তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বর্তমান মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
সম্প্রতি দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও সাংবাদিকদের পরামর্শ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ঋণ না দেয়ার এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরশনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। তাই আমরা অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেসব পরামর্শ আসবে সে অনুযায়ী আগামী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হবে। বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও অন্যান্য দেশের তুলনায় আমারা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।
মেজবাউল হক বলেন, উন্নত দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশও তার মাশুল গুনছে। ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বর্তমান মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
মুখপাত্র বলেন, আমরা সংকটের মধ্যে আছি তা সত্য। আমদানি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানি বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়ে আমরা সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে আরও অর্থনীতিবিদ, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, চেম্বার অব কমার্স এবং অর্থনৈতিক খাতের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে বলেও জানান তিনি।
গত জুন ও জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমার পর আগস্ট মাসে তা আবার বেড়েছে। গত মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে। এই সময় দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হঠাৎ অনেকটা বেড়ে গেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার উঠেছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে।
এদিকে অনেক ব্যাংক বাফেদার নির্ধারিত দামে ডলার দিতে পারছে না। এজন্য মানুষ বাধ্য হয়ে খোলা বাজারে যাচ্ছে। সেখানে প্রতি ডলার ১১৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ডলারের এই অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ক্ষিপ্ত হন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।
এসময় তিনি এক সাংবাদিককে প্রশ্ন করতে বাধা দেন। কারও কোন কথা না শুনে তিনি এক নাগাড়ে উচ্চ স্বরে কথা বলতে থাকেন। ঐ সাংবাদিক তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও থামছিলেন না তিনি।
মেজবাউল হক বলেন, যারা টাকা পাঁচার করে তারাই খোলা বাজারে যাবে। সেখানে ১১৮ টাকা দামের ডলার ১৩০ টাকা দিয়ে কিনবে। অন্য কেউ কেন খোলাবাজারে যাবে। ব্যাংকে গেলেই ক্রেডিট কার্ডে ডলারের ইন্ডোর্সমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে।
তখন উপস্থিত সাংবাদিকেরা বলেন, বাফেদার নির্ধারিত দামে ব্যাংকগুলো ডলার দিতে পারছে না। অনেক ব্যাংকারদের অভিযোগ, বাংলাদেশ ব্যাংক জোর করে এই দাম তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এজন্য বাধ্য হয়ে মানুষ খোলাবাজারে ডলার কিনতে যাচ্ছেন।
এরপরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বাফেদা একা কখনো ডলারের দাম ঠিক করে না। তাদের সব সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ডলারের দাম ঠিক করেন। তারা ডলারের দাম ঠিক করলে সেটিকে আমরা সাপোর্ট দেই।
রপ্তানি করে পাওয়া ডলার যে ব্যাংকে থাকে সেই ব্যাংকে ব্যবসায়ীদের আমদানি এলসি খুলতে হয়। এতে অনেক ব্যবসায়ীর অসুবিধা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক সাংবাদিকের এমন মন্তব্যেও তিনি রেগে যান।
তিনি ঐ সাংবাদিককে বলেন, আপনাকে একটা কথা বলি শোনেন- কাগজে কলমে রপ্তানিকারকেরা ১০৯ টাকা করে ব্যাংকে ডলার বিক্রি করেন। তবে হাতে করে ১২০ টাকা করে নিয়ে যায়। আপনাকে নিউজের এই সূত্র দিয়ে দিলাম। কালকেই এটি খুঁজে নিউজ করবেন।