বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৪ অপরাহ্ন




পিঠা-পুলি বানাতে ডেকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ, উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ৫:০০ pm
female Women Homosexuality sexual sex Rape eye chok couple husband wife woman female partner marriage divorce widow spouse bride married relationship groom bridegroom ধর্ষণ রেপ যৌন নিগ্রহ নির্যাতন সমলিঙ্গ পুরুষ নারী উভকামী রুপান্তরিত লিঙ্গ সমকামিতা চোখ কপাল মহিলা মেয়ে মানুষ নারী সুন্দরী স্মার্ট আবেদনময়ী শিশু বিয়ে-শাদী বিয়ে শাদী নিকাহ তালাক নিবন্ধন রেজিস্ট্রার কাজী লাইসেন্স মুসলিম বিবাহ মুসলিম ম্যারেজেস অ্যান্ড ডিভোর্সেস রেজিস্ট্রেশন বর মহিলা বউ স্বামী স্ত্রী স্বামী-স্ত্রী দাম্পত্য দম্পতি H-W বিয়ে
file pic

সুন্দরবন অঞ্চলের সন্দেশখালি দ্বীপে পৌঁছতে যে কালিন্দী নদী পার হতে হয়, সেটা বাংলাদেশ থেকে ‘অনুপ্রবেশের’ পরিচিত পথ। নদীর এপাড়ে যেখান থেকে নৌকায় চড়তে হয় সন্দেশখালি যেতে, সেই ধামাখালির ঘাটেই বেশ কয়েক বছর আগে কথা বলেছিলাম বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিএসএফের হাতে ধরা পড়া বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষের সাথে।

সেই সন্ধ্যায় একসঙ্গে তিন নৌকা ভর্তি দেড়শর বেশি কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

যে ঘাটে দাঁড়িয়ে সেদিন ওই বাংলাদেশি নারী-পুরুষদের সঙ্গে কথা বলেছিল বিবিসি, সেখান থেকেই চোখে পড়ছিল নদীর অপর পাড়ের সন্দেশখালি।

আপাত শান্ত এই দ্বীপটিই এখন ভারতের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নামগুলোর অন্যতম। জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে চলে আসার পেছনে আছে কয়েক সপ্তাহ আগে এই দ্বীপে নারীদের প্রবল বিক্ষোভ।

লাঠি-ঝাঁটা নিয়ে তারা সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। দাবি তুলেছিলেন শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরা, উত্তর সর্দারের গ্রেপ্তারের।

এই নারীদের অভিযোগ ছিল যে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় এই নেতা আর তাদের সঙ্গী-সাথীরা এলাকার মানুষের ওপরে নির্যাতন চালিয়ে আসছেন।

অভিযোগ ওঠে যৌন নির্যাতনের এবং জোর করে চাষের জমি দখল করে নেওয়ার। শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দার গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে, আর শাহজাহান শেখ পলাতক। তাই এসব অভিযোগ নিয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

পিঠা-পুলি বানানোর ডাক পড়ত
যারা এসব অভিযোগ তুলছেন, কোথায় পাব তাদের? সন্দেশখালি বাজারের এক দোকানীকে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, “সন্দেশখালির প্রায় সবাই অভিযোগ তুলছেন। যে কোনও পাড়ায় চলে যান, শুনতে পাবেন কী নির্যাতন চলেছে কয়েক বছর ধরে।“

ব্যাটারি রিকশায় চেপে কিছু দূর গিয়ে চোখে পড়ল কয়েকজন নারী-পুরুষ রাস্তার ধারে বাঁশ কাটছেন। সঙ্গে ক্যামেরা দেখে তারা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না কথা বলতে।

এক নারী বললেন, “সংবাদমাধ্যমে আমাদের মুখ দেখে ফেললেই হামলার ভয় আছে। এর আগে যারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছে, তাদের ওপরে হামলা হয়েছে, হুমকি আসছে।“ তবে তাদের মধ্যে একজন ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢেকে কথা বলতে রাজি হলেন।

“মেয়েদেরকে পিঠা-পুলি করতে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কি মা বোন নেই বাড়িতে? তাদের বাড়িতে কি পিঠা-পুলি কেউ করে না? কেন সুন্দরী-সুন্দরী মা বোনদের নিয়ে গিয়ে পিঠে পুলি করানো হতো?”

