৮টি কাজের মাধ্যমে একজন উত্তম নেক স্ত্রী হওয়ার বিষয়গুলি উল্লেখ করা হলো…
এক: দাম্পত্য জীবন সুখী হওয়ার জন্য সর্ব প্রথম কাজ হলো মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আসলে আমাদের জীবনের সকল ভালো বিষয়গুলি হচ্ছে মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে। সুতরাং আল্লাহকে আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা। আল্লাহই পারেন আমাদের দুনিয়ার বৈবাহিক জীবনে সফলতা দান করতে। এজন্য একজন স্ত্রীকে অবশ্যই আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করতে হবে- যে, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের বৈবাহিক জীবনকে উত্তমরূপে যাপন করার তৌফিক দান করুন এবং আখেরাতে আমাদের জান্নাতী হওয়ার তৌফিক দান করুন।
দ্বিতীয়: স্বামীর শরীয়ত সম্মত ও যৌক্তিক কথা শোনা এবং সে বিষয়গুলোতে স্বামীর আনুগত্য করা।কেননা স্বামী হচ্ছে ঘরের কর্তা। সুতরাং তাকে তার প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার দেওয়া হচ্ছে একজন আদর্শ স্ত্রীর কর্তব্য। প্রিয় নবী ( ﷺ ) বলেন “যে স্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, রমজানে রোজা পালন করবে, নিজের ইজ্জতের হেফাজত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, তাহলে সেই স্ত্রী জান্নাতে যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছেমত প্রবেশ করতে পারবে”। (মিশকাতুল মাসাবীহ হাদিস নাম্বারঃ ৩২৫৪) অর্থাৎ আমাদের জাগতিক এবং পরকালীন জীবনের সফলতার জন্য উক্ত কাজগুলো করতে হবে।
তৃতীয়: স্বামীকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করা। হাদিসের ভাষ্য হলো- একজন উত্তম স্বামীই হচ্ছে একজন নেককার স্ত্রীর জন্য জান্নাতের পথেয়। তিরমিজি শরীফে আছে, হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেছেন ‘যে মহিলা এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে, তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (তিরমিজি হাদিস নাম্বারঃ১১৬১) সুতরাং একজন আদর্শ স্ত্রীর সবসময়ই চেষ্টা হবে স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা। তবে স্বামীর কোন অযৌক্তিক বিষয়ে বা ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে স্বামী জড়িত হলে-স্ত্রী ইসলামের আলোকে স্বামীকে ঠান্ডা মাথায় বোঝানোর চেষ্টা করবে।
চতুর্থ: ঝগড়া এবং সব ধরনের রাগারাগি করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ ছোট একটি রাগারাগি হতে পারে স্বামী স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্বের কারণ। হয়তো দেখা যাচ্ছে স্ত্রীর কোন দোষ নেই, এমনকি স্ত্রীর কোন দোষ করেনি। তবুও স্ত্রীর উচিত হবে, ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতিকে অনুকূলে নিয়ে আসা। নিজেদের মধ্যে কোন বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ না করা। কেননা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করলেই মূলত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতির সূচনাতেই স্ত্রী যদি ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। তাহলে কখনই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্ব হবে না।
পঞ্চম: স্বামীকে তাঁর ভালো কাজের জন্য ধন্যবাদ জানানো। একজন আদর্শ স্ত্রী যখন স্বামীকে তার ভালো কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাবে তখন স্বামীর ভীষণ খুশি হবেন। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। আমাদের সমাজে যে সকল নারীরা এমন করেন না তাদের বৈবাহিক জীবন খুব একটা ভালো হয় না।
ষষ্ঠ: স্বামীর সাথে আড্ডা দেওয়া। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ পুরুষদের স্বাভাবিক স্বভাব হচ্ছে তারা হৃদয়গ্রাহী ও হাস্যজ্জল নারীদের পছন্দ করে। আমাদের নবী সাল্লাহু সাল্লাম একটি হাদিসে বলেছেন “তুমি এমন নারীকে বিবাহ করো যে তোমাকে আনন্দ দেবে এবং তুমিও তাকে আনন্দ দেবে”। (প্রাসঙ্গিক হাদিস: আস সিলসিলাতুস সহীহাহ হাদিস নাম্বারঃ১৮৩৮)
সপ্তম: নিজে সর্বদা হাস্যজ্জ্বল থাকুন। অনেক আগে থেকেই নারীরা গয়না পরতো ও সাজ-সজ্জা করে থাকতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু সালাম বলেছেন ‘আল্লাহ সৌন্দর্য পছন্দ করেন। ইসলামে সৌন্দর্যচর্চার অনুমোদন দিয়েছে। তবে এর একটি সীমারেখা নির্ধারিত আছে, যেন তা পাপের পরিণত না হয়।” (মুসলিম হাদিস নাম্বার: ৯১) অর্থাৎ স্বামীর নিকট স্ত্রীর সৌন্দর্য্য প্রকাশের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সুতরাং একজন আদর্শ নারীর কর্তব্য হবে এই আদর্শকে অনুসরণ করা যে পরপুরুষের উদ্দেশ্যে না সেজে নিজের স্বামীর জন্য সাজসজ্জা করা এবং স্বামীর সাথে হাসিখুশি থাকা ও স্বামীর সাথে উত্তম আচরণ করা।
অষ্টম: স্বামীর কাজ থেকে ঘরে ফিরলে তার যত্ন নিন। ধরুন আপনার স্বামী এখন অফিস শেষে বা কাজ শেষে বাসায় ফিরবে। সুতরাং আপনি আপনার বাসাটাকে সুন্দরভাবে পরিষ্কার করে রাখুন, নিজেও ভালো কাপড় পরিধান করুন এবং সন্তানদেরও পরিষ্কার কাপড় পরিধান করান। এমনটাই একজন পুরুষের কাম্য। আর এর মাধ্যমেই মূলত স্বামী-স্ত্রী বৈবাহিক জীবনে সুখ এবং শান্তি বৃদ্ধি পায়। সবশেষে স্বামীর হৃদয় জয় করার জন্য আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। আল্লাহ আপনাকে সকল প্রকার সৌন্দর্য দান করেছেন। আপনি আপনার এই সকল সৌন্দর্যকে ব্যবহার করে আপনার স্বামীর হৃদয়কে জয় করুন। মনে রাখবেন আপনার দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার জন্য অর্ধেকের বেশি নির্ভর করছে আপনার উপর।
IFM desk