মিসওয়াক করা : আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের সঙ্গে তাদের মিসওয়াক করার হুকুম করতাম (বুখারি : ৮৮৭)।
সূরা কাহাফ পড়া : হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এ সূরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি ওজুর পর উক্ত আয়াতগুলো পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কিয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না।’ (তারগিব ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক ২/৩৯৯)।
দরুদ শরিফ পড়া : হজরত আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এ দিনে আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এ দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এ দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এ দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ ১০৪৭)।
মসজিদে আগে যাওয়া : আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাত গোসলের মতো গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানি করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভি কুরবানি করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিংবিশিষ্ট দুম্বা কুরবানি করল। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করল সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। পরে ইমাম যখন খুতবা দেওয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকা জিকর শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে। (বুখারি : ৮৮১; মুসলিম ৭/২, হা. ৮৫০, আহমাদ ৯৯৩৩) (আধুনিক প্রকাশনী : ৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৮৩৭)।
গোসল ও সুগন্ধি /তেল ব্যবহার : সালমান ফারসি (রা.) বলেন, নবি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দুজন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি : ৮৮৩, ৯১০)। (আধুনিক প্রকাশনী : ৮৩২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৮৩৯)। অন্য একটি হাদিস আমর ইবনু সুলাইম আনসারি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু সা’ঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিসওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে (বুখারি : ৮৮০)।
খুতবা শোনা : আবু সা’ঈদ খুদরি (রা.) বলেন, নবি (সা.) একদা মিম্বারের ওপর বসলেন এবং আমরা তাঁর চারদিকে (মুখ করে) বসলাম। (বুখারি : ৯২১, ১৪৬৫, ২৮৪২, ৬৪২৭; আধুনিক প্রকাশনী : ৮৬৮; ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৮৭৫)। অন্য একটি হাদিসে আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি (সা.) বলেন, জুমার দিন মসজিদের দরজায় মালাইকা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে সে আসে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানি করে। অতঃপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি গাভি কুরবানি করে, অতঃপর মেষ কুরবানি করার মতো। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর মতো। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি একটি ডিম দানকারীর মতো। অতঃপর ইমাম যখন বের হন তখন মালাইকা তাদের খাতা বন্ধ করে দিয়ে মনোযোগসহকারে খুতবাহ শ্রবণ করতে থাকে। (বুখারি : ৯২১, ৯২৯, ৩২১১; আধুনিক প্রকাশনী : ৮৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৮৮২)।
জুমার দিন মুসলমানের জন্য এক কল্যাণকর এবং নেয়ামতের দিন। এর ফজিলত লিখে শেষ করা যাবে না। আল্লাহতায়ালা আমাদের জুমার দিনে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ্ আমাদের সবার প্রতি সহায় হোন।