ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির নাগরিক বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশে বিপুল সম্পদ গড়ার পাশাপাশি বিদেশেও অর্থ পাচার করেছেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ময়মনসিংহ সদর ও ভালুকা এবং বিদেশে থাকা সম্পদ মিলিয়ে এমএ ওয়াহেদের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। অবৈধ সম্পদের এমন পাহাড় গড়েও তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এ বিষয়ে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা ড. সুফি সাগর সামস বলেন, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এমএ ওয়াহেদ দেশে ও বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। দেশ ও জাতির সুরক্ষায় সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তার যাবতীয় অবৈধ সম্পদের তথ্য দিয়ে অভিযোগ করেছি।
দুদক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে শাস্তি নিশ্চিত করলে অবৈধ সম্পদশালীদের কাছে এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। জানতে চাইলে এমএ ওয়াহেদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। আমার সব সম্পদ বৈধ। আমি বিদেশে ব্যবসা করি সেখানে সম্পদ থাকতেই পারে তবে আমি দেশ থেকে এক পয়সা বিদেশে নিয়েছি সেটার প্রমাণ দেখাক, আমি অভিযোগকারীকে পুরস্কার দেব।
দেশে অঢেল সম্পদ : অনুসন্ধানে জানা যায়, এমএ ওয়াহেদ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ময়মনসিংহ জেলা শাখায় উপ-কর কমিশনার কার্যালয়ে (সার্কেল-২) পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ৯৪৬ টাকার কর দিয়েছেন। অথচ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১০ কাঠা জমির ওপর বহুতল ভবনসহ (বাড়ি নং-৯, রোড নং-২, চান মিয়া হাউজিং) তিনটি বাড়ি রয়েছে। তার স্ত্রীর নামেও এই এলাকায় রয়েছে শতকোটি টাকার সম্পত্তি। ভালুকা বাজারে ২৯ শতাংশ জমির ওপর ১৪তলা বিশিষ্ট বিশাল এক মার্কেট রয়েছে। ভালুকার আঙ্গারগাড়ায় তিন বিঘা জমির ওপর সুইমিংপুলসহ একটি বাড়ি, পাঁচ বিঘা জমির ওপর নির্মাণাধীন একটি বাড়ি, আঙ্গারগাড়া বাজারে দুটি পাঁচতলা ভবন ও একটি তিনতলা বাড়ি রয়েছে। ময়মনসিংহ শহরে কৃষ্টপুর এলাকায় পাঁচতলা ভবন রয়েছে। এছাড়া নামে ও বেনামে প্রায় হাজার বিঘা সম্পত্তি রয়েছে।
বিদেশে গড়া সম্পদের পাহাড় : দেশ থেকে অর্থ পাচার করে এমএ ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনিতে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে দেশ বেশ এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (পি.ও. বক্স ২৬২, বোরোকো, ন্যাশনাল ক্যাডর্টাএল ডিস্ট্রিক্ট, পাপুয়া নিউগিনি)। গর্ডনস-সেন্ট্রাল সুপারমার্কেটে ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, সার্ভিস স্টেশন, ২ এক্স বেকারি, ২ এক্স ফাস্ট ফুড। গর্ডনস-গর্ডন হোলস এবং ডেলিভারি ডিপো। দেশ দেশ পাইকারি ও খুচরা, দ্রুত খাদ্য, বেকারি এবং ফ্রিজার ডিপার্টমেন্ট স্টোর। লয়েস রোড, কোনেডোবু, পাইকারি ও খুচরা, ফাস্ট ফুড, বেকারি এবং ফ্রিজার ডিপার্টমেন্ট স্টোর। কৌরা ওয়ে, টোকাররা-ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, ফাস্ট ফুড এবং বেকারি। টোকাররা-ফ্রিজার, কনটেইনার ইয়ার্ড, পরিবহণ, লজিস্টিক এবং কর্মশালা। সোগেরি রোডে নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পোলট্রি মাংস প্রক্রিয়াকরণ, ফিড মিল, সার প্যাকেজিং, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, এগ্রো-সুপার মার্কেট, সবজি ও ফল চাষ এবং মাছ চাষসহ কৃষিকাজ। সরকারের অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে এসব সম্পদ গড়েছেন তিনি।
অবৈধ নাগরিক ওয়াহিদ : অনুসন্ধানে জানা যায়, এমএ ওয়াহেদ বাংলাদেশের একজন অবৈধ নাগরিক। তবে জন্মসূত্রে তিনি একজন বাংলাদেশি। তিনি ১৯৬৬ সালের ১২ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার আঙ্গারগাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৮৬৭২৩৬৯৫৫৩। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর এ-০৩৩০৭৬৩২।
বাংলাদেশি নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তিনি পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। পাপুয়া নিউগিনির পাসপোর্ট নম্বর ই-২২৯৫২৩। এতে করে তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গত ১২ মার্চ প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বলবৎ আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের কোনো নাগরিক মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, আলজেরিয়া, সুদান, মরক্কো, ঘানা, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, তিউনিসিয়া, সিয়েরা লিয়ন, লিবিয়া, কক্সেগা, লাইবেরিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, গাম্বিয়া, বতসোয়ানা, মরিশাস, বধাজিল, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, আর্জেন্টিনা, পেরু, ইকুয়েডর, চিলি, উরুগুয়ে, গায়ানা, প্যারাগুয়ে, কিউবা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বাহামা, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ডমিনিকা, সেন্ট লুসিয়া, বার্বাডোস, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইন, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস অথবা ফিজির নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও ওই দেশের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য পঠিত শপথ বাক্যে যদি বাংলাদেশের প্রতি আনুগত প্রত্যাহারের শপথ না থাকে, তাহলে তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। উক্ত দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হবে না।(যুগান্তর)