডের পোশাক বা পণ্য কেনা যায়, তেমনই এখন খেজুরও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন শোরুমে। পরিবেশনার ধরনভেদে এসব খেজুরের কেজিপ্রতি দাম ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্তও হতে পারে।
দেশীয় কোম্পানির মধ্যে নাসা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মদিনা ডেটস অ্যান্ড ফ্রুটস ২০১৯ সাল থেকে খেজুরের ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে নাসা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবে খেজুরের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। ঢাকায় শুরুতে পাইকারি বিক্রি করলেও চলতি বছর থেকে নিজস্ব শোরুম বা বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়েও বিক্রি শুরু করেছে কোম্পানিটি।
নাসা গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে গুলশান, বনানী, মহাখালী, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানী ঢাকায় ১১টি ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, জিইসি মোড় ও বহদ্দারহাটে ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
বিক্রয়কেন্দ্রগুলোয় কেজিপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের খেজুর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের আজওয়া, মাবরুম, মাজদুল, সুক্কারি, আনবারা, সুগাই, বার্নি, সালাবি, রোশাদিয়া, রাবিয়া ও সাফাওয়াই, মিশরের মেডজুল, সংযুক্ত আরব আমিরাতের খালাস, সায়ের, দাব্বাস ও জাহদি এবং তিউনিশিয়ার ডেগলেট নূর খেজুর।
রোজার মৌসুম হওয়ায় এসব বিক্রয়কেন্দ্রগুলোয় বেচাকেনার পরিমাণও বেশ ভালো বলে জানাচ্ছেন মদিনা ডেটস অ্যান্ড ফ্রুটসের কর্মকর্তারা। যেমন মদিনা ডেটসের গুলশান বিক্রয়কেন্দ্রে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে এক লাখ টাকার খেজুর বিক্রি হয় বলে বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মীরা জানিয়েছেন। বিক্রয়কেন্দ্রটি থেকে গ্রাহকেরা ৫০০ গ্রাম থেকে শুরু করে যেকোনো পরিমাণ পর্যন্ত খেজুর কিনতে পারছেন।
মদিনা ডেটস অ্যান্ড ফ্রুটসের গুলশান শাখার বিক্রয় কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, সৌদি আরবে নাসা গ্রুপের নিজস্ব বাগান থেকে অধিকাংশ খেজুর আসে। এ ছাড়া মিশর, ইরাক ও দুবাই থেকে ভালো মানের খেজুর আমদানি করা হয়। মিশরের মেডজুল খেজুর সবচেয়ে দামি। এরপর আছে সৌদি আরবের খেজুরের চাহিদা। তবে অন্যান্য খেজুরের তুলনায় দুবাইয়ের খেজুরের দাম কিছুটা কম হওয়ায় এগুলোরও চাহিদা ভালো।
রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে ব্যাংকের কাজে গুলশানে এসেছিলেন ব্যবসায়ী আবদুস সামাদ। কাজ শেষে ফেরার সময়ে মদিনা ডেটসের বিক্রয়কেন্দ্রে যান তিনি। দেশে এ ধরনের খেজুরের বিক্রয়কেন্দ্র দেখে অনেকটা আশ্বস্ত আবদুস সামাদ বলেন, ‘আমার পরিবারে নিয়মিতই খেজুর খাওয়া হয়, তবে স্থানীয় বাজারে ভালো মানের খেজুর পাওয়া যায় না। দেখেশুনে কেনাও যায় না। সে দিক থেকে এ ধরনের বিক্রয়কেন্দ্র একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ।’
দুবাইভিত্তিক বহুজাতিক খেজুর কোম্পানি বাতেলের বাংলাদেশে শাখা রয়েছে রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউয়ে। বাংলাদেশে বাতেলের ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ।
গত মঙ্গলবার গুলশানে বাতেলের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে সুকারি, খিদরি, সেগাই, মেডজুল, ওয়ানান, খোলাস ও আজওয়া—এই সাত ধরনের খেজুর বিক্রি হচ্ছে।
বাতেলের বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন, একজন গ্রাহক তাঁর প্রয়োজন অনুসারে ন্যূনতম যতটুকু প্রয়োজন, তা কিনতে পারবেন এই বিক্রয়কেন্দ্র থেকে। এমনকি এক পিস করেও খেজুর বিক্রি হয় এই বিক্রয়কেন্দ্রে।
বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মীরা বলেন, সেখানে সাধারণ (প্লেইন) ও ফিলড-এই দুই ধরনের খেজুর বিক্রি হয়। খেজুরের আঁটি বের করে এর মধ্যে বাদাম, অরেঞ্জ পিলসহ বিভিন্ন উপকরণ যোগ করা হয়।
বাতেলের কর্মীরা আরও জানান, মধ্যপ্রাচ্যে বাতেলের নিজস্ব বাগানের খেজুরই তাঁরা বিক্রি করেন। দুবাই থেকে এসব খেজুর প্রক্রিয়াজাত হয়ে বাংলাদেশে আসে। সাধারণ খেজুরের তুলনায় ফিলড খেজুর দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। আবার এতে খেজুর ছাড়াও থাকে বেশ কিছু পুষ্টি উপকরণ। তাই এ ধরনের খেজুর গ্রাহকের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।
তবে বাতেলের বিক্রয়কেন্দ্রের বিশেষ দিক হচ্ছে খেজুরকে উপহার হিসেবে পরিবেশন করা। বিভিন্ন আকর্ষণীয় বাক্সে মোড়কজাত করে বিক্রি করা হয় এসব খেজুর।বিক্রয়কেন্দ্রটি ঘুরে ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাতেলের ফিলড খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ৫ হাজার ৯৯৫ টাকা থেকে ৮ হাজার ৯৯৫ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে উপহারের বাক্সের কারণে এই দাম কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে। যেমন ক্রোমাইট ও মার্বেল ড্রয়ারের দ্বিতল একটি বাক্সের মূল্যই রাখা হয় ৩৬ হাজার ৯৯৫ টাকা।
আর খেজুরসহ এ ধরনের বাক্সের দাম পড়বে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। খেজুর ছাড়াও এই বিক্রয়কেন্দ্রে আমদানি করা একাধিক ধরনের খেজুরের চকলেট, চকলেট বার, মধু, অ্যারাবিয়ান কফি, বালসামিক ভিনেগার ইত্যাদি পণ্যও বিক্রি হচ্ছে।
তবে বিক্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নান্দনিক পরিবেশনায় খেজুর বিক্রি হচ্ছে। এ রকমই একটি হলো ফেসবুক–ভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বোরসেলে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক অমিত রায়হান বলেন, আমরা ১৬ পিস ফিলড খেজুরের বিভিন্ন বাক্স বিক্রি করি। প্রতি বাক্সের ওজন হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম।
অমিত রায়হান জানান, ‘বাজারের তুলনায় এসব খেজুরের দাম একটু বেশি হয়। তাই সাধারণ গ্রাহকের তুলনায় আমাদের করপোরেট গ্রাহকের সংখ্যাই বেশি। রোজার মাসে বিভিন্ন ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত খেজুরের ক্রয়াদেশ পাচ্ছি।’