আজ ১১ চৈত্র। সোমবার। চলছে বসন্তকাল। শীত বিদায় নিয়েছে অনেক আগেই। সাধারণত বছরের এই সময়টাতে প্রচণ্ড রোদ ও গরমে অস্থির থাকে চারপাশ। তবে এবার যাচ্ছেই না শীতের আমেজ। এখনও দেশের উত্তরাঞ্চলে যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে, তাতে এটিকে শীতের আবহাওয়া বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে সেটিকে শীতের আবহাওয়া বলে। দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলার তাপমাত্রা ২০-এর নিচে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বছরের এ সময়টাতে গরম থাকার কথা থাকলেও এবার আবহাওয়া অস্বাভাবিক। প্রতি বছর এই সময়ে দেশজুড়ে বৃষ্টি এবং বজ্রসহ শিলাবৃষ্টির সঙ্গে তাপমাত্রা প্রচণ্ড গরম থাকে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চল হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় তাপমাত্রা অন্য এলাকার চাইতে একটু কমই থাকে।
আবহাওয়াবিদরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন ঘটছে বলে দাবি করছেন। তারা বলছেন, গাছপালা কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। বন উজাড় করে নগরায়ন হচ্ছে। এর ফলে কখনও বৃষ্টি, কখনও রোদ, কখনওবা আবার অনেক ঠাণ্ডা পড়ছে। বাতাসে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আবহাওয়া বিরুপ হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন পরিবেশ দূষিত হওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, রোববার এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সোমবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।
এর আগে গত শনিবার দেশের উত্তরাঞ্চল দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ রংপুরে সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ২ ডিগ্রি, সর্বনিম্ন ১৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও তেঁতুলিয়া সর্বোচ্চ ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন ১৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন আজ সমকালকে বলেন, এই সময়টাতে শীত থাকে না। তবে মূলত দুটি কারণে শীতের অনুভূতি হচ্ছে। এরমধ্যে একটি হলো- এবারে শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় হিমালয়ের বরফের পুরুত্ব বেড়েছে। তাই দিনের সময়টাতে সূর্যের কারণে শীত তেমনটা প্রভাব ফেলতে না পারলেও রাতে প্রভাব ফেলছে। আর দ্বিতীয়টি হলো- ভূ-মধ্যসাগর থেকে উৎপত্তি হওয়া দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বাতাসের সঙ্গে পুবালি বায়ুর সংস্পর্শে বৃষ্টি ঝড়ছে। এর কারণে শীত অনুভূত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাধারণত তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে সেটিকে শীতের আবহাওয়া বলে। যেহেতু তাপমাত্রা ২০ এর নিচে তাই এটিকে শীতের আবহাওয়া বলছে। তবে এবারে বৃষ্টিপাতে শিলাবৃষ্টির প্রবণতা কম।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সার্জিক্যাল গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাশফিক ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য। শীত চলে যাওয়ার এই সময়টাতে ঠান্ডা-গরম আবহাওয়ায় নানা ধরনের শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে; যাতে করে কোনোক্রমেই ঠান্ডা না লাগে। তবে এই সময়ে তিনি শরীরের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দেন।