রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন




বাড়তি আয়েও মিটছে না ব্যয়, সংসার চালাতে ঘাটতি: বিবিএস

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ৯:০৭ pm
Bangladesh Bureau of Statistics বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস Bangladesh bureau of statistics BBS
file pic

‘সরকারি-বেসরকারি চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে মজুরি কিছুটা বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতির তুলনায় অপ্রতুল। বাড়তি মজুরির টাকা খেয়ে ফেলছে নিত্যপণ্য বিশেষ করে খাদ্য খাতের মূল্যবৃদ্ধি। এখন জাতীয় পর্যায়ে মজুরি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির হারে অনেক পার্থক্য দেখা দিয়েছে। সাধারণত মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির কিছুটা বেশি থাকে। কিন্তু এখন ভিন্নচিত্র দেখা যাচ্ছে। মজুরি থেকে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। ফলে নিত্যপণ্য কিনতে টান পড়ছে। সঞ্চয় ভেঙে সংসারের ব্যয় মেটাতে হচ্ছে।’

সোমবার (৫ জুন) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া মে মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্যে এমনটা বলা হয়েছে।

বিবিএস বলেছে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাবের কারণে চলতি অর্থবছরের মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশে রেকর্ড গড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে, যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১১ সালের মাসে ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ। মে মাসে মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। সুতরাং মূল্যস্ফীতি ও মজুরির মধ্যে ফারাক ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। ফলে বাড়তি আয় দিয়ে বাড়তি ব্যয় মিটছে না। ব্যয় মেটাতে ঋণ করা ও সঞ্চয় ভাঙাসহ ভিন্নপন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

যদিও ফেব্রুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে। মার্চ মাসে আবারও মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়। এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা আশাব্যঞ্জক নয়। এপ্রিল মাসে সার্বিক বা সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্যে দেখা গেছে, মে মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে, গত মাসে যা ছিল ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস।

বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন ও শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়তি। মে মাসে এ খাতে মূল্যস্ফীতিরে হার বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, গত মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

বিবিএসের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আপনি ২০২২ সালের মে মাসে ১০০ টাকায় যত জিনিসপত্র কিনেছেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই টাকা দিয়ে সেই জিনিসপত্র পাবেন না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আপনাকে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সা খরচ করতে হবে। ৯ টাকা ৯৪ পয়সা হলো মূল্যস্ফীতি। গত মে মাসের মূল্যস্ফীতির হার ছিল এটাই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মজুরিও বাড়ে। মজুরি বেশি বৃদ্ধি পেলে মূল্যস্ফীতির আঁচ টের পান না তারা। কিন্তু সমান হলেও দুশ্চিন্তা বাড়ে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে মজুরির থেকে মূল্যস্ফীতি বাড়তি। গত মে মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর মানে, মজুরি বৃদ্ধির বাড়তি টাকা দিয়েও মিটছে না মূল্যস্ফীতি। মজুরির টাকা দিয়েও মূল্যস্ফীতির ব্যয় মেটাতে ২ দশমিক ৬২ শতাংশ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে সঞ্চয় ভেঙে জীবনযাত্রার বাড়তি চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি কমাতে টাকা ছাপানো বন্ধসহ বাজার মনিটারিং বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্ববাজারের দোষারোপ না করে অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিশ্ববাজারের বাজারের দোষারোপ করে পার পাওয়া যাবে না। অভ্যন্তরীণ মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। দরিদ্র মানুষ ও মধ্যবিত্তরা অনেক সমস্যায় আছে। কারণ এরা মজুরির ওপর ভর করে সংসার চালায়। তবে বড় লোকদের ওপরে প্রভাব পড়বে না।

তিনি আরও বলেন, বিদেশে সবকিছুর দাম কমছে, তাহলে আমাদের কমছে না কেন? কারণ আমাদের বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। চাল, বোরো ধানের বাপ্পার ফলন হয়েছে, তারপরও কেন কমছে না। সমস্যা হচ্ছে সরকার টাকা ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতি কমাতে চায়। টাকা ছাপিয়ে সরকার ব্যয় মেটাবে অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। টাকা ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতি কমবে না। বাজার জোরালো মনিটরিং করতে হবে। বসে থাকলে হবে না। বিশ্ববাজারে কমে দেশে কেন কমে না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ভারতে কমছে, ভিয়েতনামেও কমছে, তাহলে আমাদের কমছে না কেন? আমরা কি বিশ্ববাজারের বাইরে? বিশ্ববাজারকে দোষ নিয়ে লাভ নেই। বন্ধুর ঘাড়ে বন্দুক রেখে বেশি দিন গুলি চালানো যায় না, নিজের ঘাড়ে বন্দুক রাখতে হবে। পলিসির সমস্যা আছে। টাকা ছাপানো বন্ধ করতে হবে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD