সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন




ইতিকাফের গুরুত্ব ও উপকারিতা

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩ ৯:০০ pm
ইতিকাফ রমজান রোজা sobe borat Shab e Barat namaz রজনী নিসফে শাবান‎ লাইলাতুল বরাত শা'বান মাস ইবাদত বন্দেগি শবে বরাত প্রার্থনা মুসলিম উম্মা মহিমান্বিত রাত শবে বরাত নফল ইবাদত কোরআন তেলাওয়াত জিকির-আসকার জিকির আসকার মোনাজাত ফজিলত ধর্মপ্রাণ মুসলমান শবে মেরাজ শবেমেরাজ ইসলাম islam eid e miladunnanabi Eid Milad un Nabi Rabi al awwal রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী Rabi al-Awwal eid মুহাম্মদ সা রবিউল আউয়াল ঈদ Baitul Mokarram bicycle salat বাইসাইকেল নামাজ সালাত salat বাইসাইকেল নামাজ সালাত
file pic

১. আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত প্রতি বছর রামাদানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর (ইন্তিকালের) পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন।’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৭৪]

২. রামাদানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ আদায় করলে লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য নসিব হয়। নবিজি এই উদ্দেশ্যেই ইতিকাফ করতেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি (রামাদানের) প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করে এই (কদরের) রাতটি খুঁজলাম, এরপর দ্বিতীয় ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। অতঃপর আমাকে বলা হলো, এ রাতটি শেষ ১০ দিনের (রাতের) মাঝে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৬১]

৩. ইতিকাফের (দশ দিন দশ রাত) পুরো সময়টাই ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

ইবনু আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফকারী সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘সে পাপ থেকে বেঁচে থাকে এবং তার নেকির প্রতিদানের মধ্যে সর্বপ্রকার নেকি সম্পাদনকারীর ন্যায় নেকি অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৭৮১: হাদিসটির সনদে দুর্বলতা থাকলেও অর্থগত দিক থেকে হাদিসটি সঠিক]

৪. ইতিকাফকারী বান্দাকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে হেফাজত করবেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এক দিন ইতিকাফ করবে, আল্লাহ তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন পরিখা পরিমাণ দূরত্ব তৈরি করে দেবেন। প্রত্যেক পরিখার দূরত্ব দুই দিগন্তের চেয়েও বেশি।’’ [ইমাম বাইহাকি, শু‘আবুল ঈমান: ৩৯৬৫; ইমাম হাকিমের মতে, হাদিসটি সহিহ; ইমাম হাইসামির মতে, এর সনদ হাসান]

৫. গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের সুযোগ হয়।
আয়িশা (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, প্রতিদান লাভের আশায় ইতিকাফ করবে, আল্লাহ তার পূর্বের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন।’’ [শায়খ আলবানি, দ্বঈফুল জামি’: ৫৪৪২; হাদিসটির সনদ দুর্বল]

৬. ইতিকাফের মাধ্যমে মাসজিদের সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তির হৃদয় মাসজিদের সাথে আটকে থাকে, সে হাশরের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাবে।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৬০]

৭. আল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার সুযোগ লাভ:

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন ‘‘কোথায় আমার প্রতিবেশীরা?’’ বলে ডাকতে থাকবেন। ফেরেশতারা জিজ্ঞাসা করবেন, ‘ইয়া রব! কারা আপনার প্রতিবেশী?’ আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ‘‘দুনিয়াতে যারা মাসজিদ আবাদ রেখেছিলো।’’ [শায়খ আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ২৭২৮; হাদিসটি সহিহ]

৮. আল্লাহর সান্নিধ্যে জীবনের পরিবর্তন:

ইমাম ইবনুল জাওযি (রাহ.) বলেন, ‘দেখলাম কিছু লোক খুব নামাজ পড়ে, তিলাওয়াত করে ও রোজা রাখে; কিন্তু তাদের হৃদয় যেন ছুটন্ত ঘোড়া। আবার, কিছু লোক নামাজ পড়ে সামান্য, রোজাও রাখে পরিমিত, কিন্তু তাদের অন্তর অত্যন্ত নিবিড়, একান্ত এবং শান্ত ও স্থির। আমি বুঝলাম, আল্লাহকে পেতে হলে বেশি ইবাদত নয়, বরং অধিক নির্জনতার প্রয়োজন।’ [ইমাম ইবনুল জাউযি, সইদুল খাতির, পৃষ্ঠা: ৩৫৫]

৯. মাসজিদের পরিবেশে, একান্ত নিভৃতে ১০ দিনের এই সময়টা বান্দাকে ধৈর্যশীল, সহনশীল ও আল্লাহমুখী করে তোলে।

ইতিকাফকারীর ইবাদত:

১. ইতিকাফকারীর পুরো সময়টিই ইবাদত বলে গণ্য। তবুও সে বিভিন্ন ইবাদতে সময় ব্যয় করবে। মাঝে মধ্যে বিশ্রাম নিতে পারে, ঘুমাতে পারে আবার চুপ থাকতে পারে। তবে, সবসময় এগুলো করবে না। এটা ইতিকাফের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। বরং যথাসাধ্য ইবাদতে লেগে থাকবে।

২. অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার করবে।

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন ৭০ বারের বেশি ইস্তিগফার পড়তেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩০৭]

৩. অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করবে। হাদিসে এসেছে, “তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো, কারণ, কুরআন কিয়ামতের দিন তার সাথীর (তিলাওয়াতকারীর) জন্য সুপারিশ করবে।” [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭৫৯]

ধর্মীয় বই পড়া যাবে। যেমন: কুরআনের অনুবাদ, তাফসির, হাদিস ইত্যাদি।

৪. বেশি বেশি যিকর করবে। একদিন নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের সামনে বললেন, ‘‘মুফাররাদ বা একাকী মানুষেরা এগিয়ে গেলো।’’ সাহাবিগণ প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মুফাররাদ বা একাকী মানুষ কারা?’ তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহর বেশি বেশি যিকরকারী নারী-পুরুষেরা।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৭০১]

৫. দরুদ পাঠ করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশ বার রহমত বর্ষণ করবেন।” [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৪৮৫; হাদিসটি সহিহ]

৬. সাধ্যানুসারে নফল নামাজ পড়বে। একজন সাহাবি জান্নাতে নবিজির সান্নিধ্য লাভের জন্য তীব্র বাসনা ব্যক্ত করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, ‘‘তাহলে বেশি বেশি সিজদার মাধ্যমে (অর্থাৎ নামাজের মাধ্যমে) তুমি নিজের জন্যই আমাকে সাহায্য করো।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৯৮১]

ইতিকাফকারী গুরুত্বের সাথে তাহাজ্জুদ, চাশত (দোহা), যাওয়াল, তাহিয়্যাতুল অজু, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ ইত্যাদি নামাজ আদায় করবে। ইতিকাফের দিনগুলোতে এগুলোতে অভ্যস্ত হওয়া ব্যক্তির জন্য খুবই সহজ।

৭. দু‘আ করবে। হাদিসে এসেছে, ‘‘যে আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত হন।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৭৩; হাদিসটি হাসান]

অবশ্যই আন্তরিকভাবে তাওবাহ করবে। ইতিকাফের বরকতময় সময়ে নিজের গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নিতে পারলে, জীবনে আর কী চাই! আল্লাহ কবুল করুন। [IFM desk]

শবে কদরের রাত শুরু

পবিত্র রমজানের দ্বিতীয় দশক শেষে ২১ রমজান থেকে শুরু হয় শবে কদরের রাত। এই সময়ের অন্যতম আমল হলো- ইতিকাফ। এ ইবাদত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য স্বেচ্ছায় পালনীয়। পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্বাদা কিফায়া।

প্রতি বছর রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন মসজিদে ঢল নামে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের। আপন রবের সন্তুষ্টি অর্জনে এই সময় বিশেষ ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকেন মুসলিমরা।

ইতিকাফ হচ্ছে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও ক্ষমা লাভের এক অনন্য সুযোগ। রমজানের ইতিকাফ শুরু করতে হয় ২০ তারিখের সূর্যাস্তের আগ থেকে। আর তা শেষ হয় রমজান শেষ হলে। অর্থাৎ ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা গেলে বা ৩০ তারিখ পূর্ণ হলে। সুতরাং যারা রমজানের শেষ দশকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, অনুকম্পা, ক্ষমা ও করুণার আশায় মসজিদে ইতিকাফ পালন করবেন, তারা আজ সন্ধ্যার মধ্যে মসজিদে যেয়ে অবস্থান নেবেন।

সহিহ বোখারি শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ যদি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতে চায়, তাহলে সে যেন ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করে।’

ইতিকাফ এক অনন্য ইবাদত। রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণের সর্বোত্তম মাধ্যম ইতিকাফ। ইতিকাফের লক্ষ্য আছে, বিধান আছে এবং আছে গুরুত্বপূর্ণ দর্শনচেতনাও।

ইতিকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা হাফেজ ইবনে রজব বলেছেন, ‘ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো- সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক কায়েম করা। আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় যতো গভীর হবে, সম্পর্ক ও ভালোবাসা ততো নিবিড় হবে এবং তা বান্দাকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে।’

ইতিকাফের এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে বান্দা সচেতন থাকলে এবং অন্তরের গভীরে ইতিকাফের চেতনাকে লালনে সমর্থ হলে সীমিত সময়ের এই সাধনা বান্দার বাকি জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD