শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ অপরাহ্ন




অগ্রিম আয়কর তুলে দেয়ার বিষয়টি সরকারকে বলবো: পরিকল্পনামন্ত্রী

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ ৪:১০ pm
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান mannan planning ministry পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
file pic

অগ্রিম আয়কর (এআইটি) তুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এআইটি তুলে দেয়ার যে দাবি উঠেছে, তা অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন। আগামী বাজেট আলোচনায়, বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা এবং এআইটি তুলে দেয়ার বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরবো।

রোববার (৪ জুন) রাজধানীর পল্টনে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) অডিটরিয়ামে ‘বাজেট ২০২৩-২৪: প্রেক্ষিত পুঁজিবাজার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সিএমজেএফ ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) যৌথ উদ্যোগে বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উন্নয়নশীল বিশ্বে পুঁজিবাজার উপেক্ষিত থাকায় বাংলাদেশেও তা হয়েছে মন্তব্য করে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন চালকে পুঁজিবাজার এখনো স্থান নিতে পারেনি। কিন্তু পুঁজিবাজার চালকের নেতৃত্বে আসতে পারে। আমরা সে পথেই রয়েছি। এখানে আমাদের আরেকটু নজরদারি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজার কিছুই পায়নি, এ কথাটা আসলে সঠিক নয়। আমরা অর্থনীতির উন্নয়নের পথে রয়েছি। আমাদের দেশে এখনো পুঁজিবাজারকে হয়তো তেমনটা গুরুত্ব দেয়া হয় না। কিন্তু আস্তে আস্তে এ গুরুত্বটা বাড়বে। এম এ মান্নান বলেন, দ্বৈত কর নীতি প্রত্যাহার, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান বাড়ানো বিষয়টিও সরকারের কাছে তুলে ধরবো। আপনারা যদি এই প্রস্তাবগুলো লিখিত আকারে পাঠান, তবে সরকারের কাছে আমি বিবেচনার জন্য লিখিত পাঠাবো।

সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ হাসান বাবু, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান এবং ডিবিএ প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উঠতি বয়সী যুবকের সঙ্গে তুলনা করে এম এ মান্নান বলেন, কোন সন্দেহ নেই, আমাদের অর্থনীতি তরুণ ও টিনেজার অর্থনীতি। টিনেজার হওয়ায় এর একটা উদ্যোম রয়েছে, কিছুটা লাফা লাফিও রয়েছে, তাই এটিকে নজরদারি করতে হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট ডমিনেন্ট বা ড্রাইভ দিতে পারে এমন অর্থনীতি আমাদের হয়নি। আমরা সেদিকে যাচ্ছি। উই আর অন দ্য ওয়ে। উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে যেতে হলে প্রয়োজন অর্থের। পুঁজিবাজার সেই অর্থায়নের উৎস হতে পারে। আমরা সেদিকে যাবো, পুঁজিবাজারের মাধ্যমে আমাদের অভিযাত্রা শুরু হবে।

তিনি বলেন, কৈশোরে উপনীতদের যেমন বিশেষ যত্ন নিতে হয়, তেমনি আমাদের বিকাশমান অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারকে চালকের আসনে নিয়ে যেতে যত্ন নিতে হবে। এখানে একটু নজরদারি-তদারকি করা লাগবে।

দেশের অর্থনীতির আগের চেয়ে বেশি তথ্য নির্ভর ও জ্ঞান নির্ভর হচ্ছে। এখন বিজনেস সংগঠনগুলোও আগের চেয়ে বেশি দক্ষ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সর্বক্ষেত্রে সংস্কার করা দরকার তবে আর্থিক খাত হিসেবে ব্যাংক ও এনবিআর এ সংস্কার খুবই জরুরি। আমরা সেখানেও কাজ করবো।

উন্নয়নশীল দেশে পুঁজিবাজার উপেক্ষিত থাকে। এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের বিষয়টি সেভাবে না আসলেও আমি বাজেটে আনার জন্য লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানাবো। যোগ করেন তিনি।

সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ হাসান বাবু, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান এবং ডিবিএ প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিও এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কেবল ব্যাংক নির্ভরতা নিয়ে অর্থনীতি পুরোপুরি সাবলম্বী হওয়া সম্ভব না। পুঁজিবাজারই হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। আমরা আগামী বাজেটে বেশ কিছু প্রস্তাব করেছিলাম। এরমধ্যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কেম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। এটা করলে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে। তিনি বলেন, আমরা কিছুদিন আগে ১০টি কোম্পানি নিয়ে একটা সার্ভে করেছিলাম। সেখানে আমরা দেখতে পেয়েছি অ-তালিকাভুক্ত কোম্পনির চেয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকেই তুলনামূলভাবে সরকারের রাজস্ব বেশি এসেছে। এজন্য কর কমিয়ে হলেও কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি’রোজারিও বলেন, দেশের সব ছোট ছোট বিনিয়োগগুলোকে একটি ফ্রেমে আনতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম হতে পারে পুঁজিবাজার। এমন একটি পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটের জন্য আমরা নতুন কিছুই পেলাম না। এটা খুবই হতাশাজনক। তিনি বলেন, বাহিরের দেশগুলোতে যেখানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানির মূল্যায়ন বাড়ে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে আমাদের দেশের কেম্পানিগুলো এখানে তালিকাভূক্ত হওয়াকে বোঝা মনে করছে। আমাদের এ অবস্থানটা ঠিক করতে হলে সরকারকে কিছুটা প্রণোদনা দিতে হবে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমাদের দেশের শিল্পায়নে এখন পর্যন্ত যে বিনিয়োগুলো হয়েছে তার সিংহভাগই ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছে। এটা পুঁজিবাজারে মাধ্যমে হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু সেটা হয়নি। পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা তৈরি না হলে দেশের অর্থনীতিকে কখনোই স্ট্যাবেল একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য বন্ড মার্কেটের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে জিরো কুপন বন্ডের মতো সব ধরনের বন্ডকে করমুক্ত করা উচিত। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির বিষয়ে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু দেশে ব্যবসা করা সব বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসার ব্যপারে অনেক আগে থেকেই বাধ্যতামূলক থাকা উচিত ছিলো। এসময় তিনি এ বড় কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার জোর আহবান জানান।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, বিশ্বের বড় দেশগুলোতে পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেখানে আমাদের দেশে এটাকে কোনঠাসা করে রাখা হচ্ছে। কোনঠাসা হয়ে আছে। আমি বিশ্বাস করি, পুঁজিবাজারকে কোনঠাসা করে রাখা যাবে না, কোনঠাসা থাকবে না। কারণ এটার সঙ্গে দেশের সর্বস্থরের মানুষ আছে, অর্থনীতির ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে অর্থসূচক সম্পাদক এবং সিএমজেএফ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা যেখানে বলছি যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের একটি অভিযাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মান করবো কিন্তু তার অর্থায়নের যে বড় একটি অংশ সেটি আনস্মার্ট এই বিষয়টা অকল্পনীয়। আপনি প্রথাগত যে ব্যাংক নির্ভর অর্থায়ন সেটি দিয়ে আপনি স্মার্ট বাংলাদেশের গৌরব অর্জন করবেন এটি কখনই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমার সময় হচ্ছে এখন উন্নত দেশের তালিকায় যাওয়ার, এবং সে যাত্রায় আমাদের বিশাল এক বিনিয়োগের দরকার এবং সে বিনিয়োগ আমরা প্রথাগত ব্যাংক খাত থেকে নিবো, যেখানে কিছুদিন আগেই খবরে এলো ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। আপনি স্বল্প মেয়াদী আমানত নিয়ে দির্ঘমেয়াদী অর্থাইয়ন করবেন তাহ্লে তো এমন ঘটনা অবধারিত হবেই।

জিয়াউর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার থেকে উদ্যোক্তাদের কয়জন পালিয়ে গেছেন? কিন্তু ব্যাংক ঋণ নিয়ে পালানোর ঘটনা অগণিত। তাই এই বিষয়গুলো বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের নজরে আনা উচিৎ। বাজেট আসলে শুধু আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, বাজেট সরকারের রাজনৈতিক দর্শন। আর সরকারের সেই দর্শনে যখন আমরা কোন একটি বিষয়ের উপস্থিতি দেখিনা, তখন সেই সেই সেক্টরটিকে উপেক্ষিত মনে হয়। কর হ্রাস বা বৃদ্ধি আসল বিষয় নয়, বিষয়টি হলো পুঁজিবাজার যে আমাদের বড় একটা সম্ভাবনার যায়গা, বড় একটি অংশ অর্থনীতির সেটি বাজেটের আলোচনায় অন্তত থাকা জরুরি। কিভাবে আমরা এই বাজারকে আগামীতে কাজে লাগাবো সেই আলোচনা থাকতে পারতো। আর যখনি এই বাজার নিয়ে কোন আলাপ-আলোচনা বাজেটে হয়না তখনি মনে হয় যে এ বাজার অবহেলিত। তখন মনে হয় যে সরকারের রাজনৈতিক এবং উন্নয়নের যে দর্শন সেখানে পুঁজিবাজার নেই।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD