সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন




কম বাস্তবায়ন বড় আকার

এমন বাজেট কেন বারবার

আউটলুকবাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪ ১০:০৩ am
দাম বাড়বে কমবে Budget বাজেট Inflation মূল্যস্ফীতি index dse cse ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই Dhaka Stock Exchange চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ Chittagong Stock Exchange dse cse ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই Dhaka Stock Exchange চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ Chittagong Stock Exchange শেয়ারবাজার dse ডিএসই Share point সূচক অর্থনীতি economic দরপতন dse ডিএসই শেয়ারবাজার দর পতন পুঁজিবাজার CSE BSEC share market DSE CSE BSEC sharemarket index discrimination সূচক market down
file pic

নথিপথ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নের রেকর্ড নেই। কিন্তু এরপরও অর্থবছরের শুরুতে ঘোষণা দেওয়া হয় বড় বাজেটের, বাস্তবায়নে চাপিয়ে দেওয়া হয় বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য। আবার শেষদিকে প্রণয়ন কর্মকর্তারাই আয়-ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা কাটছাঁট করে সংশোধিত বাজেট দিচ্ছেন। সেটিও বছর শেষে পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছর যেন এটি একটি স্থায়ী সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় চলতি বাজেট থেকে ব্যয় কমানো হচ্ছে সাড়ে ৪৭ হাজার কোটি এবং আয় ২২ হাজার কোটি টাকা। তাহলে কেন বারবার এমন বাজেট হয়-প্রশ্ন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, রাজনৈতিক বিবেচনায় বাজেট বড় ঘোষণা দেওয়া এবং বাস্তবায়ন কম এতে সরকারের কোনো উপকার নেই। এতে আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।

এমনকি এই মুহূর্তে ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলও একই ধরনের মতপ্রকাশ করেছে। সংস্থাটি আগামী বাজেটের আকার ছোট রাখার পরামর্শ দিয়েছে অর্থ বিভাগকে। পাশাপাশি বাজেটে ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং রাজস্ব আয় বাড়াতেও বলেছে।

বাজেট বাস্তবায়ন কম হওয়ার পেছনে অর্থ বিভাগ মনে করছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলোর টাকা ব্যয়ের সক্ষমতা কম। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সে অর্থ ব্যয় করতে পারে না। এজন্য অর্থ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজেট উইং কর্মকর্তাদের অর্থ ব্যয়ের ওপর প্রশিক্ষণ শুরু করেছে।

সূত্রমতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা বাজেট ঘোষণা হলেও সংশোধিত পর্যায়ে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়। ব্যয়ের আকার কমানো হয় ৪৭ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। অপরদিকে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি বেড়েছে। শুরুতে ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা থাকলেও সংশোধিত পর্যায়ে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৮৫ কোটিতে উঠেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও চূড়ান্তভাবে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। উন্নয়ন ব্যয় কমানো হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা।

সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি সরকারের আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিয়ম হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠক সংশোধিত বাজেটের চিত্র তুলে ধরা হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। সংশোধিত এ বাজেটে আগামী ৩০ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অনুমোদন দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানান, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় সেটি অর্জিত হয় না। শেষদিকে এর পরিধি ছোট করে সংশোধন করা হয়। বছর শেষে প্রকৃত বাজেট বাস্তবায়ন আরও কম হয়। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বাস্তবভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। যাতে আশঙ্কা ও বাস্তবতা দুটো সমন্বয় সম্ভব হয়। বড় বাজেট লোকসম্মুখে বলা হয় দেশের উন্নতি হবে, প্রবৃদ্ধি হবে, প্রকৃতপক্ষে এগুলো বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয় না। আমি মনে করি বাজেট বাস্তবমুখী হওয়া উচিত।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মান্নিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, শতভাগ বাজেট বাস্তবায়ন হবে না সেটি তৈরির সময়ই সংশ্লিষ্টরা জানতেন। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় বাজেটের আয়তন বড় দেখাতে হবে, সেজন্য এগুলো তারা করেন। বাজেট ঘোষণাকালে কত টাকার বাজেট সেটি নিয়ে উল্লসিত থাকে। কিন্তু একবারও দেখে না, গত বাজেট কত শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারেননি। যা হচ্ছে জেনেবুঝেই করা হচ্ছে। এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় বড় বাজেট দেওয়ার কারণে আর্থিক শৃঙ্খলাকে নষ্ট হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই সরকারের জন্য উপকার বয়ে আনে না। কারণ অর্থায়নের যেসব ইঙ্গিত দেওয়া হয়, পরবর্তী সময়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে না। যেসব খরচ হবে বলে ঠিক হয়, পরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান টাকা না পেয়ে হতাশায় পড়ে। এই যে বাড়িয়ে বলা এবং পরে কম বাস্তবায়ন এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা উচিত। এতে অনেক বেশি দক্ষতা এবং মানুষের আগ্রহ বাড়াবে।

বাজেট নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত পাঁচ অর্থবছরের মূল বাজেটের গড়ে ৮১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের গড়ে প্রায় ৮৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হার ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ। ওই বছর মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা এবং সংশোধিত আকার ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাস্তবায়নের হার ৮৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ওই বছর মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা এবং সংশোধিত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয় ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটিতে।

একইভাবে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল মূল বাজেটের ৮১ শতাংশ। ওই বছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে আনা হয় ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকায়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাস্তবায়নের হার ৮৯ শতাংশের কম।

সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ জানান, দেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী বাজেটের পরিধি হওয়া দরকার জিডিপির অন্তত ২৫ শতাংশ। কিন্তু বাজেট করা হচ্ছে ১৫ শতাংশের মতো, আর খরচ করা সম্ভব হচ্ছে ১৩-১৪ শতাংশ। মূল কারণ সরকারের আয়ের অভাব। বর্তমান রাজস্ব জিডিপির অনুপাত ৮.২ এবং কর জিডিপি ৭.২ শতাংশ। ফলে আয় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি বাজেটের অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী বাজেটের আকার খুব বেশি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বাজেটের মূল আকার প্রতি অর্থবছরে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ করে বাড়ানো হয়। আগামী বাজেট আকার ৫ শতাংশের কম বাড়ানো হতে পারে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD