২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। অনেকেই বলছেন, এই ৩৮টি সেবা নিতে টিআইএন নেওয়ার পর কারও আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে সেক্ষেত্রে তাকেও করের বোঝা বইতে হবে কিনা
নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে নির্বাচনী বছরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটে করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম ২,০০০ টাকা কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা তৈরি হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এই কর আরোপকে “বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত” আখ্যা দিয়ে বাতিলের সুপারিশ করেছে।
বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, “আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন গরিব মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। যে ধরনের মানুষদের জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক, তাদের জন্য বছরে দুই হাজার টাকা কর বোঝা নয় গর্বের বিষয় হওয়ার কথা।”
বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা সমালোচনা চলছে। কারণ প্রস্তাবিত বাজেটে করযোগ্য আয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। আবার রিটার্ন দাখিল করলে নূন্যতম করারোপের কথাও বলা হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। অনেকেই বলছেন, সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিআইএন নেওয়ার পর কারও আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে সেক্ষেত্রে তাকেও করের বোঝা বইতে হবে কিনা।
আয়কর সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও তার জবাবে টিআইএন স্থগিত বা বাতিলের সুযোগ থাকার বিষয়টি এনবিআরের ওয়েবসাইটে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এনবিআর জানিয়েছে, “আপনার আয় আয়কর আরোপ যোগ্য সীমার নিচে নেমে গেলে এবং যদি আপনার মনে হয় নিকট ভবিষ্যতে আয়সীমা ন্যূনতম আয়কর প্রদানের আওতায় আসবে না, তাহলে আপনি সংশ্লিষ্ট সার্কেলের উপ-কর কমিশনার বরাবর টিআইএন বাতিলেন জন্য কারণ ব্যাখ্যা করে আবেদন করতে পারেন। উপ-কর কমিশনার অনুসন্ধান বা শুনানি এর মাধ্যমে অথবা আবেদনের ওপর ভিত্তি করে আপনার টিআইএন এর কার্যক্রম স্থগিত বা বাতিল করতে পারেন।”
এ প্রসঙ্গে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। তাদের সেই প্রতিবেদনে আয়কর আইনজীবী মোহাম্মদ ইয়াসিনের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
আইনজীবী মোহাম্মদ ইয়াসিন জানান, “শুধু আয় কমে গেলেই নয়; বয়সজনিত ও মৃত্যুর কারণে আয়কর সনদ বাতিল বা স্থগিত করার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য আইনজীবীর মাধ্যমে বা তিনি নিজেই এনবিআরের নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করলে যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত দেবে এনবিআর।”
ন্যূনতম করারোপের জন্য সরকারের যুক্তি, অনেকে টিআইএন নম্বর নিয়ে রিটার্ন জমা দেন না। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৮৮ লাখ টিআইএন নম্বর নিলেও হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী রিটার্ন দাখিল করেছেন ৩২ লাখ।
রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর আইনে সাজার বিধান আছে। এমন টিআইএনধারীদের করের আওতায় আনতেই সরকার এই পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।