রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন




গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি উঠে গেলে কী হবে?

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩ ১০:৪৬ am
লোডশেডিং বিদ্যুৎ loadshedding energy crisis electricity power grid বিদ্যুত বিভ্রাট লোডশেডিং মেগাওয়াট বিদ্যুত power power LNG এলএনজি liquid Liquefied natural gaslng terminal bangladesh Ship Laffan জ্বালানি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি স্পট মার্কেট খোলাবাজার আমদানি টার্মিনাল পায়রা Gas Field গ্যাস কূপ তেল গ্যাস অনুসন্ধান gas gas power গ্যাস বিদ্যুৎ
file pic

নিত্যপণ্যের উচ্চদামে দিশাহারা মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। এমন অবস্থায় নিয়মিত বিরতিতে বাড়ছে গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম। বলা হচ্ছে ভর্তুকি কমাতে এই দাম বাড়ানো হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বাংলাদেশকে যে ঋণ দিচ্ছে তাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার শর্ত রয়েছে। ভর্তুকি ও কোম্পানিগুলোর লোকসান কমাতে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর পর এখন বিদ্যুতের খুচরা পর্যায়ে দামের সমন্বয়ের প্রক্রিয়া চলছে। তিন ধাপে ইতিমধ্যে ১৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজেটের আগে বা পরে আরেক দফা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এমন অবস্থায় নতুন করে গ্যাসের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। তিতাস দুই চুলায় ৫শ টাকারও বেশি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। নতুন করে গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভর্তুকি তুলে দেয়া হলে গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম আরও অনেক বেড়ে যাবে। এতে জনজীবনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খাতে ব্যাপক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা রয়েছে। এসব রেখে ভর্তুকি তুলে দেয়ার চিন্তা ভ্রান্ত। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দূর করা গেলে ভর্তুকির চাপ এমনিতে কমে যাবে। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত না করে বাজারমূল্যে এই দুই সেবা দেয়া যৌক্তিক হবে না।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ক্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি তুলে দিলে দাম বাড়বে। এতে মানুষের ব্যয় বেড়ে যাবে। অনেক বিলাসীপণ্য ক্রয় কমে যাবে। অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ও কমবে। এতে কর্মসংস্থানও কমে যাবে। মোট কথা একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে।

রাজধানীতে আয়োজিত এক কর্মশালা শেষে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, সরকার এ দুই সেক্টরে দীর্ঘ সময় ধরে যে ভর্তুকি দিয়ে আসছে, সেখান থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তিতাস গ্যাসের দাম বাড়াতে চায় এমন সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। এখন সরকারের মূল লক্ষ্য সাশ্রয়ী বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা। তার অংশ হিসেবে আগামী দুই বছরের মধ্যে ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এর আগে জাতীয় সংসদে দেয়া এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পেতে হলে সরকার যে দামে গ্যাস আমদানি করে শিল্প মালিকদের সে দাম পরিশোধ করতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি। গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হলো পৃথিবীর কোন দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়েছি। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে ৪০, ৫০ বা ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হলে সেটা সরকার কীভাবে দেবে এই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য এক বৈঠকে তিনি ভর্তুকি কমিয়ে আনার কৌশল বের করারও নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

ওদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। জ্বালানি খাতে ভর্তুকি যৌক্তিক করার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোকে স্বাগত জানিয়ে পর্যায়ক্রমে আরও দাম বাড়ানোর তাগাদাও দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি। আর্থিক খাতসহ সরকারি নীতি নির্ধারণীতে অনেকগুলো সংস্কারের কথা জানিয়ে সংস্থাটি বলছে, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য সামনের দিনে সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক হবে, যা সামাজিক ও উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য আরও অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করবে।

বাংলাদেশ সরকারের ঋণ আবেদনের পর আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে তৈরি ‘কান্ট্রি রিপোর্টে’ সংস্থাটি এসব কথা বলে জানায়। পর্যায়ক্রমে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অন্যান্য সুযোগ খতিয়ে দেখবে। আইএমএফের ঋণ পেতে বাংলাদেশ এসব সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সম্মতিও দিয়েছে বলে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আইএমএফ ভর্তুকি তুলে দেয়ার এমন ইতিবাচক বিষয় সামনে আনলেও দেশের অর্থনীতিবিদরা এর উল্টো দিক দেখছেন। তারা বলছেন, আইএমএফ’র শর্ত মেনে জ্বালানির দাম বাড়ানো হলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক বার্তা হয়ে আসবে। চলমান পরিস্থিতিতে ভর্তুকি উঠিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই বলেও তারা মনে করছেন।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আসন্ন বাজেটকে অনাথ এবং আইএমএফকে এর পালক পিতা বলে অভিহিত করেন। আইএফএফ’র শর্ত মেনে এগোলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

এদিকে সরকার ভর্তুকি কমানোর কথা বললেও আসন্ন বাজেটে এ খাতে ব্যয় বরাদ্দ বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে বাড়ছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তুকিতে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২২ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা বেশি। এরমধ্যে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ থাকছে সম্ভাব্য ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে এই প্রাক্কলনের হেরফের হতে পারে। তবে ভর্তুকির ব্যয়ের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকার ঘরেই থাকছে। বিদায়ী বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৮২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD