সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন




বাংলাদেশে হচ্ছে ন্যানোটেকনোলজি ইনস্টিটিউট

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ১১:৫৪ pm
ecnec প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির একনেক Executive Committee of the National Economic Council এনইসি সম্মেলন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী পিআইডি Prime Minister Sheikh Hasina Wazed প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
file pic

সরকার দেশে ইনস্টিটিউট অব ন্যানোটেকনোলজি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এই ইনস্টিটিউট স্থাপন করবে। ঢাকা জেলার সাভার গণকবাড়িতে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে স্থাপিত হবে এই ইনস্টিটিউট।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, ন্যানোপ্রযুক্তি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টি এবং নবীন বিজ্ঞানী বা গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করার লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ ন্যানোটেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে ন্যানোটেকনোলজি বিষয়ক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার মাধ্যমে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা মোতাবেক উন্নত অর্থনৈতিক কার্য সম্পাদনের জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের উপর আরও বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ক্লিন এনার্জির প্রসার, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, সংস্থাসমূহ ও একাডেমিক ইনস্টিটিউটগুলোর মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা এবং মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টিতে ইনস্টিটিউট অব ন্যানোটেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

আগামী ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশে ন্যানোটেকনোলজি ইনস্টিটিউট পুরোপুরি স্থাপিত হবে বলে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩৮০ কোটি ৭৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ন্যানোটেকনোলজি নির্মিতব্য ইনস্টিটিউট স্থাপনের লক্ষ্যে “ইনস্টিটিউট অব ন্যানোটেকনোলজি স্থাপন” শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

এর মাধ্যমে ন্যানোপ্রযুক্তি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টি ও বৃদ্ধি; আধুনিক গবেষণাগার সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ ন্যানোটেকনোলজি ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং দক্ষ জনবল তৈরি; কার্যকর ন্যানোম্যাটেরিয়ালস প্রস্তুতকরণ ও তাদের বিভিন্ন গুণগত এবং প্রায়োগিক বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ বা কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য গবেষণা সুবিধাদি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন; চিকিৎসা ক্ষেত্রে ন্যানোম্যাটেরিয়ালসের বাস্তবমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা সম্ভব।

কৃষি ক্ষেত্রে ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ ফসলের উৎপাদন ও গুণগতমান বৃদ্ধি এবং সুরক্ষার জন্য ন্যানোফার্টিলাইজার, ন্যানোসেন্সর, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ন্যানোম্যাটেরিয়ালস উৎপাদন, বিতরণ ও গবেষণা সেবা সম্প্রসারণ করা। বস্ত্রশিল্পে ন্যানোপ্রযুক্তিভিত্তিক কতিপয় উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। একারণেই সরকার এ ধরনের একটি ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

পরিকল্পনা কমিশন আরও জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ইনস্টিটিউটের জন্য ৮৯টি বৈদেশিক যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা হবে। ১০ তলা ভিতে ৬ তলা ১টি ভবন নির্মিত হবে যার আয়তন হবে ১ লাখ ৬২ হাজার বর্গফুট। এই ইনস্টিটিউট ভবনের বৈদ্যুতিক ও অন্যান্য নির্মাণ কাজ করা হবে। ইনস্টিটিউটে ব্যবহারের জন্য ১৯৭টি স্থানীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা হবে। প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক এবং স্থানীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সায়েন্টিফিক বা গবেষণাগার ভিজিট করা হবে।

কমিশন জানিয়েছে, “ইনস্টিটিউট অব ন্যানোটেকনোলজি স্থাপন” শীর্ষক প্রকল্পটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)’তে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে।

সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে প্রকল্পটির সংগতিপূর্ণতা রয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। সরকারের অষ্টম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা মোতাবেক উন্নত অর্থনৈতিক কার্য সম্পাদনের জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের উপর আরও বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার; কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি; ক্লিন এনার্জির প্রসার; বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, সংস্থাসমূহ ও একাডেমিক ইনস্টিটিউটসমূহের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা এবং মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি হবে। সে বিবেচনায় প্রকল্পটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

একনেকের অনুমোদন প্রার্থনা করে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ন্যানোপ্রযুক্তি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করা এবং নবীন বিজ্ঞানী বা গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করার লক্ষ্যে আধুনিক গবেষণাগার সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ ন্যানোটেকনোলজি ইন্সিটিউট স্থাপনের মাধ্যমে ন্যানোটেকনোলজি বিষয়ক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি ও এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার মাধ্যমে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

এছাড়াও, কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং বস্ত্রশিল্পে ন্যানোপ্রযুক্তিভিত্তিক কতিপয় উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ন্যানোপ্রযুক্তি বিষয়ক উল্লেখিত ক্ষেত্রসমূহ প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখবে যা সরকারের গৃহীত এসডিজি-২০৩০, রূপকল্প-২০৪১ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে।

এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত “ইনস্টিটিউট অব ন্যানোটেকনোলজি স্থাপন” শীর্ষক বিনিয়োগ প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট তিনশত আশি কোটি আটাত্তর লক্ষ চব্বিশ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০২২ হতে ডিসেম্বর ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেক-এর অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, এটি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরকারের গৃহীত এসডিজি-২০৩০, রূপকল্প-২০৪১ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে। দেশে ন্যানোপ্রযুক্তি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে।

উল্লেখ্য, “পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিকে ন্যানো প্রযুক্তি বা টেকনোলজি বলে। ন্যানো হলো একটি পরিমাপের একক। এটি কতটা ছোট তা কল্পনা করা কঠিন। ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় ১ ন্যানো মিটার। এক ইঞ্চিতে ২৫,৪০০,০০০ ন্যানোমিটার রয়েছে। ন্যানোমিটার (১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার) স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে।

জানা গেছে, কম্পিউটারের সঙ্গেও ন্যানোটেকনোলজি সম্পর্কিত। কম্পিউটারের ভিতর যে প্রসেসর আছে, তা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানোমিটার স্কেলের সার্কিট। আর তাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোটেকনোলজি। ইন্টেল প্রসেসরে সিলিকনের উপর প্যাটার্ন করে সার্কিট বানান হয়—যার বর্তমান সাইজ হল ১০০ ন্যানোমিটার। ভবিষ্যতে এর আকার হবে ৫০ ন্যানোমিটার। কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে ন্যানোটেকনোলজি প্রয়োগের কারণে। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে অতি ক্ষুদ্র রোবট তৈরির গবেষণা চলছে, যার সাহায্যে মানবদেহের অভ্যন্তরের অস্ত্রোপচার সম্ভব হবে। ন্যানো রোবট তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি, ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি, ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি আকারে ছোট, ওজনে হালকা এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হচ্ছে। কম খরচে জ্বালানি তৈরি এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যাটারির জন্য ফুয়েল সেল তৈরিতেও ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন খাদ্যজাত পণ্যের প্যাকেজিং ও প্রলেপ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে।

স্মার্ট ড্রাগ তৈরিতে ওষুধ শিল্পেও ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি, বাতাসে গলফ বলের দিক ঠিক রাখার জন্য, র‌্যাকেটের শক্তি ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। বস্ত্র শিল্পে কাপড়ের ওজন ও ঘনত্ব ঠিক রাখার জন্য ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে বিভিন্ন কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি সম্ভব। সানস্ক্রিনে ব্যবহৃত টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়। শিল্পকারখানা হতে নির্গত ক্ষতিকারক ধোঁয়াকে ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অক্ষতিকারক গ্যাসে রূপান্তর করে বাতাস পরিশোধন করা যায়। মহাকাশ অভিযানে ব্যবহৃত বিভিন্ন নভোযানকে হালকা করে তৈরি করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD