রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ১১:১৩ অপরাহ্ন




প্রতি ৪ ঘণ্টায় পুড়ছে একটি বাস

প্রতি ৪ ঘণ্টায় পুড়ছে একটি বাস: নাশকতার আগুন নেভাতেও বাধা

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩ ৯:৩৭ am
highway hig hway road crash Students block road to protest peer's death in road crash Students block road protest peer's death road crash blockade tailbacks blocking traffic jams student institution died accident street streets Dhaka Metropolitan Police DMP arrested seized died bus motorcycle Transport শিক্ষার্থীদের সড়কে আন্দোলন শিক্ষার্থী সড়ক আন্দোলন অবরোধ যানবাহন রোড সড়ক মহাসড়ক যানজট রাস্তা বাস গাড়ি সড়ক road bus gridlock Study in India comp uttara road accident উত্তরা রোড দুর্ঘটনা এক্সিডেন্ট দুর্ঘটনা রোড সড়ক মহাসড়ক যানজট রাস্তা বাস গাড়ি সড়ক Accident road bus gridlock Study in India comp Road Accident jam-road road সড়ক অবরোধ
file pic

গত ১৩ দিনে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩১টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৯৯টি ঘটনায় আগুন নেভাতে কাজ করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদস্যরা। বাকি ৩০টি ঘটনায় আগুন নেভাতে পারেনি ফায়ার সার্র্ভিস।

এ ক্ষেত্রে উচ্ছৃঙ্খল জনতার বাধা ছিল। পাশাপাশি পুলিশের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা (৩৭ ঘণ্টা) পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা ১৫টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা দেশে প্রতি ৩ ঘণ্টায় ১টি করে পরিবহণ এবং প্রতি ৪ ঘণ্টায় ১টি করে বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ৬ ঘণ্টায় ১টি করে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস আরও জানিয়েছে, তৃতীয় দফায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম ৩৭ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৫টি আগুনের ঘটনার মধ্যে ঢাকা সিটিতে (হাজারীবাগ, তাঁতীবাজার, কাকলি, মিরপুর, ধানমন্ডি, বারিধারা, মাতুয়াইল) ৭টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর) ৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (খাগড়াছড়ি) ১টি, রাজশাহী বিভাগ (শিবগঞ্জ, বগুড়া) ১টি, বরিশাল বিভাগে (গৌরনদী, বরগুনা) ২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (নোয়াখালী) ১টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ৯টি বাস, ৪টি কাভার্ডভ্যান, ২টি ট্রাক পুড়ে যায়।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীর বাইরে ৬১টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আর ২১টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি বৃহস্পতিবার দাবি করেছে, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে ৯২টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ২০০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, এসব ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দুই হাজার ৮৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীর বাইরে থেকে এক হাজার ৩৪৫ ও রাজধানীর ভেতর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এক হাজার ৭৩৭ জনকে। তবে বিএনপির দাবি, ২৮ অক্টোবর দলটির মহাসমাবেশের চার-পাঁচ দিন আগে থেকে এ পর্যন্ত নয় হাজার ৮৩১ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, কয়েকদিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ২৮ অক্টোবর। ওইদিন ২৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওইদিনের ১৪টি ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা কাজ করতে পারেননি। এছাড়া ২৯ অক্টোবর ১৯টি ঘটনার মধ্যে চারটি, ৩১ অক্টোবর ১১টি ঘটনার একটি, ১ নভেম্বর ১৪টি ঘটনায় দুটিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেনি ফায়ার সার্ভিস।

২ নভেম্বর সাতটি এবং ৪ নভেম্বর ছয়টি ঘটনার সবকটিতে কাজ করেছে আগুন নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। ৫ নভেম্বর ১৩টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে দুটিতে এবং ছয় নভেম্বর ১৩টি ঘটনার মধ্যে চারটিতে আগুনের কাছাকাছি যায়নি ফায়ার সার্ভিস। ৭ নভেম্বর নয়টি, ৮ নভেম্বর আটটি এবং ৯ নভেম্বর বিকাল চারটা পর্যন্ত পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই তিন দিনের ঘটনাগুলোর মধ্যে প্রতিদিন একটি করে ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা কাজ করেনি।

গত ২৮ অক্টোবর থেকে প্রতিনিয়ত গাড়ি, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন, পুলিশ বক্স, পুলিশের গাড়ি, শোরুম, শ্রমিক অফিস, সিটি করপোরেশন কার্যালয়, দোকান, বাসাবাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি ও সমমনা দলের নেতাকর্মীরা এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযোগ। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাশকতার আগুনে পুড়ছে বিএনপির কার্যালয়ও। গত ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটে বিএনপির চারটি দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোতে যাত্রীবাহী বাস পুড়েছে ৬৫টি। এছাড়া তিনটি মিনিবাস, দুটি পুলিশ বক্স, একটি সিটি করপোরেশন কার্যালয়, একটি পুলিশের গাড়ি, চারটি মোটরসাইকেল, তিনটি মাইক্রোবাস বা প্রাইভেটকার, দুটি লেগুনা বা পিকআপ, বিএনপির চারটি কার্যালয়, রেলওয়ে শ্রমিকদের একটি অফিস, তিনটি শোরুম, আটটি কাভার্ডভ্যান বা মালবাহী গাড়ি, সাতটি ট্রাক এবং একটি করে সিএনজি আটোরিকশা, গার্মেন্ট কারখানা ও আওয়ামী লীগ কার্যালয় রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন বলেন, আগুন সন্ত্রাস করে কেউ পার পাবে না। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, আগুন নেভাতে ফায়ার সার্র্ভিস সদস্যদের ঘটনাস্থলে পৌঁছার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা ছিল না।

দেরিতে খবর পাওয়ার কারণে হয়তো কোনো কোনো স্থানে আগুন আগেই নিভে গেছে। এ কারণে তারা কাজ করতে পারেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের ঘটনাটি ছিল ভিন্ন। ওইদিন কেবল ঢাকার ভেতরে ঘটনা ঘটেছে। মানুষজন অনেক বেশি ছিল। উচ্ছৃঙ্খল জনতার কারণে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার বলেন, উচ্ছৃঙ্খল জনতার কারণে ২৮ এবং ২৯ তারিখের কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ আমাদের ঘটনাস্থলে যেতে নিরুৎসাহিত করেছে। তাই ওইসব স্থানে আমরা যেতে পারিনি। অন্য যেসব স্থানে আমাদের কাজ করতে হয়নি সেসবের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগুন আগেই নিভে যায়। এ ক্ষেত্রে কখনো আমরা খবর পেয়ে রওয়ানা দেওয়ার পর, আবার কখনো ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আগুন নিভে যাওয়ার সংবাদ পাই।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, অবরোধে যারা বাসে আগুন দিচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমাদের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নাশকতা প্রতিরোধে যাদের সক্রিয় ও সচেতন করা প্রয়োজন, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু পরামর্শ নিয়েছি এবং কিছু পরামর্শ দিয়েছি।

তিনি বলেন, বাসে যাতে আগুন না দিতে পারে সেজন্য সব পক্ষের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। নাশকতা প্রতিরোধের জন্য পরিকল্পনা সাজিয়েছি। আমাদের নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। চালক ও হেলপারদের করণীয় কী সেগুলো আমরা বলে দিয়েছি এবং এখনো বলছি।

৯২ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ-মালিক সমিতি : বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে ৯২টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ২০০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত এসব গাড়িতে হামলা হয় বলে জানায় সংগঠনটি। বৃহস্পতিবার সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল অবরোধ উপেক্ষা করে বুধ ও বৃহস্পতিবার গাড়ি চালানোয় মালিক ও শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। আগামীতে বিএনপি-জামায়াত নতুন কর্মসূচি দিলে তখনো গাড়ি চালাতে মালিক-শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে হরতাল-অবরোধের সময়ে গাড়ি চলাচলে নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানান তিনি। [যুগান্তর]




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD