রং বদলানো আওয়ামী লীগের বৈশিষ্ট্য মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে এবার সরকারের কোনো ‘রণকৌশলই’ কাজে লাগবে না। আজ বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক কুজ্ঝটিকা এতটা ঘন হয়েছে যে, সরকার তার অপকর্ম আড়াল করতে পারবে না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন জয়যুক্ত করতে দেশনায়ক তারেক রহমানের প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে গণতন্ত্রকামী মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার কোনো রণকৌশলই কাজে লাগবে না। কারণ তিনিই হচ্ছেন বর্তমান দুঃসময়ের স্রষ্টা।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, আসাদুল করীম শাহিন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল খালেক, আমিনুল ইসলাম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ওলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, কৃষক দলের ওমর ফারুক শাফিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের এ দেশের পরিচিত একজন রাজনীতিবিদ। এখন দেখি সহসাই তিনি গিরগিটির মতো রং পরিবর্তন করেন। পরশু দিন যা বলেন, আজকে সেটা পরিবর্তন করে ফেলেন। এই যে রূপ বদলানো, রং বদলানো এটা আওয়ামী লীগের এখন বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে এ জন্য যে তারা সত্যের ওপর, ন্যায়ের ওপর দেশ পরিচালনা করছেন না। জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনা করছেন না। মিথ্যার বিভ্রান্তি হচ্ছে তাদের একমাত্র রাজনৈতিক কৌশল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের ওপর বিদেশিদের কোনো চাপ নেই বলে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, বিদেশিরা আগামী নির্বাচন নিয়ে কারা কী বলছেন, এর আগে ঢাকায় যে সমস্ত কূটনীতিক ছিলেন বা এখান থেকে যারা বদলি হয়ে গেছেন, তারা কী বলেছেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, অধিকার সংগঠন এবং রাষ্ট্রীয় যেসব সংস্থা আছে তারা কী বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট কী বলেছে, এখানকার বিদায়ী জাপানি রাষ্ট্রদূত কী বলেছেন, গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে তারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কী মন্তব্য করেছে, কী বিবৃতি দিয়েছে সেটা দেশবাসী জানে।
রিজভী আরও বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবরা হয়তো এটা জানেন না বলেই বলছেন- কোনো চাপ নেই। অথবা জানলেও সেটা তারা উল্লেখ করছেন না। কারণ এটা বললে পরে তাদের অবৈধ অপকর্ম, দিনের ভোট রাতে করা, ব্যালটবাক্স পূর্ণ করা, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে না দেওয়ার মত অনাচারগুলো সত্য প্রতিপন্ন হবে। সুতরাং মিথ্যা দিয়ে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ওপর যে কথাগুলো বলা হচ্ছে এটাকে তারা আড়াল করার জন্যই এসব চাপাবাজি দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।
রিজভী বলেন, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন কী হতে পারে, সেই দৃষ্টান্ত দেশবাসীর কাছে আছে, বিশ্বের কাছেও আছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠেছে ব্যালট পেপার স্টাফিং। চট্টগ্রামের একটি উপনির্বাচনে কীভাবে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করে নিয়ে আসা হচ্ছে, সেটার তথ্যচিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিতেও দেখিয়েছে। তাদের অধীনে নির্বাচন, এই নির্বাচন প্রকাশ্যে যেটা আমরা দেখলাম ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালে। তারা নিজেরাই প্রমাণ করেছেন যে, তাদের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। কারণ তারা দিনের আলোতে ভোট করতে চান না, আর ভোট করলেও ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেন না—এর সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে অসংখ্য। সুতরাং বিএনপি এদের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।
ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যদি বুকে সাহস থাকে তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিন। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আপনাদেরই দাবি ছিল। সেই দাবি জনগণের স্বার্থে বিএনপি মেনে নিয়েছিল। তাহলে এখন কেন নয়?
তিনি বলেন, আজকে জোর করে ১৪/১৫ বছর ক্ষমতায় আছেন এবং লুটপাটের যে মহাস্বর্গ তারা তৈরি করেছেন বাংলাদেশে জনগণকে ক্ষুধা-অনাহারে রেখে। সেই স্বর্গ থেকে বিদায় নিতে চাচ্ছেন না ওবায়দুল কাদের সাহেবরা; এ কারণে তারা মিথ্যার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে, তাদের কারাগারে রেখে নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, আমরা এর আগে কারাগারে কারা কর্তৃপক্ষের বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর অমানসিক নিপীড়ন-নির্যাতনের কথা বলেছি। যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবকে ২৪ ঘণ্টা লকআপে রাখা হয়েছে। কেন তার ওপর এই বর্বরোচিত আচরণ, তা জেল কর্তৃপক্ষকে জবাব দিতে হবে। কারাগারে তো এমনি বন্দি জীবনযাপন করতে হয়। তার ওপরে কারাগারের ভেতরে একটি ছোট্ট কক্ষে ২৪ ঘণ্টা লকআপ। এটা কেন? সাইফুল আলম নিরব একজন রাজনীতিবিদ। তিনি প্রচণ্ড রকমের অসুস্থ, তার উচ্চ মাত্রায় ডায়াবেটিস বয়েছে। তার স্ত্রী আমাকে গতকাল ক্রন্দনরত অবস্থায় এ বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন নিরব। একইভাবে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নাকে কারাগারে আটকিয়ে রাখতে একের পর এক গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। একটা মামলা দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়, যখনই ওই মামলার জামিন হয়, তখন একটার পর একটা মামলা দেওয়া হয়। যার সঙ্গে মুন্নার লেশমাত্র সম্পর্ক নেই। কারাজীবন প্রলম্বিত করার জন্য মুন্নার ওপর সরকার বহুমাত্রিক নিপীড়ন নামিয়ে এনেছে।
কারাবন্দি হারুনুর রশীদ, এসএম জাহাঙ্গীর, ইউসুফ বিন জলিল, গোলাম মাওলা শাহীন, রফিক হাওলাদার, আজিজুর রহমান মুসাব্বিারসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিও জানান তিনি।