গরমে পুড়ছে দেশ। ঢাকা জেলাসহ দেশের মোট ৪৯টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তী দুই দিন তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব এলাকায় এখন গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা।
রবিবার (৯ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি বছরের মধ্যে রেকর্ড। এদিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা। সে হিসেবে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে আগামী সাত দিন। এদিকে গত কয়েকদিনের গরমে হাঁসফাস অবস্থা সাধারণ মানুষের। গরম থেকে বাঁচতে চিকিৎসকরা পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গায় যেমন আজ তাপমাত্রা সর্বোচ্চ, তেমনি ঢাকায়ও সাম্প্রতিক সময়ে আজ তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি। গরমে গত কয়েকদিন ধরেই নাভিশ্বাস অবস্থা মানুষের। একদিকে রোজায় শরীর শুষ্ক, অন্যদিকে ঈদের কেনাকাটা ও রাজপথের জ্যাম মিলে বাতাসের উত্তাপ যেন আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে কষ্টকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ফরিদপুরে ৩৮.৫, রাজশাহীতে ৩৮.১, যশোর ও ঈশ্বরদীতে ৩৮.০, ঢাকায় ৩৭.৭, বান্দবান ও মোংলায় ৩৭.৬, ফেনী, চাঁদপুর ও রাঙ্গামাটিতে ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
রবিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, রাজশাহী বিভাগের ৮টি, খুলনা বিভাগের ১০টি, বরিশাল বিভাগের ৬টি ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলাসহ মোট ৪৮টি জেলা এবং মৌলভীবাজার জেলাসহ মোট ৪৯টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া পরবর্তী তিন দিনের আবহাওয়া উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। তবে পরবর্তী দুই দিন তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।
পল্টনের ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করা হকার আজিম মোল্লা জানান, সকাল ১০টা নাগাদ দোকান খুলি। এরপর গরমের কারণে ৩টা-৪টা পর্যন্ত ভীষণ কষ্ট হয়। যারা কাপড় কিনতে আসেন, তারাও গরমে কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু সামনে ঈদ। কেনাকাটা তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। তাই গরম সহ্য করেই কাপড় বিক্রি করে যাচ্ছি।
এদিকে রিকশাচালক রমজান আলী বলেন, রোজা তো রাখতেই পারি না। এরপর গরমে পানির পিপাসায় জান যায় যায় অবস্থা হয় মাঝে মাঝে। দুপুরের দিকে অনেক সময় রিকশা চালানো বন্ধ করে গাছের ছায়ায় বসে থাকি। তবে রিকশার জমার টাকা না উঠলে তো সেই বসে থাকতেও পারি না। এই সময় খুব কষ্ট হয় রিকশা চালাতে।
এদিকে সালমা ইসলাম মুগদার বাসিন্দা জানান, ঘরে বৃদ্ধ মা আর ছোট বাচ্চা আছে। এত গরম যে ফ্যানের বাতাসেও কাজ হয় না। ঘেমে নেয়ে যায় ওরা। আবার ঘামের কারণে ইদানিং কাশিও হচ্ছে।
এদিকে ভ্যাপসা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। একইসঙ্গে গরমে ঘেমে অনেকের বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের সর্দিকাশি বাড়ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ছোট বাচ্চাদের ডায়রিয়ার প্রকোপও বাড়ছে।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। তিনি পরামর্শ হিসেবে বলেন, এই সময় রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। যারা রোজা রাখছেন তাদের ইফতারির পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে, যাতে শরীরে কোনও পানির ঘাটতি না হয়। শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে যাতে কম ঘামে যেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাইরে বের হলে সানগ্লাস, মাস্ক, ক্যাপ, স্ক্যার্ফ ব্যবহার করা উচিত যাতে সুর্যের তাপ সরাসরি শরীরে না লাগে।