বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের মন্ত্রী বলেছে যে, চমৎকার বাজেট হয়েছে। অথচ নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া বলছে যে, সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি নেই। নিত্যপণ্যের দামের যে ঊর্ধ্বগতি, চলমান যে কঠিন অর্থনৈতিক সংকট সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো রূপরেখা বাজেটে নেই। টাকা কোত্থেকে আসবে? কীভাবে আসবে সেটাও বলা নেই। এটাই হলো এই সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এরা সর্বদা জনগণকে প্রতারণা ও বিভ্রান্ত করে।
তিনি বলেন, যারা আয়করবহির্ভূত ভিক্ষুক তাদেরও নাকি দুই হাজার টাকা করে আয়কর দিতে হবে। টিন নাম্বার থাকতে হবে! এভাবে মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়ে ক্ষমতাসীনরা মেগা প্রজেক্ট ও উন্নয়ন করছেন? আজকে চাল-ডাল-তেল-লবণ ও পেঁয়াজের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে কঠিন অবস্থা। গরিব মানুষ বলছে সামনে কোরবানি আমারও তো সাধ হয় যে, গরুর গোশত রান্না করব। কিন্তু আদা কিনবে কোত্থেকে? সুতরাং এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। সেজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সরকারকে বলব, অনেক হয়েছে আপনারা সরে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। না হলে দেশের মানুষ জানে কীভাবে বিদায় করতে হয়।
শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।
জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, চার বছরে তিনি দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। আজকে আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের সবাইকে শ্রদ্ধা জানাতে চাই। কাউকে খাটো করতে চাই না। কিন্তু আজকে যেই ব্যক্তির স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলো সেই ব্যক্তিকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন ক্ষণজন্মা ও বিপ্লবী। তিনি সমাজকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন। বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশকে উঁচু স্থানে নিয়ে যেতেন। যেমনটি সাবেক মার্কিন কূটনীতিক উইলিয়াম বি মাইলাম বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে মারা না গিয়ে যদি ১৯৭৫ সালে মারা যেতেন তাহলে বাংলাদেশের ভাগ্যে কী ঘটত আমি জানি না’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীনরা সবসময় বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ও বিপক্ষে কাজ করেছে। আজকে জিয়াউর রহমানের সেই ঘোষণার মতো বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দেশের কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবকিছুই তারা ধ্বংস করেছে। গণতান্ত্রিক ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য আমাদের লড়াই-সংগ্রাম করতে হচ্ছে। আগামীতেও লড়াই হবে। পেশাজীবীসহ সবাইকে আমি যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাব।
এ সময় বিএসপিপির আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. তাজমেরি এস এ ইসলাম, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, ডা. এ কে এম আজিজুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, আইনের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, কৃষিবিদ গোলাম হাফিজ কেনেডি, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের খান মোহাম্মদ মনোয়ারুল ইসলাম (শিমুল) প্রমুখ।