যৌন হয়রানির অভিযোগে থাকা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে চাকরিচ্যুত না করলে কঠোর আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অভিভাবকরা।
রোববার সন্ধ্যা ৬ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ হুঁশিয়ার উচ্চারণ করা হয়।
মুরাদ হোসেন সরকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর ক্যাম্পাসের দিবা শাখার গণিতের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। ২০১০ সাল থেকে তিনি এখানে পড়াচ্ছেন। পাশাপাশি আজিমপুর এলাকার একটি ফ্ল্যাটে কোচিং সেন্টার খুলে ছাত্রী পড়াতেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক ‘ভুক্তভোগী’র অভিভাবক বলেন, “এই শিক্ষক আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভয়ে মুখ খুলতো না। এমন কাজগুলো তিনি কোচিং ক্লাসের শেষে করতেন। উনি সবসময় বলতন, ‘আমি তোমাদের বাবার মতো’। বাবার মতো বলে বলে ম্যানিপুলেট করতো।”
গত ৭ ফেব্রুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়টি নিয়ে একটি সংবাদপত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করলে শোরগোল পড়ে যায়।
এরপর শনিবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মুরাদ হোসেন সরকারকে আজিমপুরের ক্যাম্পাসের দিবা শাখা থেকে প্রত্যাহার করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
এছাড়া আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ বেগমকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। ওই কমিটির সঙ্গে সোমবার বৈঠক করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন আজিমপুর ক্যাম্পাসের দিবা শাখার প্রধান শাবনাজ সনিয়া কামাল।
তার কথার সূত্র ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আমরা চিন্তিত আগামীকালের রিপোর্ট শতভাগ আমাদের পক্ষে আসবে কিনা না। তবুও আমরা অপেক্ষা করছি। কাল কি সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ তা দেখার জন্য।
“আমাদের আজকের মানববন্ধনও স্থগিত করেছি। কাল যদি আমরা ন্যায় বিচার না পাই- তাহলে আমরা প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে যাব ও আইনি প্রক্রিয়ায় আগাব। স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি লিগ্যাল অ্যাকশনে না যায়, আমরা নিজেরাই অ্যাকশনে যাব।”
মুরাদ হোসেন সরকারকে চাকরিচ্যুত করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
দুপুর ১২টার দিকে লালবাগের পিলখানা রোডে ঢাকার নামী এ স্কুলের আজিমপুর শাখার সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন শুরু করেন।
পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা বেলা ৩টার দিকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। পরে চারজন ‘ভুক্তভোগী’র অভিভাবকসহ কয়েকজন সংবাদ সম্মেলন করেন।
সেখানে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অভিযোগ ওঠা শিক্ষকের পক্ষে কিছু শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে কেন?
জবাবে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “মুরাদ হোসেনের পক্ষেও কিছু শিক্ষার্থী কথা বলছে। উনি সব শিক্ষার্থীদের সাথে তো এমন করেনি। তো যাদের সাথে করেনি তারা তো উনাকে ভাল হিসেবেই চেনে। তাই তারা মানতে পারছে না।
“তারা তো বাবার মতোই দেখে, যারা স্যারকে ভাল জানেন এবং এই রূপটি দেখেননি- তারা স্যারের পক্ষেই আছেন। আর আসল রূপ যারা দেখেছে, তারা তো ভাল করেই চিনে গেছে।”