বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৫ পূর্বাহ্ন




১০ মাস ধরে অচল ১০ কোটি টাকার মেশিন, রোগীদের দুর্ভোগ

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩ ৯:৫০ am
Chattogram Medical College Hospital CMC CMCH চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চমেক
file pic

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) মেশিনটি ১০ মাস ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে। হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের একমাত্র মেশিন এটি। ১০ কোটি টাকার মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে পড়ে থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। কবে নাগাদ এটি সচল হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রোগনির্ণয়ের অত্যাধুনিক একটি পরীক্ষাপদ্ধতি এমআরআই। যেটির সাহায্যে মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, হৃৎপিণ্ডসহ দেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের রোগ সহজে নির্ণয় করা যায়।

হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, নিউরো সার্জারি ও কার্ডিওলজি বিভাগের বহির্বিভাগ ও ইনডোরে প্রতিদিন আট শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ রোগীর এমআরআই পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। হাসপাতালে যখন এমআরআই মেশিনটি সচল ছিল তখন দেড় থেকে তিন হাজার টাকায় পরীক্ষা করা যেতো। কিন্তু এটি অচল হয়ে পড়ে থাকায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৯-১০ হাজার টাকা খরচ দিয়ে এমআরআই করতে হয় রোগীদের। এ অবস্থায় অনেক দরিদ্র রোগী সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে হাসপাতালের এমআরআই মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়। তিন বছর পর ২০১৭ সালে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি এমআরআই মেশিন স্থাপন করা হয়। জন্যস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এটি দেওয়া হয়। জাপানি ‘হিটাচি ১.৫ টেসলা’ মডেলের নতুন মেশিনটি সরবরাহ করেছিল ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

ক্রয়ের চুক্তি অনুযায়ী তিন বছরের ওয়ারেন্টি ছিল। হাসপাতালের পুরাতন জরুরি বিভাগের পাশে নতুন কার্ডিওলজি ভবনের নিচতলায় মেশিনটি বসানো হয়। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর এটির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর ফিল্মের সংকটের কারণে পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফিল্ম কেনার পর ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে পুরোদমে কার্যক্রম চালু হয়। সেবা কার্যক্রম উদ্বোধনের তিন বছর না যেতেই এটি অচল হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় পর সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে ২০২১ সালের মে মাসে সচল করা হয়। ত্রুটি সারাতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সার্ভিসিং বাবদ সাড়ে ৯ লাখ টাকা বিল করেছিল।

এরপর ২০২২ সালের আগস্ট মাস থেকে আবারও অচল হয়ে পড়ে আছে মেশিনটি। ত্রুটি সারাতে রোগীদের কথা চিন্তা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এরপরও ত্রুটি সারানোর ব্যবস্থা করা হয়নি।

হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগ সূত্র জানায়, মেশিন অচল হওয়ার পর ত্রুটি সারাতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে কিছু যন্ত্রাংশ সংযোজন করেছেন। ওই যন্ত্রাংশ বাবদ ৫৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকার বিল করেছে ওই প্রতিষ্ঠান। এত টাকার যন্ত্রাংশ সংযোজন করার পরও সচল হয়নি। পরে আরও কিছু যন্ত্রাংশ সংযোজন করার প্রয়োজন হবে বলে জানায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যয় হবে আরও ৪০ লাখ টাকা। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।

রেডিওলজি বিভাগের কর্মচারী ও মেশিনটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘মেশিনটি যে কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিও দীর্ঘদিন ধরে খোলা হয় না। এভাবে পড়ে থাকলে এটি আর কোনও কাজে আসবে না।’

নিউরোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, ‘আমি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছি। মাথায়ও প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি। চিকিৎসক এমআরআই করতে বলেছেন। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে এমআরআই করতে ১৫ হাজার টাকা চাচ্ছে। পাঁচদিন আগে পরীক্ষা করানোর জন্য চিকিৎসক পরামর্শ দিলেও টাকার অভাবে করাতে পারিনি। শুনেছি এখানে থাকা এমআরআই মেশিন দীর্ঘদিন নষ্ট। সচল থাকলে আমার অনেক উপকার হতো।’

কবে নাগাদ এটি সচল হবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘সার্ভিসিংয়ের ক্ষেত্রে চুক্তি করতে বলতেছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। বার্ষিক সার্ভিসিং বাবদ মেশিনের মূল্যের ১০ শতাংশের বেশি সার্ভিসিং চার্জ দাবি করছে তারা। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৬.৫ শতাংশের বেশি দিতে রাজি নয়। এ কারণে সচল করা যাচ্ছে না। আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এখনও কোনও উত্তর পাইনি।’




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD