বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন প্রতিদিন অন্তত ১৭ কোটি কাপ চা পান করেন। চায়ের উৎপাদন আরো বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
রোববার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে যাত্রা শুরু হওয়া বাংলাদেশের চা শিল্প নানা দুর্যোগ কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদন।
“এ শিল্পের সঙ্গে দেড় লাখের বেশি শ্রমিক, টি স্টাফ, চা বাগান মালিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ লাখো মানুষ জড়িত। সবার সমন্বিত প্রয়াসে এগিয়ে যাবে এ শিল্প।”
‘চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প’-এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে নানা আয়োজনে মৌলভীবাজারে উদযাপিত হচ্ছে জাতীয় চা দিবস।
এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ, চা বোর্ড চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল ইসলাম, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান কামরান টি রহমান এবং টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাহ মঈনুদ্দিন হাসান।
আব্দুস শহীদ বলেন, “এই একটি শিল্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তিনি এই শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন; যা চা শ্রমিক ও চা শিল্পের জন্য মঙ্গল বয়ে এনেছে।”
এ সময় বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, “২০২১ সালে দেশে সর্বাধিক ৯৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র থেকে চায়ের ২৩টি জাত আবিষ্কার হয়েছে। চায়ের উৎপাদন বাড়াতে পাহাড়ি অঞ্চলের পাশাপাশি এখন সমতলেও চা চাষ হচ্ছে, যেখানে উৎপাদনও বেশ আশাব্যঞ্জক।”
জাতীয় চা দিবসের এ আয়োজন সাধারণত ঢাকায় হলেও এবারই প্রথম শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হলো বলে জানিয়েছেন চা বোর্ডের শ্রীমঙ্গলের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক রফিকুল হক।
তিনি বলেন, “এর ফলে জাতীয় এই অনুষ্ঠানে চা শ্রমিক, চা বাগানের স্টাফ, বাগান মালিক, স্থানীয় সুধীজনসহ অংশীজনরা অংশ নিতে পেরেছেন।”
সভায় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমানসহ অন্যরাও বক্তব্য দেন।
সভা শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আটটি জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনের জন্য সম্মননা পেয়েছে শ্রীমঙ্গল ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগান। গুণগত মানসম্মত চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্মাননা পায় মধুপুর চা বাগান, শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার পেয়েছে আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রডাক্ট লিমিটেড।
এছাড়া শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন পঞ্চগড়ের আনোয়ার সাদাত সম্রাট। শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগানের সম্মাননা পায় শ্রীমঙ্গলের জেরিন চা বাগান, বৈচিত্রময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের সম্মাননা পায় কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড, দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্মত চা মোড়কের ভিত্তিতে সুলতান টি, শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারীর সম্মাননা পান নেপচুন চা বাগানের উপলক্ষ্মী ত্রিপুরা।