বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন




লঞ্চ ব্যবসায় শনির দশা, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক নৌ-রুট

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩ ১০:৩৬ am
লঞ্চ Bangladesh Inland Water Transport Corporation BIWTC বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন বিআইডব্লিউটিসি BIWTC BIWTC Ferry transport ship watercraft amphibious vehicle passengers cargo water bus water taxi Ferry Ghat ফেরি ফেরী ঘাট সার্ভিস গাড়ি বিআইডব্লিউটিসি খেয়া নৌরুট লঞ্চ চলাচল ফেরি Launch Day Trip launch Ship Launch লঞ্চ মোটরনৌযান যানবাহন বাহন ভাসমান নৌযান Launch Day Trip
file pic

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের বছর পার না হতেই মারাত্মক প্রভাব পড়েছে বরিশাল বিভাগের ১২টি নৌ-রুটে। লঞ্চ চলাচলের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় রুট ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রী সংকটের মধ্যে রয়েছে বরগুনা-পটুয়াখালীর মত জনগুরুত্বপূর্ণ রুটগুলো। এমনকি বরিশাল নদী বন্দরেও যাত্রীর খড়া নেমেছে।

লঞ্চ মালিকরা রোটেশন ব্যবস্থা চালু করে নিজেদের টিকিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালেও যাত্রী ফেরাতে পারছেন না। সামনের ঈদেও কত সংখ্যক যাত্রী পাবেন তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। নৌপথ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও নৌযান মালিকদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-বরিশাল নৌরুট এবং অভ্যন্তরীণ ১১টি রুটের মধ্যে ভান্ডারিয়া, টরকি, ঝালকাঠি এবং বরগুনা রুট যাত্রীর অভাবে সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালীর ৬টি রুটের মধ্যে ৫টি বন্ধ হয়ে গেছে। পটুয়াখালী থেকে দিনে একটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলেও যাত্রীর সংকটে ঈদুল আজহার পরে সেটিও বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বরগুনা থেকেও মাত্র একটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে। সেখানেও যাত্রী সংকটে প্রতিদিনের খরচ উঠছে না।

বরিশাল থেকে ঢাকা রুটে চলাচলকারী তিনটি লঞ্চের মালিকের সঙ্গে কথা বললে তারা স্বীকার করেছেন পদ্মা সেতু চালুর পর তারা যাত্রী সংকটে পড়েছেন।

বিলাসবহুল একটি লঞ্চের মালিক জানান, এতটা যাত্রী সংকটের মুখে পড়তে হবে তা আমাদের কল্পনাও ছিল না। রোটেশন ব্যবস্থা চালু করে প্রতি ৪দিন পরে একটি লঞ্চ একটি ট্রিপ পায়। এতে তেল খরচ, স্টাফ বেতন নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

আরেক লঞ্চ মালিক বলেন, সড়ক পথে মানুষ সহজে আসতে পারছে দেখে লঞ্চে যাত্রী নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। কতটা যাত্রী পাব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। যে অবস্থার তৈরি হচ্ছে তাতে বরিশাল বিভাগের লঞ্চ রুট অল্প দিনেই চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।

আরেক লঞ্চ মালিক বলেন, লঞ্চ ডকে তুলে কেটে বিক্রি করা ছাড়া বিকল্প পথ দেখা যাচ্ছে না। আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। এই অবস্থায় লঞ্চ শিল্পের পাশে সরকার না দাঁড়ালে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে।

সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে যাত্রী কমবে এটি আমরা ধরে নিয়েছিলাম। তবে লোকসানে পড়তে হয়নি। কিন্তু দুই দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আমাদের দিশেহারা করে দিয়েছে। একদিকে যাত্রী সংকট অন্যদিকে তেলের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় ঝালকাঠি রুটে সুন্দরবন ১২ লঞ্চটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই রুটটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু ঝালকাঠি রুট না এমন বেকায়দায় দক্ষিণাঞ্চলের সব রুট। লঞ্চ মালিকরা অনেকেই ব্যবস্থা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, নদী বন্দরগুলো এখন যাত্রী সংকটে আছে। আগে যাত্রীদের চাপে পন্টুনে পা দেওয়া যেত না। এখন পন্টুন ফাঁকা পড়ে থাকে।

পটুয়াখালী নদী বন্দর কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, পটুয়াখালী থেকে ঢাকা রুটে একটি লঞ্চ চলে তাও অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে। জেলার অন্য ৫টি রুট বন্ধ হয়ে গেছে। এই রুটটিও হয়তো ঈদুল আজহার পরে বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, মানুষ এখন আর লঞ্চে যাতায়াত করতে চাইছে না। তারা সড়ক পথে রাজধানীতে চলে যান অল্প সময়ে। এ কারণে নৌ-রুট নতুন সংকটে পড়েছে।

বরগুনা নদী বন্দর কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, ২৪ মার্চ থেকে বরগুনার আমতলী নৌ-রুট বন্ধ হয়ে গেছে। আর ঢাকা-বরগুনা রুটটিতে একটিমাত্র লঞ্চ চলাচল করে। লঞ্চ মালিকরা চেয়েছিল সেটিও বন্ধ করতে। কিন্তু আমরা তাদের বুঝিয়ে চালু রেখেছি। আসলে লঞ্চ মালিকদেরও করার কিছু নেই। বুধবার বরগুনা থেকে সর্বোচ্চ হলে ৩৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ছেড়ে গেছে লঞ্চটি। ৩৫ জন যাত্রীতে কী রুট চালু রাখা সম্ভব?

এই কর্মকর্তা বলেন, সামনে ঈদ আসছে। তখন কিছু যাত্রী পেলে হয়তো খরচ তুলতে পারবে। সেই আশায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে আমরাই আশ্বস্ত করছি। নয়তো রুট বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ পুরোপুরি লঞ্চ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পদ্মা সেতু পার হয়ে কয়েক ঘন্টায় মানুষ ঢাকা বরিশালসহ অন্যান্য জেলায় যাতায়াত করতে পারছে। বরিশাল থেকে ঢাকায় ৩/৪ ঘন্টায় পৌঁছানো যায়। মানুষ এ কারণে লঞ্চে সময় অপচয় করে যেতে চাইছে না। যাত্রী সংকটের কারনে বরিশালের ১২টি রুটের অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছ। বরিশালেও যে হারে যাত্রী কমছে তাতে রুট কতদিন চালু থাকে তা নিয়ে শঙ্কিত আমরা। যাত্রী সংকট হলেও অতিরিক্ত ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ নেই।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD