দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন জমে উঠেছে। ফোরাম এবং সম্মিলিত পরিষদ নামে দুটি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। উভয় প্যানেলই তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে।
এবারের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেহা ডিজাইনের চেয়ারম্যান এবং বিজিএমইএর বতর্মান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি। অন্যদিকে, ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুরমা গার্মেন্টের পরিচালক ফয়সাল সামাদ। তিনি বর্তমান কমিটির একজন পরিচালক। এর আগে একবার সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দুই প্যানেল লিডারের মধ্য থেকেই একজন সভাপতি নির্বাচিত হবেন। আগামী ৯ মার্চ পরিচালক পদে ভোট গ্রহণ।
সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার এস এম মান্নান কচি বলেন, পোশাক খাতের সামনে অনেক কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ সামনে রেখেই নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে দুটি পক্ষ হলেও জিততে পারলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন। জানতে চাইলে ফয়সাল সামাদ সমকালকে বলেন, বিজিএমইএ নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে।
সংগঠনের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে ৩৫টি পরিচালক পদে দুই প্যানেলের ৭০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচিত পরিচালকরা ১৯ মার্চ সংগঠনের সভাপতি এবং প্রথম সহসভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি এবং দু’জন সহসভাপতি নির্বাচন করবেন। কোনো বিরতি ছাড়া সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। ঢাকা অঞ্চলের ভোট গ্রহণ হবে রাজধানীর উত্তরায় সংগঠনের নিজস্ব ভবনে। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভোট গ্রহণ হবে খুলশীর স্থানীয় অফিসে। গণনা শেষে ওই দিনই প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হবে। এবারের নির্বাচনে ভোটার ২ হাজার ৪৯৮। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩২। চট্টগ্রামে ৪৬৪ জন।
পরিচালক নির্বাচন চূড়ান্ত হওয়ার পর সংগঠনের সভাপতি এবং প্রথম সহসভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি এবং দু’জন সহসভাপতি নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়া হবে। বাছাই শেষে ১৯ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। বিজিএমইএর বিগত নির্বাচনগুলোতে সাধারণত ওই দিনই নেতা নির্বাচন চূড়ান্ত হয়ে থাকে। অবশ্য, নেতা নির্বাচন নিয়ে আপত্তি থাকলে আপিলের সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও আপিল নিষ্পত্তির পর ২৮ মার্চ চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচিত নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
স্মার্ট এবং টেকসই পোশাক খাত নির্মাণসহ এ খাতের উন্নয়নে ১৫ দফা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সম্মিলিত পরিষদের পক্ষ থেকে। পরিষদের অন্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে– পোশাক খাতের ব্যবসা পরিচালনা কার্যক্রম আরও সহজ করা, রাজস্ব-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, শুল্ক, আয়কর, ভ্যাট, নগদ সহায়তা-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং ব্যাংক ও আর্থিক সেবা-সংক্রান্ত উদ্যোগ গ্রহণ। এ ছাড়া পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ, পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি উন্নয়ন, মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের কর্মদক্ষতা উন্নয়ন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের জন্য প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা ও আরএসসি-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাদের।
স্বচ্ছ বিজিএমইএর প্রতিশ্রুতি ফোরামের
স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএকে গড়ে তোলাসহ ২৫ দফার ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে ফোরামের পক্ষ থেকে। তারা বলছেন, বিজিএমইএকে কারখানা মালিকদের একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে, যাতে সব কারখানার মালিকদের ন্যায্য দাবি ক্রেতা, সরকার ও অন্য অংশীজনের কাছে পৌঁছানো যায়। ফোরামের অন্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে– স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ ও জিএসপি প্লাসের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা এবং সরকারের সঙ্গে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি ও সহনশীল সমঝোতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে। পোশাকশিল্পের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন তারা, যাতে করে সরকার জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ছাড়া পণ্যে বৈচিত্র্যকরণ ও নতুন বাজার সম্প্রসারণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের সব দূতাবাসকে কাজে লাগানো হবে বলেও জানানো হয়। পাশাপাশি উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা ও চলমান প্রণোদনাগুলো ২০২৬ পর্যন্ত বলবৎ রাখার ব্যবস্থা করা হবে।