ঢাকায় ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার দিন আজ। এর আগে ১৯৬৫ সালে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছিল। ওই বছর ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া সহকারী মো. ফরমান আলী বলেন, আজ রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় গরমের আঁচ আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, ১৯৬৫ সালের পর এটিই ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ১৯৬৫ সালে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
শুক্রবার রাজধানীতে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সবশেষ ৯ বছর আগে ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল রেকর্ড করা হয়েছিল। ফরমান আলী জানান, আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি।
অন্যদিকে আজসহ টানা ১৪ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়। আজ সেখানে তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ২০১৪ সালে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওই ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল; অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে উঠেছে।
দেশের অন্যান্য এলাকাতেও গরম কমার কোনো লক্ষণ নেই; বরং বেশির ভাগ এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বেশির ভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সেখানে বাতাসের সঙ্গে লু হাওয়া ছিল।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে যে বাতাস প্রবেশ করছে, তাতে কিছুটা জলীয় বাষ্প বয়ে আসছে। এতে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঘামও বেড়ে যাবে। আজ দিনের বাকি সময় গরম আরও বাড়তে পারে।
এদিকে আবহাওয়া পূর্বাভাসবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আক্কু ওয়েদারের হিসাবে, আজ বেলা তিনটায় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গরমের তীব্রতা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো অনুভূত হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্দ্রতার পরিমাণও ছিল কম, মাত্র ১৮ শতাংশ। ফলে তীব্র গরম ও শুষ্ক বাতাস মিলেমিশে মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোস্তফা কামাল দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ দিয়ে থাকেন। তার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আজ ও আগামীকালের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, মদারীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, শরীয়তপুর, মাদারীপুরের তাপমাত্রা ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। অন্যদিকে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, মাগুরা, যশোর ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অন্য জেলাগুলোর তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অবশিষ্ট জেলাগুলোতে ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিন ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা আরও কিছুটা বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা বাড়বে। ফলে গরমের কষ্ট বাড়তে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার ও পর্যাপ্ত পানীয় পানের পরামর্শ দিয়েছে।