রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডে (ডেসকো)। বিতরণ কোম্পানি দুটির বিদ্যুৎ বিল নিয়ে নতুন করে অভিযোগ তুলেছেন রাজধানীর বেশকিছু এলাকার গ্রাহক। ভুলভ্রান্তি ও ত্রুটিপূর্ণ বিলের অভিযোগ তুলে তারা বলছেন, ব্যবহারের তুলনায় অতিরিক্ত বিল আসছে তাদের। বিশেষ করে শীতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমলেও বিল এসেছে গ্রীষ্মের মতোই। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও বিল অনেক কম আসার নজিরও পাওয়া যাচ্ছে।
বিতরণ কোম্পানিগুলো পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করছে বলছে অভিযোগ গ্রাহকদের। এছাড়া রাজধানীর অনেক প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের মিটার নষ্ট হলেও তা মেরামত করা হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তারা। আর বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সিস্টেম লস কমাতে গ্রাহকের বিলে বাড়তি বোঝা যোগ করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে বিতরণকারী দুই কোম্পানির কর্মকর্তাদের বক্তব্য হলো এ ধরনের ‘দুর্ঘটনার’ সুযোগ এখন কম। তবে কারিগরি ত্রুটি বা মিটার কারচুপির কারণে কিছু ঘটলে সেটি সমাধানের সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিতরণ কোম্পানির অফিসে অভিযোগ দিতে হবে।
রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার ডিপিডিসির গ্রাহক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। জানুয়ারিতে ৩৩৪ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তার বিল এসেছে ৯ হাজার ৩১২ টাকা। আবার গত বছরের (২০২৩) অক্টোবরে ৫৮৮ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিল এসেছে ৫ হাজার ২০৯ টাকা। বিদ্যুৎ কম ব্যবহার করেও গত কয়েক মাস ধরে অব্যাহতভাবে বিল বেশি আসার কারণ তিনি জানেন না।
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের অভিযোগ, গত এক বছরে তিনি অতিরিক্ত কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী কেনেননি। আবার শীতের কারণে এসিও ছিল বন্ধ। যদিও গরমের তুলনায় শীতে তার বিল এসেছে অস্বাভাবিক রকমের বেশি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ কোম্পানি দুটির এমন অনেক গ্রাহক এখন বিদ্যুৎ বিল বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকরা আঞ্চলিক অফিসে গিয়ে সুনির্দিষ্ট জবাব পাচ্ছেন না। আবার সমস্যা সুরাহার বিষয়টিও আটকে থাকছে দীর্ঘদিন। এতে গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়ছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ডিপিডিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজধানীর বিতরণ এলাকায় অনেক গ্রাহকের বিলসংক্রান্ত তথ্যে সিস্টেম আপগ্রেডেশন করা হয়েছে। এগুলো অনেক ক্ষেত্রে ঠিকমতো কাজ না করলে বিল বেশি-কম হতে পারে। তবে এটি হওয়ার কথা নয়।’
আকস্মিকভাবে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে গেলে বিল বেশি হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটারের ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক বরাদ্দকৃত লোডের বাইরে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ নেই। তেমন কিছু হলে ওই গ্রাহকের মিটারে বার্তা পাঠাবে, নতুবা মিটারটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর বাইরে মিটারে কারচুপি হতে পারে। তবে এখন বিতরণ এলাকায় এ ধরনের সুযোগ অনেকটাই কমে এসেছে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ নোমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) মোরশেদ আলম খান বলেন, ‘বিল নিয়ে বিড়ম্বনার বিষয়টি আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এ রকম হওয়ার সুযোগ এখন কম। তবুও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সমাধান করা হবে।’
অতিরিক্ত বিলের পাশাপাশি রয়েছে বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিক রকমের কম আসার ঘটনাও। রাজধানীর আরেক বিতরণ কোম্পানি ডেসকোর আওতাধীন মিরপুর এলাকার এক গ্রাহকের জানুয়ারি মাসে ব্যবহারের জন্য বিদ্যুতের বিল এসেছে মাত্র ৩ টাকা। ওই মাসে ১২৬ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছিলেন তিনি। ওই বিলে দেখানো হয়েছে তার মোট বিল আসে ৭৭১ টাকা। সেখানে ৭৭০ টাকা সমন্বয় করে বিল আসে মাত্র ১ টাকা। এর সঙ্গে নানা চার্জ যুক্ত করে তা দাঁড়ায় ৩ টাকায়। আকস্মিকভাবে এত অল্প টাকার বিল পেয়ে কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে পড়েন ওই গ্রাহক।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডেসকোর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিল কম এলে সেটি সমন্বয়জনিত কারণে হতে পারে। এখানে প্রকৃত ঘটনা আসলে কী ঘটেছে সেটি বিলিং সেকশন থেকে জানতে হবে।’
এর আগে করোনা মহামারীর মধ্যে এমন ভুলভ্রান্তি ভরা বিলের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছিল ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সাধারণ মানুষ। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে গ্রাহকভেদে স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে ১০ গুণ বেশি বিল আসার ঘটনা ঘটে। সে সময় পাঁচ লাখ গ্রাহক অযৌক্তিক বিল পেয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গড়পড়তা বিল তৈরি করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। [বণিক বার্তা]