কখনও পিঠা-পুলি করানোর নাম করে, কখনও মাংস ভাতের পিকনিকে রান্না করার জন্য, কখনও আবার দলের মিটিং আছে বলে ডেকে নেওয়া হত। সেসব ডাক আসার কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না।

কিছুক্ষণ পরে অন্য এক এলাকার এক নারী বলছিলেন, “সন্ধ্যা সাতটাতেও ডাকছে আবার রাত নয়টা, ১০টা, ১১টাতেও ডাকছে। টিএমসি পার্টি অফিসে মিটিংয়ে যেতে বললেই যেতে হবে। যারা যেত না, পরের দিন মারধর করা হতো পরিবারের পুরুষদের।“

একজন পুরুষ ক্যামেরার দিকে পিছন ফিরে বলছিলেন, “মনে কর যেমন আজকে মিটিং আছে। ওদের, টিএমসির যে ঘর আছে সেখানে নিয়ে যাবে। ভাল দেখতে যেসব মহিলা, কে কম বয়সী মেয়ে, তাদের বেছে বেছে ভেতরে নিয়ে যাবে। বাচ্চা বা বয়স্ক মেয়েদের বাইরে বসিয়ে রাখত। ভেতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিত। ভেতরে কী হত বলতে পারব না।”

ভেতরে কী করা হতো নারীদের সঙ্গে, সেই প্রশ্নে প্রায় সকলেই বলছিলেন, ভেতরে কী করেছে, সেটা জিজ্ঞেস করলে মেয়েরা বলে লজ্জার কথা কী আর বলবো।

“সেখানে মেয়েদের সঙ্গে যেসব খারাপ কাজ, সেসব করা হত। এই অত্যাচারের কথা কী কোনও মেয়ে নিজ মুখে বলতে পারে? পুলিশের কাছে গেলে তারা আবার ওই দাদাদের কাছেই গিয়ে মিটিয়ে নিতে বলত। এখন দেওয়ালে পিঠ গেছে আমাদের, তাই পথে নামতে বাধ্য হয়েছি,” জানাচ্ছিলেন আরেক গৃহবধূ।

সন্দেশখালির নানা গ্রামে ঘুরে এমন কোনও নারীর সঙ্গে আমরা কথা বলতে পারিনি, যিনি নিজে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নিজে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এরকম কোনও নারীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেনি বিবিসি।

গণধর্ষণের অভিযোগ
প্রথম দিকে অভিযোগের সত্যতা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল সামাজিক মাধ্যমের এই যুগে এতোদিন ধরে নারীদের ওপরে অত্যাচার হলো, কোথাও কোনওভাবে সেটা বাইরে বের হলো না কেন ?

সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বিধানসভায় বলেছিলেন যে ওই অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর সংগঠন আছে।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায় “ওই এলাকায় আরএসএসের সংগঠন আছে। ওখানে সাত-আট বছর আগে দাঙ্গাও হয়েছিল। ওই জায়গাটা দাঙ্গার জন্য সংবেদনশীল। সরস্বতী পুজোর দিন আমরা কড়া হাতে পরিস্থিতি সামলিয়েছি। না হলে অন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল।“

তবে মুখ্যমন্ত্রী গোটা ঘটনার পিছনে যে আরএসএস যোগ থাকার কথা বলছেন, সেই ব্যাপারে আরএসএসের মুখপাত্র ড. জিষ্ণু বসু পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “ওখানে যদি সঙ্ঘের খুব শক্তিশালী সংগঠন থাকত তাহলে কী এই অমানবিক কাজ করতে পারত?

তবে অবশেষে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন দুই নারী। জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা এসেছিলেন সন্দেশখালিতে। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, অন্তত দুজন নারী ধর্ষিতা হওয়ার ঘটনা।

“সন্দেশখালিতে অনেক নারীকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে। দুটি ধর্ষণের ঘটনা তো আমি নিজেই পেয়েছি। একটি ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ তো আজ আমি দাঁড়িয়ে থেকে দায়ের করালাম,” বলছিলেন রেখা শর্মা।

এর আগে অন্য এক নারী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দী দিয়ে জানিয়েছিলেন যে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পুলিশ আগে এই অভিযোগে উত্তম সর্দার আর তারপরে শিবু হাজরাকে গ্রেপ্তার করেছে।

কে এই শাহজাহান, শিবু, উত্তম?
শাহজাহান শেখ আর শিব প্রসাদ হাজরা দুজনেই উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের সদস্য। মি. শেখ জেলা পরিষদের মৎস্য এবং পশুপালন বিভাগের প্রধান। দুজনেই সন্দেশখালির দুটি উন্নয়ন ব্লকে তৃণমূল কংগ্রেস দলের ব্লক সভাপতি। উত্তম সর্দার এদের সহযোগী।

তবে এলাকার একচ্ছত্র নেতা শাহজাহান শেখ। একসময়ে ছিলেন সিপিআইএম দলে। বামফ্রন্ট জমানার শেষ দিকে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে থাকেন, পরে সরাসরি দলে যোগ দেন।

স্থানীয় মানুষরা জানাচ্ছিলেন, একসময়ে মাছের ভেড়ির শ্রমিক বা ভ্যান গাড়ির চালক শাহজাহান শেখ এখন তিনটে প্রাসাদোপম বাড়ি, ১৭ টা গাড়ি, বহু মাছের ভেড়ি, দুটো ইঁট ভাটা সহ বিপুল সম্পত্তির মালিক।

তার নাম সংবাদমাধ্যমে প্রথমবার উঠে আসে এবছর জানুয়ারিতে। রাজ্যের রেশন দুর্নীতির যে তদন্তে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্য মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে পাঁচই জানুয়ারি কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল শাহজাহান শেখের বাড়িতে।

সেদিন কয়েকশে নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে ইডির কর্মকর্তা, তাদের সঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী, সংবাদমাধ্যম – সবাইকে ব্যাপক মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। তারপর থেকে মি. শেখ নিখোঁজ।

চাষের জমিতে নোনা জল
সম্পত্তির অনেকটাই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন মি. শেখ বা তার ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।

সন্দেশখালির মানুষ জমি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ এখন লিখিতভাবে গণ পিটিশন করে জানিয়েছেন সরকারের কাছে।

যেসব মানুষের জমি জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে, সেগুলি তদন্ত করে দেখার জন্য সরকারি কর্মকর্তারা এখন সন্দেশখালিতে ঘুরছেন।

এরকমই একটা পাড়ায় আমাদের দেখা হয়েছিল সরকারি দলটির সঙ্গে। সেখানে অনেক মানুষ জমির দলিল হাতে এসেছিলেন।

এমনই একজন প্রবীণ উর্মিলা দাস।

তিনি বলছিলেন, “৩৩ শতক জমি ছিল, বছরে তিন বার ধান হতো। দুবছর আগে শিবু হাজরা নোনা জল ঢুকিয়ে দিয়ে জমি নিয়ে নেয়। সেখানে মাছের ভেড়ি করেছে। এদিকে একবছর আমাদের কিছু টাকা দিয়েছিল লিজ নেওয়ার বদলে, তার পর থেকে আর কিছু দেয় না।”

“ওইটুকু জমিই ছিল আমার। এখন খেটে খেতে হয়। টাকা চাইতে গেলে হেনস্থা করত ওরা। তাই সরকারের কাছে আবেদন করেছি আমাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হোক সেখানে আবারও চাষ করব আমরা।

কালিন্দী নদীর ধারের বাঁধের ওপর দিয়ে যেতে যেতে এক গ্রামবাসী বলছিলেন, এইখান দিয়ে নদীর নোনা জল চাষের ক্ষেতে ঢুকিয়ে দিত শিবু হাজরা। গ্রামের ফুটবল মাঠও দখল করে নিয়েছে।

রাজনৈতিক দোষারোপ
তৃণমূল কংগ্রেস খুবই সংগঠিত একটা দল। একদিকে যেমন তাদের পাকাপোক্ত সংগঠন আছে, যার মাধ্যমে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সব খবর পৌঁছে যায়, অন্যদিকে আছে পুলিশ, গোয়েন্দা দপ্তর।

দীর্ঘদিন ধরে কিছু তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সন্দেশখালির মানুষের ওপরে নির্যাতন চালিয়ে গেলেন আর সেই খবর শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছল না কেন? আর পৌঁছে থাকলেও দল কেন ব্যবস্থা নিল না?

এ প্রশ্ন করা হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীকে।

“দশ বছর ধরে নাকি এই অত্যাচার হচ্ছে। একটা মানুষ একটা ফেসবুক পোস্ট করলেন না, একটা কোনও অভিযোগ দায়ের করলেন না? সেখানে দশ বছর আগে বিধায়ক ছিলেন যে সিপিএম নেতা সেই নিরাপদ বাবু অথবা বিজেপি নেতা বিকাশ সিং তারাও তো এফআইআর করতে পারতেন! কেন এতদিন অভিযোগগুলো সামনে আসেনি?” এসব প্রশ্ন তুলছেন মি. চক্রবর্তী।

“নিশ্চিতভাবে যদি কোনও ঘটনা ঘটে থাকে, বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়ে থাকে, কারও জমি দখল হয়ে থাকে সেসব নিশ্চিতভাবে জানানোর জায়গা রয়েছে এবং তার তদন্ত পুলিশ করবে। আর সেটা করছে বলেই কিন্তু গ্রেপ্তার হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারাও গ্রেপ্তার হয়েছেন,” বলছিলেন মি. চক্রবর্তী।

তিনি আরও বলছিলেন, “যত ভোট আসবে, ততই সাম্প্রদায়িক অশান্তি বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে, বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করা হবে। প্রতিটা নির্বাচনে এটাই করা হয়। এটাই বিজেপির চরিত্র।“

সন্দেশখালির বাসিন্দারা অবশ্য বলছিলেন যে তারা তৃণমূল কংগ্রেসেরই সমর্থক, মমতা ব্যানার্জী দলকেই ভোট দেন।

যদিও এখন পুরো সন্দেশখালি জুড়ে গেরুয়া পতাকা উড়ছে। সেগুলো যে সদ্য লাগানো হয়েছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। বেশ কিছু বাড়িতে, কিছুটা আড়াল করে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখাও চোখে পড়েছে। বিজেপি বা আরএসএসের নাম অবশ্য পতাকাতেও নেই, দেওয়ালেও কোথাও লেখা নেই।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সন্দেশখালির ইস্যুটিকে নিয়ে গেছে জাতীয় পর্যায়ে। প্রতিদিনই দলের কোনও বিধায়ক অথবা কেন্দ্রীয় সদস্য সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, আর পুলিশের বাধা পাচ্ছেন।

দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল তর্কাতর্কি হচ্ছে আর সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ছে জাতীয় টেলিভিশনের পর্দায়।

দলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র কেয়া ঘোষ অবশ্য বলছেন সন্দেশখালির নির্যাতনের ঘটনা দেখিয়ে তারা রাজনীতি করতে চান না, ভোটেও জিততে চান না।

“সন্দেশখালির মেয়েদের যন্ত্রণার কথা দেশের কাছে পৌছিয়ে দিয়ে ভোটে জিততে হবে না। আমরা এখানকার মেয়েদের কথা তুলে ধরেছি সারা দেশের সামনে, কারণ যে রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, যিনি বলেন বাংলা তার মেয়েকেই চায় তিনি কিন্তু বাংলার মেয়েদের দুর্দশার কথা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন,” বলছিলেন কেয়া ঘোষ।

তার কথায়, “তারা নিজেরা বলছেন যে তারা তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়েছি, তাতেও তাদের যদি পার্টি অফিসে ডেকে এনে পিঠে বানানোর নাম করে মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহার করা হয়, এর থেকে লজ্জার কী আছে?”

একদিকে জাতীয় স্তরের গণমাধ্যমের প্রচার, অন্যদিকে বিজেপির অতি শক্তিশালী আইটি সেলের নিয়মিত সন্দেশখালি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বজিত ভট্টাচার্যের কথায়, গত প্রায় দুবছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের একের পর এক নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক গ্রেপ্তার হচ্ছেন নানা দুর্নীতির অভিযোগে। সব ক্ষেত্রেই দল অভিযোগ তুলছিল যে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করে বিজেপি এগুলো করাচ্ছে। কিন্তু এবার স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এসেছে সাধারণ মানুষের দিক থেকে।

“তাই তৃণমূল কংগ্রেসের এটা খুবই বড় চাপ। যেভাবে একের পর এক কমিশন আসছে – জাতীয় মহিলা কমিশন থেকে আরম্ভ করে পর পর আসছেন এখানে এবং তারা বলছেন যে এখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া উচিত। তৃণমূল কংগ্রেস, আমার মতে এই প্রথম এমন একটা শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের বিরোধিতায় নেমেছে যেটা এর আগে তারা কিন্তু কখনও মুখোমুখি হইনি,” বলছিলেন মি. ভট্টাচার্য।

চাপে পড়ার পরে ড্যামেজ কন্ট্রোলে যে নেমেছে দল এবং প্রশাসন, তার কিছু নিদর্শন আমরা দেখে এসেছি সন্দেশখালিতে।

পাড়ায় পাড়ায় নারী পুরুষদের ‘বোঝানো’ হচ্ছে, এলাকায় সদ্য ঘুরে গেছেন উত্তর ২৪ পরগণার দুই শক্তিশালী মন্ত্রী।

আবার জমি দখলের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করতে গ্রামে ঘুরছেন সরকারী কর্মীরা। পুলিশী পাহারা বসেছে গ্রামে গ্রামে। স্বয়ং পুলিশ মহানির্দেশক এসে এক রাত কাটিয়ে গেছেন, গোটা দ্বীপ ঘুরেছেন ব্যাটারি চালিত রিকশায় চেপে।

আর শুক্রবার সন্দেশখালিতে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পরে, তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় এক নেতা আবারও মারধর খাওয়ার পরে সেখানে দুদিনের মধ্যে আবারও দৌড়ে গেছেন পুলিশের মহানির্দেশক।

তৃণমূল কংগ্রেস কি এই চাপ সামলাতে পারবে? নাকি ভোটের যন্ত্রে সন্দেশখালির ফায়দা তুলবে বিজেপি? এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে নির্বাচনের পরে।

বিবিসি




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD