বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন




ভূমি অধিগ্রহণ আনুষঙ্গিক ব্যয় নীতিমালা

ভূমি অধিগ্রহণ আনুষঙ্গিক ব্যয় নীতিমালা: দুই মন্ত্রণালয়ের মতানৈক্য চূড়ান্ত হয়নি ১৬ বছরে

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:০৬ am
ভূমি মন্ত্রণালয় Ministry of Land
file pic

২০০৮ সালে ভূমি অধিগ্রহণ আনুষঙ্গিক খাতে জমাকৃত অর্থ ব্যয়ের নীতিমালার খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো চেয়ে পাঠায় ভূমি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে কেটে গেছে ১৫ বছরের বেশি। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক, চিঠি চালাচালি, খসড়া নীতিমালা পুনরায় প্রণয়নসহ নানা কর্মকাণ্ড ঘটেছে। কিন্তু ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি দুটি মন্ত্রণালয়। যে কারণে আলোর মুখও দেখেনি ‘জমি অধিগ্রহণ আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয়ের নীতিমালা।’

অপর দিকে নীতিমালা না থাকায় প্রতিবছরই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখায় আনুষঙ্গিক খাতের অর্থ জমা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ২৪টি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের যে হিসাব পাওয়া গেছে সেটি পৌনে ৫শ কোটি টাকার বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে সব জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হিসাব যোগ করা হলে এ অঙ্ক ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু এ অর্থ ব্যয় এবং উত্তোলন কোনোটি করা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান জানান, এ বিষয়ে আমরা সহসা একটি ব্যবস্থা নেব। ইতোমধ্যে এ নিয়ে একটি বৈঠক করা হয়েছে। আনুষঙ্গিক খাতের অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় করতে পারবে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে দিয়ে অবহিত করব। কারণ এই অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। তবে নীতিমালার বিষয়টি এখনো বলা যাচ্ছে না। এই চিঠি দেওয়ার পর বিগত সময়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এলএ শাখায় এ সংক্রান্ত খাতে জমাকৃত অর্থ ব্যয় সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে ভূমি সচিব বলেন, এটি এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। নীতিমালা নিয়ে আমরা আরও একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করব।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ‘জমি অধিগ্রহণ আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয়ের নীতিমালা’ চূড়ান্ত করতে একাধিকবার তথ্য চাওয়া হয় ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু সেটি পাওয়া যায়নি। যে কারণে এটি চূড়ান্তও করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সেখানে অর্থ ব্যয়ের বেশ কয়েকটি খাত আছে। ওই সব খাতে অর্থ ব্যয়ের যে অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি অযৌক্তিক। যে কারণে অর্থ বিভাগ থেকে এ নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সর্তকাবস্থানে আছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও ব্যয় ব্যবস্থাপনা) সভাপতিত্বে এ নীতিমালা চূড়ান্ত প্রসঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় একটি সভা হয়। এরপর বিগত ৩ বছরে অর্থ বিভাগ বা ভূমি মন্ত্রণালয় আরও কোনো সভা করেনি। সর্বশেষ সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর অর্থ বিভাগের উপসচিব নাদিরা সুলতানার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয় ভূমি সচিব বরাবর। সেখানে ভূমি অধিগ্রহণ আনুষঙ্গিক খাতের জমাকৃত অর্থ ব্যয়ের একটি সংশোধিত খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করতে বলা হয়। পাশাপাশি ওই খসড়া নীতিমালার ওপর ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়। এরপর ইতোমধ্যে ৩ বছর কেটেছে। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় ওই চিঠির জবাব দেয়নি। খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের পর নতুন করে সংশোধিত খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের যৌক্তিকতা জানতে চাইলে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়, প্রথমে যে নীতিমালা তৈরি করেছে সেখানে অনেক জায়গায় অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। যে কারণে সংশোধিত খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করতে বলা হয়। কারণ নীতিমালাটি ওপর নির্ভর করবে আগামী দিনে ভূমি অধিগ্রহণ খাতের আনুষঙ্গিক ব্যয়।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ভূমি অধিগ্রহণ করলে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে আনুষঙ্গিক খাতে খরচ হিসাবে ২ শতাংশ হারে টাকা কেটে রাখা হয়। এটি এক ধরনের সরকারের পরোক্ষ আয়। এ টাকা ব্যয় করার কথা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখার। এ অর্থ দিয়ে অধিগ্রহণ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কম্পিউটার ক্রয়, প্রিন্টার, প্রিন্টারের কালি, ইন্টারনেটের যন্ত্রাংশ ক্রয়, ফটোস্ট্যাট মেশিন, ভিডিও ক্যামেরা, ক্যামেরা, স্ক্যানার কেনার কথা। এছাড়া সার্ভে যন্ত্রপাতি, ডিজিটাল সার্ভে মেশিন ক্রয়, কেনা যন্ত্রপাতি ও যানবাহন মেরামতসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য এলএ শাখা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মূল বাজেট থেকে ব্যয় করেছেন। ফলে সরকারের ২ শতাংশ হারে আদায়ের অর্থ ব্যয় না হওয়া দিন দিন অলস অর্থের পরিমাণ বেড়েই চলছে।

খসড়া নীতিমালায় কি আছে

আনুষঙ্গিক খাতের অর্থ দিয়ে জিপ, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল কেনার বিধান রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। গাড়ি চালাবে জেলায় কর্মরত পরিবহণ পুলের চালক। সেটি পাওয়া না গেলে আউটসোর্সিং করে ড্রাইভার নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ড্রাইভারের বেতন ও পরিবহণের তেল খরচ আনুষঙ্গিক খাত থেকে ব্যয়ের বিধান রাখা হয়। নীতিমালায় আরও উল্লেখ্য করা হয় ভূমি অধিগ্রহণের আনুষঙ্গিক খাতে অব্যয়িত অর্থ থেকে প্রতিবারই কমপক্ষে দুটি জিপ গাড়ি বা মাইক্রোবাস কিনতে পারবে। আর কোনো খাতে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে তার অনুমোদন প্রদান করতে পারবে।

সেখানে আরও বলা হয়, বিভাগীয় কমিশনারের অনুমোদন সাপেক্ষে ভূমি অধিগ্রহণ আনুষঙ্গিক খাতের অর্থ বিশেষ করে কম্পিউটার, প্রিন্টার, প্রিন্টারের কালি ও ইন্টারনেট যন্ত্রাংশ কেনার ক্ষেত্রে প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে। কেনা, পরিবহণ ও যন্ত্রাংশ মেরামতের ক্ষেত্রে ব্যয়ের সর্বোচ্চ সিলিং এক লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া পরিবহণ স্বল্পতার ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনারের অনুমোদন সাপেক্ষে পরিবহণ ভাড়া বাবদ সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা ব্যয় করা যাবে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD