সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন




পাশের কারখানার আলকাতরার গন্ধ পোশাকে, ৩ বছর ধরে বন্ধ প্রতিষ্ঠান

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৮:২০ pm
Textiles Textile garment factory garments industry rmg bgmea worker germent পোশাক কারখানা রপ্তানি শিল্প শ্রমিক আরএমজি সেক্টর বিজিএমইএ poshak shilpo পোশাক খাত green factory wb সবুজ কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরি green factory
file pic

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এক মালিকের দুই প্রতিষ্ঠান স্টিচওয়েল ডিজাইন্স লিমিটেড এবং অ্যাপারেল স্টিচ লিমিটেড। পাশেই ন্যাপথলিন এবং আলকাতরা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কারণেই ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন স্টিচওয়েল ডিজাইন্স এবং অ্যাপারেল স্টিচ লিমিটেডের মালিক।

শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁও শিল্প অঞ্চল এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইকবাল হোসেন বলেন, অনেক ভালো চলছিল আমাদের কারখানা। ২০১৪ সাল হতে কিছু বায়ার বিভিন্ন সময় আমাদের মৌখিকভাবে অবগত করে যে, আমাদের উৎপাদিত পণ্যে ন্যাপথলিন, আলকাতরা এবং বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের গন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে সর্বপ্রথম বায়ার আমাদের ই-মেইলের মাধ্যমে জানায় যে, আমাদের উৎপাদিত পণ্যে রাসায়নিক পদার্থের গন্ধ এবং এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যার দরুন বায়ার আমাদের পরবর্তী অর্ডারগুলো অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে যদি না আমরা এই গন্ধের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ না করি। ওই মেইলের মাধ্যমে আমি এবং আমার পরিচালনা পর্ষদ স্তম্বিত হয়ে পড়ি। কি করব না করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

পরবর্তীতে সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি নজরুল এন্ড ব্রার্দাস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে অর্থাৎ মো. নজরুল ইসলাম এর সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু উনি কোনোরকম গ্রাহ্য করেনি। ফলশ্রুতিতে গত ২ নভেম্বর ২০১৫ ইং তারিখ এ আমার বায়ারের মেইল সংক্রান্ত লিখিতভাবে ঘটনাটি জানাই এবং অনুরোধ করি আলকাতরা ও ন্যাপথলিনের গন্ধ বন্ধ করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। উনি তাতেও কোনো কর্নপাত করেননি।

তিনি বলেন, নজরুল এন্ড ব্রার্দাস এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমি পরিবেশ অধিদফতর এর দ্বারস্থ হই এবং ২০১৫-২০১৬ ইং এ অসংখ্য লিখিত অভিযোগ পরিবেশ অধিদফতরে জমা দেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, আমি ব্যবসায়ী হিসেবে এতটা অভাগা, পরিবেশ অধিদফতর আমার অসংখ্য লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্ত্বেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। এখানে উল্লেখ্য থাকে যে, ২০১৫-২০১৬ ইং সালের মধ্যেই প্রতিটি বায়ার আমাদের উৎপাদিত পণ্যে আলকাতরা এবং ন্যাপথলিন পাওয়া যায় এই মর্মে ই-মেইলের মাধ্যমে আমাদের অবগত করে দেয়।

পরবর্তীতে কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে আমাদের ব্যবসায়ী সংগঠন বিজিএমইএ এর তৎকালীন সভাপতি জনাব মো. সিদ্দিকুর রহমানের দ্বারস্থ হই এবং উনি আমার সকল ঘটনা শুনে গত ২২ অক্টোবর ২০১৬ ইং তারিখ এ বিজিএমইএ এর পক্ষ হতে লিখিতভাবে পরিবেশ অধিদফতর নজরুল এন্ড ব্রার্দাস এর আলকাতরা ফ্যাক্টরীর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। যার ফলশ্রুতিতে পরিবেশ অধিদফতর ৯ নভেম্বর ২০১৬ এবং ২২ নভেম্বর ২০১৬ ইং তারিখে নজরুল এন্ড ব্রাদার্স এবং আমার প্রতিষ্ঠান সরজমিনে পরিদর্শন করেন এবং আমার দীর্ঘদিনের লিখিত অভিযোগের সত্যতা পান। উক্ত পরিদর্শনের ফলশ্রুতিতে ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ইং তারিখ পরিবেশ অধিদফতর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ইং তারিখ এর মধ্যে নজরুল এন্ড ব্রার্দাসকে আলকাতরার গন্ধ নির্গমনে যথাযথ কি পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে তা লিখিতভাবে জানতে চায়। কিন্তু তারপরেও অজানা কি কারণে পরিবেশ অধিদফতর সকল ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ হইয়া যায় ।

তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে না, তা দেখে আমি আবারও বিজিএমইএ এর সাথে যোগাযোগ করি এবং বিজিএমই এর মাধ্যমে আমি তৎকালীন পরিবেশ এবং বন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করি এবং তাকে বিষয়টি অবগত করি। মন্ত্রীর সাক্ষাতের ফলশ্রুতিতে তাহার সচিব পরিবেশ অধিদফতরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নজরুল এন্ড ব্রাদার্স এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১১ জুন ২০১৮ ইং তারিখে নজরুল এন্ড ব্রাদাসকে পরিবেশ অধিদফতর থেকে জানানো হয় যে, উপযুক্ত কার্যকরী প্রযুক্তি/সিস্টেম স্থাপন না করলে পরিবেশগত ছাড়পত্র নবায়ন করা হবে না।

পরবর্তীতে নজরুল এন্ড ব্রাদার্স ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ইং এবং ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখে পুনরায় ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলে তা নাকচ করা হয়। কিন্তু আমার বোধগম্য নয় যে, কোন শক্তির ইশারায় এবং সরাসরি ভূমিকায় এখন পর্যন্ত নজরুল এন্ড ব্রাদার্স পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া তাদের কার্যক্রম অর্থাৎ উৎপাদন পুরোদমে পরিচালনা করে আসছে। এখানে উল্লেখ্য যে, আমার পার্শ্ববর্তী ভাড়াটে প্রতিষ্ঠান ইউনিট্রেড ফ্যাশন লিমিটেড এই আলকাতরা ও ন্যাপথলিনের গন্ধের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ঘুরিয়া ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হইয়া আমার আগে শ্রমিকদের সকল দেনা- পাওনা পরিশোধ করিয়া লে-অফ ঘোষণা করে।

তিনি আরও বলেন, আমি ২০১৪ ইং সাল থেকে ২০২০ ইং সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ঘুরছি, অনুনয়-বিনয় করছি। কিন্তু কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান আমার অভিযোগের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। এই সময়ের মধ্যে আমার সমস্ত বায়ার তাদের সমস্ত অর্ডার বাতিল করে দেয়। শুধু তাই নয় অনেক বায়ার আমার শিপমেন্টকৃত পণ্যের ওপর মোটা অংকের আর্থিক ক্লেম করে এবং আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হই।

যখন সব দরজা বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠান চালানোর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি গত ১০ মার্চ ২০২০ ইং তারিখ এ ৪৫ (পয়তাল্লিশ) কোটি টাকা ঋণ মাথায় রেখে ১৩ (তের) কোটি টাকা পুনঃ ঋণ করে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শ্রমিকদের দেনা-পাওনা পরিশোধ করিয়া আমার প্রাণের প্রতিষ্ঠান, আমার সন্তান সমতুল্য প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ ঘোষণা করি। আমি গত ৩ বছর ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক ঋণে ও সুদের মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করতে করতে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছি। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় আমি আমার সহধর্মিনী, অত্র প্রাতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের নামে ডিও এইচ এস এ অবস্থিত বাড়িটিও ব্যাংকে বন্ধক রেখেছি। শুধুমাত্র ঋণখেলাপি হতে মুক্তি পেতে, অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার স্বার্থে এরই মধ্যে গত ৬ মাস আগে আমি একটি নতুন ক্রেতাকে অনুনয় বিনয় করে কিছু সাব কন্ট্রাক এর কাজ নেই। কিন্তু সেই একই কারণে আমি কাজ করতে পারি নাই। অফুরন্ত লোকসান করে অন্য ফ্যাক্টরীতে করতে হয়।

তিনি বলেন, আমি যাতে কমপ্লায়েন্স, শ্রম আইন মেনে আবারও ২৫০০ শ্রমিকের রিজিকের ব্যবস্থা করতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারি সে জন্য আমি সবার কাছে সহযোগিতা চাই।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD