রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ১১:০৫ অপরাহ্ন




চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্কুলে ঘুস দিয়েও মিলছে না চাকরি

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:২৫ am
bribe Bribery তোহফা উৎকোচ বখশিশ নজরানা ঘুষ ঘুস অবৈধ লেনদেন মানি লন্ডারিং কালো অর্থ বেআইনি লেনদেন কালো টাকা ghus ঘুষ বা অবৈধ লেনদেন ঘুস
file pic

চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্কুলে ঘুস দেওয়ার পরও মিলছে না চাকরি। প্রধান শিক্ষক আর স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধেই উঠেছে ঘুসের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।

এ টাকার ভাগের অংশ গেছে সংসদ-সদস্যের পকেটেও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেশি টাকা নিয়ে অন্য প্রার্থীকে নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন। আর এক প্রার্থীর ঘুসের পুরো টাকা নিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া প্রধান শিক্ষকের ঘুস স্বীকারোক্তির অডিও এসেছে। ভাইরাল সেই মোবাইল অডিওকে নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। অডিওতে সংসদ-সদস্যসহ ঘুসের টাকার ভাগ কে কত নিয়েছেন, সে কথা বলছেন খোদ প্রধান শিক্ষক।

দিয়াড়-ধাইনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী-তিন পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ তিন পদের বিপরীতে অন্তত ৭/৮ জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোট অঙ্কের অর্থ।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে চাকরির কথা বলে আল আমিন নামে এক প্রতিবন্ধীর কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক তালেবুর রহামন আর সভাপতি মনিরুল ইসলাম হাতিয়ে নেন ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আল আমিনের বাবা কৃষক আব্দুল মতিন অভিযোগ করেন, আমার ছেলের নিয়োগের জন্য জমি বিক্রি করে সভাপতিকে ৭০ হাজার এবং প্রধান শিক্ষককে দিয়েছি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আল আমিনের মা বলেন, সভাপতি আর হেডমাস্টার আমার ছেলেকে চাকরিও দিচ্ছে না, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।

অফিস সহকারী পদের জন্য সজীব নামে এক প্রার্থী প্রধান শিক্ষককে টাকা দিয়েছেন। সজীব জানান, চাকরি দেওয়ার কথা বলে তালেবুর মাস্টার আমাদের কাছ থেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন চাকরিও দিচ্ছে না, টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।

তৌহিদুল ইসলাম বাবু, লিটন, সুজন আলীসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, টাকা ছাড়া স্কুলের সভাপতি আর হেডমাস্টার কাউকে নিয়োগ দেবে না। বাধ্য হয়ে ওই পরিবারগুলো চাকরির জন্য টাকা দিয়েছে। এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছে না আবার চাকরিও দিচ্ছে না।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম, বর্তমান ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন জানান, এ ঘটনায় আমরা সালিশ-বৈঠক করেছিলাম। হেডমাস্টার তালেবুর রহমান সজীবকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৩ লাখ ২০ টাকা নেওয়ার কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন এবং টাকা ফেরত দিতেও চেয়েছিলেন। কিন্ত পরে সেই টাকা তিনি ফেরত না দেওয়ায় বিচারকাজ সম্পন্ন হয়নি। এদিকে মোটা অঙ্কের অর্থ ঘুস নেওয়ার পরও চাকরি না দেওয়ায় লিখিত অভিযোগ করেছেন দুই চাকরিপ্রার্থীর অভিভাবক।

প্রধান শিক্ষক তালেবুর রহমান ঘুস নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এসব মিথ্যা-বানোয়াট, এগুলো ওদের ষড়যন্ত্র। অডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, রেকর্ডিংটি কার, এটি দেখতে হবে। পরে তিনি বলেন, এসব এডিট করে করা হয়েছে।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম নিজে টাকা গ্রহণের কথা অস্বীকার করে জানান, স্কুলের উন্নয়ন এবং আনুষঙ্গিক খরচের জন্য সব স্কুল, সব প্রতিষ্ঠানই টাকা নেয়, আমাদের স্কুল অনেক সমস্যায় জর্জরিত। অনেক টাকা লেনদেন হয়েছে, তবে সেটা স্কুলের স্বার্থে হয়নি।

ভুক্তভোগী আর স্থানীয়দের অভিযোগ, এ নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ জড়িত। টাকার ভাগ তাদেরও দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় নিয়োগ পরীক্ষা হেডমাস্টার আর সভাপতির সঙ্গে যোগসাজশ করে স্থগিত করেন শিক্ষা কর্মকর্তা।

এছাড়া গাড়ি ভাড়া বাবদ সেদিন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি ১০ হাজার টাকা ঘুস নিয়েছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করায় আমরা ফিরে আসি। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে আমি শুনেছি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করিনি।

গোবরাতলা ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপু টাকা নিয়ে লোক নিয়োগের সুপারিশের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সংসদ-সদস্য আব্দুল ওদুদ দাবী করেন, স্কুলের সভাপতি আর প্রধান শিক্ষককে তিনি চেনেন না। নিজেদের বাঁচাতে তারা তাকে জড়িয়ে এসব কথা বলতে পারেন।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD