সিলেটের ভোলাগঞ্জকে দেশের ২৪তম স্থলবন্দর ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয় ২০১৯ সালে। তবে ঘোষণার সাড়ে ৪ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত এটি চলছে ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশন হিসেবেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রুত এ শুল্ক স্টেশনে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু করলে ভারতে যোগাযোগের ক্ষেত্রে খরচ ও সময় দুটিই বাঁচবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুল্ক স্টেশন অফিসের পাশেই ভারত অংশের সড়ক পানি-কাদায় একাকার হয়ে রয়েছে। তবে বাংলাদেশ অংশের সড়কটি চমৎকার। বাণিজ্যিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার ব্যবসায়ীরা প্রায়ই বিড়ম্বনায় পড়েন। তাই সম্ভাবনা থাকলেও ইমিগ্রেশন সুবিধা না থাকায় ধুঁকছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি।
এ শুল্ক স্টেশন দিয়ে শুধু পাথর ও চুনাপাথর আমদানি হলেও কোনো পণ্য রপ্তানি হয় না। সাড়ে চার বছরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টও চালু হয়নি। তবে বাংলাদেশ অংশের সড়ক চমৎকার হলেও ভারত অংশের সড়ক পানি-কাদায় একাকার হয়ে রয়েছে।
জানা গেছে, এ শুল্ক স্টেশন দিয়ে শুধু পাথর ও চুনাপাথর আমদানি হয়। তবে কোনো পণ্য রপ্তানি হয় না। সাড়ে চার বছরে এখানে স্থলবন্দর দূরের কথা, ইমিগ্রেশন চেকপোস্টও চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে এ শুল্ক স্টেশন লাগোয়া দেশের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর টানতে পারছে না ভারতীয় পর্যটকদের।
স্থলবন্দর না হলেও এ শুল্ক স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানিতে যুক্ত আছেন প্রায় সাড়ে তিনশ ব্যবসায়ী। ২০২১ সালে করোনার কারণে কয়েক মাস আমদানি বন্ধ থাকলেও এখানে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৯ লাখ টাকার বদলে হয়েছে ৫৪ লাখ টাকা। ২০২২ সালেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশন পার হলেই ভারতের মেঘালয়। এখান থেকে চেরাপুঞ্জির দূরত্ব মাত্র পঞ্চাশ কিলোমিটার। কিন্তু ইমিগ্রশন সুবিধা না থাকায় তাদের প্রায় ১৬০ কিলোমিটার পথ ঘুরে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে যেতে হয়।
ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মিন্টু বলেন, ভোলাগঞ্জ শুষ্ক স্টেশনে ইমিগ্রেশন সুবিধা না থাকায় সরাসরি ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে প্রথমে তামাবিলে যেতে হয়। পরে সেখান থেকে পাহাড়ি দুর্গম পথে যেতে হয় চেরাপুঞ্জি। সব মিলিয়ে দূরত্ব দাঁড়ায় প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। এতে সময় লাগে প্রায় এক দিন। টাকাও বেশি খরচ হয়। কিন্তু ভোলাগঞ্জে ইমিগ্রেশন থাকলে মাত্র পঞ্চাশ কিলোমিটার পথ যাওয়া লাগতো।
তিনি আরও বলেন, তিন ঘণ্টার মধ্যে একজন ব্যবসায়ী তার কাজ শেষ করে কম খরচে আবার চলে আসতে পারতেন। এতে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হতো, সরকারের রাজস্বও বাড়তো।
তিনি আরও বলেন, এখানে স্থলবন্দর করার কথা। জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। শুনেছি কাজও শুরু হবে দ্রুতই। কিন্তু ভারত অংশে কোনো অবকাঠামো এখনো হয়নি। তাই শুধু বাংলাদেশ অংশে একটি স্থলবন্দর করলে কিছুই হবে না। ওপারে (ভারত অংশে) রাস্তাসহ অনেক কিছুর উন্নয়ন লাগবে। তারপর স্থলবন্দরের সুফল মিলবে।
অপরদিকে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, এখানে ইমিগ্রেশন চালু হলে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটক বাড়বে।
সাদাপাথর এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জলিল বলেন, পর্যটকরা সব সময় চান কম সময় ও খরচে বেশি জায়গা ঘুরতে। তাই এখানে ইমিগ্রেশন থাকলে দেশের যেসব পর্যটক চেরাপুঞ্জি ঘুরতে যেতে চান তারা প্রথমে সাদাপাথরে এসে পরে সহজেই ভারতে যেতে পারবেন।
এছাড়া চেরাপুঞ্জি থেকে যেহেতু সাদাপাথরের দূরত্ব মাত্র পঞ্চাশ কিলোমিটার, সুতরাং ইমিগ্রেশন সুবিধায় সাদাপাথরে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনাও বাড়বে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের যেসব বাসিন্দা চেরাপুঞ্জিতে আসেন, তাদের ভিসা থাকলে তারাও সাদাপাথরে আসার সুযোগ পাবেন।
ভোলাগঞ্জ স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা সালেহ আহমেদ জানান, ভোলাগঞ্জ স্থল শুল্ক বন্দর দিয়ে শুধু পাথর ও চুনাপাথর আমদানি হয়ে আসছে। প্রতিদিন গড়ে ৩৪০ থেকে ৩৫০টি ১২ টনের ট্রাক এই শুল্ক স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকে। তবে বাংলাদেশ থেকে কোনো কিছু রপ্তানি হয় না এবং এখানে কোনো ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাও নেই।
ভোলাগঞ্জ থেকে চেরাপুঞ্জির দূরত্ব পঞ্চাশ কিলোমিটার। কিন্তু ইমিগ্রশন সুবিধা না থাকায় এখানকার মানুষদের প্রায় ১৬০ কিলোমিটার ঘুরে তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে যেতে হয়।
সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর চালুর জন্য এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে। স্থলবন্দরের জন্য জমিও অনেকটা চিহ্নিত করা হয়েছে। স্থলবন্দর হয়ে গেলে ইমিগ্রেশনও চালু হবে।