আমন ধান চাল সংগ্রহ অভিযানে কম দামের বোরো চাল কেনার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ খাদ্য বিভাগের বিরুদ্ধে। জেলার আমনুরা খাদ্য গুদামে সংরক্ষিত রয়েছে এই চালগুলো। এনিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে আভিযোগ করছেন খাদ্য বিভাগেরই সাকিলা নাসরিন নামে এক কর্মকর্তা।
খাদ্য পরিদর্শক সাকিলা নাসরিন সম্প্রতি আমনুরা এলএসডিতে যোগদান করেন। তবে চাল কেনায় অনিয়ম পাওয়ায় এখনও তিনি দায়িত্ব বুঝে নেননি।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাকিলা নাসরিন চলতি বছরের মার্চ মাসের ৭ তারিখে আমনুরা এলএসডি গুদামে যোগদান করেন। দায়িত্ব হস্তান্তরের পূর্বেই তিনি দেখতে পান ওই খাদ্যগুদামে আমন চালের পরিবর্তে বোরো ধানের চাল সংগ্রহ এবং ওজনেও গড়মিল আছে। এই বিষয়ে তিনি গুদামের সদ্য বিদায়ী খাদ্য পরিদর্শক খন্দকার সাব্বির আহমেদের বিরুদ্ধে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহমুদুল হাছানের কাছে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে লিখিত আবেদন করেন।
অভিযোগের পরপরই সাকিলা নাসরিনের বিরুদ্ধে ৭ লাখ টাকা উৎকোচ দাবির অভিযোগ এনেছেন খাদ্য পরিদর্শক খন্দকার সাব্বির। এই বিষয়েও তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে অভিযোগ করেন।
দুই খাদ্য পরিদর্শকের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই তদন্ত কমিটিতে রাজশাহীর এক উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) মোছা. পারভীনকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- গোমস্তাপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তারেক উজ-জামান ও শিবগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আতাউর রহমান।
রোববার ওই ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি আমনুরা এলএসডিতে উপস্থিত হয়ে তদন্তের কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথম দিনে তারা অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও এই খাদ্যগুদামে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
খাদ্য পরিদর্শক সাকিলা নাসরিন জানান, সম্প্রতি তিনি আমনুরা খাদ্য গুদামে যোগদান করেন। যোগদানের পর তিনটি গুদামে আমন চালের পরির্বতে বোরো চাল দেখতে পান। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারে খাদ্য গুদামটির সদস্য বদলি হওয়া পরির্দশক খন্দকার সাব্বির আহমেদ নীতিমালা অমান্য করে বোরো চাল কিনেছেন। গুদামে কী পরিমাণ বোরো চাল রয়েছে তা তিনি জানাতে পারেন নি। তবে ওই গুদামগুলোতে সর্বমোট ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চাল রয়েছে।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চালের মান যাচাই-বাছাই করে সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছেন উল্লেখ করে অভিযুক্ত খাদ্য পরির্দশক খন্দকার সাব্বির আহমেদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। চাল সংগ্রেহর সময় আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তারাও চালের মান যাচাই বাছাই করেছে। তারাতো এই চাল সংগ্রেহর জন্য বলেছে। এটাকে পুঁজি করে আমার কাছে ওই খাদ্য পরির্দশক সাকিলা ৭ লাখ টাকাও দাবি করেছে। আমার কাছে তিনি আর্থিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন এটা আমি ডিসি ফুডকে জানিয়েছি। তদন্ত কমিটিকে আমি আমার জায়গা খোলাসা করেছি, তারা যে ব্যবস্থা নিবে আমি সেটাই মেনে নিবো।
পরে কমিটির প্রধান মোছা. পারভীন জানান, নিজেদের মধ্যে আভ্যন্তরীন কোন্দলের জের ধরে তারা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের দুজনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে সরেজমিনে আমনুরা খাদ্য গুদামে উপস্থিত হয়ে তদন্তের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।