দেশে প্রথমবারের মতো শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে ধুঁকতে থাকা পদ্মা ব্যাংক। সোমবার বেসরকারি খাতের এই দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে মার্জারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই খবরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পদ্মা ব্যাংকের গ্রাহকরা। সরজমিন ব্যাংকটির মিরপুর, ওয়েস্ট মণিপুর ও কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ব্রাঞ্চ ঘুরে দেখা যায়, গ্রাহকরা টাকা জমা দেয়ার চেয়ে উত্তোলন করছেন বেশি।
কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ শাখায় নিজের আমানতের খোঁজ নিতে এসেছিলেন একজন গ্রাহক। গতকাল দুপুরে কথা বলার সময় তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। বলেন, এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের একীভূত হওয়ার খবর আমাকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। এজন্য সব টাকা উঠাতে এসেছি। তবে কোনো সমস্যা হবে না বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। তবুও ভয়ের মধ্যে আছি। এদিকে অন্যান্য সময়ের চেয়ে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ বেড়েছে জানিয়ে মিরপুর ব্রাঞ্চের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধান মো. রাইজুর রহমান বলেন, চলতি সপ্তাহে গ্রাহকরা ১ কোটিরও বেশি টাকা উত্তোলন করেছে।
অন্য সময় সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। আমাদের শাখায় ২৭ লাখ টাকার মতো নেগেটিভ গ্রোথ হয়েছে। তবে ঈদের মৌসুমে সব সময়ই নেগেটিভ গ্রোথ থাকে। এই সময় বিভিন্ন কাজে মানুষ টাকা উত্তোলন করেন। তিনি বলেন, গ্রাহকরা শুধু যে টাকা উত্তোলনই করছে তা নয়। অনেকে টাকা জমাও দিচ্ছে। গতকালও আমাদের ব্রাঞ্চে কয়েকজন নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছে। সেইসঙ্গে এফডিআর ও ডিপিএসের গ্রাহকও রয়েছেন।
আতঙ্কিত অনেক গ্রাহক ব্যাংকের পরিস্থিতি জানতে ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করছে বলে জানান ওয়েস্ট মণিপুর সাব-ব্রাঞ্চের এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। বলেন, আমাদের ব্রাঞ্চের লেনদেন স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল ৩ লাখ টাকা নেগেটিভ গ্রোথ ছিল। এটা সাধারণ সময়েও হয়। এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের একীভূত হওয়ার খবর শুনে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাদেরকে বলছি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমানত সুরক্ষিত আছে। কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ব্রাঞ্চের প্রধান কামরুল হাসান ফয়সাল জানান, তার শাখায়ও কিছুটা বেশি টাকা উত্তোলন হচ্ছে। তবে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংকের একীভূত হওয়ার জন্য এমন হচ্ছে, না কি ঈদের জন্য হচ্ছে- সেটি বলতে পারছেন না তিনি। কামরুল হাসান বলেন, আমাদের ব্রাঞ্চে লেনদেন স্বাভাবিক রয়েছে। কিছুটা বেশি টাকা উত্তোলন হচ্ছে ঠিক। কিন্তু ঈদের সময় এমন লেনদেন প্রতিবারই হয়। ঈদের কারণেও এই লেনদেন হতে পারে। তবে অনেকে টাকা জমাও দিচ্ছে। আমার ব্রাঞ্চের গ্রাহকরা আতঙ্কগ্রস্ত নয়।
গতকাল বেলা দেড়টার দিকে মণিপুর ব্রাঞ্চে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কোনো গ্রাহক নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো গ্রাহককে আসতে দেখা যায়নি। দুপুরে মিরপুর শাখায় গিয়েও এমন চিত্র দেখা যায়। সেখানে অবস্থানকালে মাত্র একজন গ্রাহককে আসতে দেখা গেছে। তিনি টাকা উত্তোলন করতে এসেছিলেন। ওই শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমাদের শাখায় আগের চেয়ে টাকা জমার পরিমাণ কমে গেছে। এ কারণে গ্রাহকের ভিড়ও কম। ২০১৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি দ্য ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। এ রকম অবস্থায় শরিয়াহভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পদ্মা। এর ফলে ব্যাংকের তালিকা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছে পদ্মা ব্যাংকের নাম। সাবেক ফারমার্স ব্যাংকে অনিয়মের পর জেলে আছেন নির্বাহী কমিটির তৎকালীন চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী এবং তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতী। গত বছর অক্টোবরে ১৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তাদের ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।