শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন




গরমে হাসপাতালগুলোতে দীর্ঘ লোডশেডিংয়ে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা

আউটলুকবাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ৭:২৭ pm
dengue Dhaka Medical College Hospital DMCH ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঢামেক ক্লিনিক
file pic

গরমে দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহ আর দীর্ঘ লোডশেডিং মিলে হাসপাতালগুলোর ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে ডিউটিতে থাকা অবস্থায় রোগীদের পাশাপাশি চিকিৎসক ও কর্মচারীরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। কারণ লোডশেডিং বাড়ার ফলে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) ও বৈদ্যুতিক পাখার মতো কুলিং সিস্টেমগুলো দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকছে।

অধিকাংশ হাসপাতালে জেনারেটর দিয়ে অপারেশন থিয়েটারের কাজ চললেও অন্যান্য কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে বিদ্যুতের অভাবে। এছাড়া দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিংয়ের কারণে আইপিএস (ইনস্ট্যান্ট) চার্জ হচ্ছে না অধিকাংশ হাসপাতালে।

চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে বমি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেশি। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোরে প্রতিদিন ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রোগী চিকিৎসা নেয়। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে নির্ধারিত শয্যার তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি থাকে।

চলমান তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সে কারণে হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের জন্য ২৮ এপ্রিল আলাদা লাইনের সংযোগ চেয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চিঠি দিয়েছেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, লোডশেডিংয়ের কারণে অপারেশন থিয়েটার, ল্যাবরেটরি ও প্রশাসনিক কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে করা যাচ্ছে না। বর্তমানে তীব্র তাপদাহের কারণে সেবা গ্রহণের জন্য আগত রোগীদের কষ্ট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ল্যাবরেটরির মেশিনগুলো লোডশেডিংয়ের কারণে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য অনুসারে, সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ২টায় সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। এই সময়ে বিদ্যুতের উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৭৫৩ মেগাওয়াট এবং লোডশেডিং হয়েছে ৩ হাজার ১৯৬মেগাওয়াট।

চুয়াডাঙ্গায় টানা ২০ দিন ধরে অব্যহত রয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। সোমবার (২৯ এপ্রিল) বেলা ৩টায় এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা গত দশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে লোডশেডিংও।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সোমবার ভর্তি ছিল ৮০ জন রোগী। হাসপাতালের মেঝে, বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। এছাড়া হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ রোগী সেবা নেয়।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. শারমীন আখতার বলেন, ‘সোমবার আমাদের হাসপাতালে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত মাত্র ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল। সে কারণে আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা আমরা করতে পারিনি।

‘গরম যত বাড়ছে, লোডশেডিংও ততই বাড়ছে। গত তিন-চার দিন থেকে লোডশেডিং ভয়াবহ হয়েছে। রোগীর পাশাপাশি গরমে কষ্ট পাচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। কোনো কোনো রাতে সারা রাত বিদ্যুৎ থাকছে না। গরমে বেডের অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসকেরাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।’

জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটরের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। গরমে হাসপাতালটিতে জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া ও হিট স্ট্রোকের রোগীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ লোডশেডিং থাকায় আইপিএস চার্জ হচ্ছে না। ফলে আউটডোর ও ইনডোরে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৮০ জন ভর্তি ও ১ হাজার ১০০ জন রোগী আউটডোরে সেবা নেয়।

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা বলেন, ‘লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তিতে আছে রোগী ও চিকিৎসকেরা। মাঝে মাঝে আউটডোরে অন্ধকারে চার্জার লাইট দিয়ে রোগী দেখতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। একে তো উপচে পড়া রোগীর ভিড়, তারপর আলো ও ফ্যান নেই; রোগী দেখতে সময় লাগছে। রোগীরাও রেগে যাচ্ছে, তাদের সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

‘পরশু (শনিবার) রাতে আমাদের হাসপাতালে সারা রাত বিদ্যুৎ ছিলে না। বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না। আমাদের চিকিৎসকদের সুস্থতা নিয়ে এখন আমি বেশি চিন্তিত।’

দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ৫০০ বেডের হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকে প্রায় ৯০০ জন। তবে লোডশেডিংয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। খুব জরুরি অপারেশন থিয়েটারে জেনারেটর সাপোর্ট দেওয়া যাচ্ছে; কিন্তু হাসপাতালের সব অপারেশন থিয়েটারে জেনারেটর সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

এদিকে তীব্র গরমের কারণে আইসিইউর এসি নষ্ট ও অপারেশন থিয়েটারে অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যা দেখা দেওয়ায় দুই দিন ধরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) অপারেশন বন্ধ ছিল। তবে সোমবার সবকিছু ঠিক করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার অপারেশন কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টিবিএস




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD