২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
শুক্রবার (২ জুন) বিজিএমইএ’র প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান এ কথা জানান। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আজিজ গ্রুপের কনফারেন্স রুমে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিমসহ পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবিত বাজেট পোশাক খাতের জন্য কি সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং কর হার কেমন নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা এখনও পরিস্কার হয়নি। তাই বাজেট চূড়ান্ত করার সময় বিজিএমইএ’র দাবিগুলো বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বিজিএমইএর দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- উৎসে কর আগের মতো পয়েন্ট পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করা, রপ্তানি আয়ের নগদ প্রণোদনার উপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার করা, নন কটন পোশাক তৈরির কাঁচামাল এবং সৌর বিদ্যুৎ উপাদানের মেশিন আমদানি শুল্কমুক্ত করা। একই সাথে কারখানার উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে বিশ্ব বাজারের সাথে জ্বালানির দাম সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছেন ফারুক হাসান।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাকের ক্রয়াদেশ কমছে, অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও ডলারের রিজার্ভও নিন্মমুখী। এমন অবস্থায় দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত এবং কর্মসংস্থান ধরে রাখতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান খাত তৈরি পোশাককে সহায়তার বিকল্প নাই। ফলে সহায়তা পেলে রপ্তানি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ সরকারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করবেন গার্মেন্টস মালিকরা।
কোভিডের কারণে আমাদের শিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি কাটিয়ে উঠতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তার উপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বেব্যাপী মন্দা চলছে, খুচরা বিক্রয় চাহিদা কমছে। এছাড়াও জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার চায় দেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএ। সংগঠনের নেতারা বলছেন, যেহেতু নগদ সহায়তা কোনো ব্যবসায়িক আয় নয়, তাই এ সহায়তার অর্থকে করের আওতার বাইরে রাখাই যুক্তিসঙ্গত।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা খুবই জরুরি। পোশাকশিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতিকে বেগবান করে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব। চলমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উৎসে কর ২০২১-২২ অর্থবিছরের মতো শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য করার দাবি জানাচ্ছি। এটি আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর করার জন্য পুনরায় সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তিনি বলেন, নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রতাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। যেহেতু নগদ সহায়তা কোনো ব্যবসায়িক আয় নয়, তাই নগদ সহায়তার অর্থকে করের আওতার বাইরে রাখাই যুক্তিসঙ্গত। আমরা মনে করি, এ সংকটময় সময়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হবে।
ফারুক হাসান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ইতিবাচক দিক রয়েছে। আমদানি ও রপ্তানিতে ব্যবহৃত কনটেইনারের আমদানি করভার কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃত্রিম আঁশের তৈরি কাটা ফেব্রিক্স ও নষ্ট টুকরা (এক মিটারের বেশি দীর্ঘ নয়); বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের কাছে নমুনা হিসেবে বিনামূল্যে সরবরাহ করা ফেব্রিক্স (তিন বর্গমিটারের নিচের আকৃতির) এবং ট্যাপস অ্যান্ড ব্রাইডসের উৎপাদনপর্যায়ে মূসক অব্যাহাতির প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্পকে সহায়তার লক্ষ্যে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে নতুন এইচ এস কোড সংশ্লিষ্ট কতিপয় যন্ত্রাংশ সংযোজন এবং কিছু পণ্যের বর্ণনা সংশোধন করা হয়েছে।
‘রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের বিকাশের জন্য রপ্তানি প্রণোদনা, কর অব্যাহতি, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিভিন্ন রপ্তানিমুখী তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ও পরিবেশবান্ধব শিল্পস্থাপনকে উৎসাহিত করার কথা বলা হয়ে়ছে। নবায়নযাগ্য জ্বালানির ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য স্থানীয়ভাবে বিদেশি বাণিজ্যিক অফিস স্থাপন, বিদেশি কর্মীদের ভিসা সুপারিশ ও কর্মের অনুমতি দেওয়ার কর্মপদ্ধতি ২০২৩ অনুমাদন করা হয়েছে। অথনৈতিক অঞ্চলে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজীকরণের জন্য কাস্টমস অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’ যুক্ত করেন বিজিএমইএর সভাপতি।