দুনিয়াতে সুখময় সংসারকে জান্নাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আর অশান্তি ও কলহ-বিবাদে জড়িত পরিবার জাহান্নাম সমতুল্য। পারিবারিক জীবনে সুখ-শান্তি ও কল্যাণের জন্য স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভালোবাসার বিকল্প নেই। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত পথ ও পদ্ধতির অনুসরণেই মিলবে এ শান্তি ও কল্যাণ। সংসার জীবনে সুখের জন্য স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই রয়েছে বিশেষ করণীয় ও দায়িত্ব। সেসব দায়িত্ব ও করণীয়গুলো কী…?
স্ত্রীর দায়িত্ব-
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের আলোকে স্বামী ও সংসারের প্রতি রয়েছে স্ত্রীর অনেক দায়িত্ব। সুন্নাহ মোতাবেক এসব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারলেই সংসার জীবনে আসবে শান্তি। পরকালীন জীবনে মিলবে মুক্তি। তাহলো-
স্বামীর প্রতি সম্মান দেখানো
স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে স্বামীর আনুগত্য করা। স্বামীর প্রতি সম্মান দেখানো। তাদের মর্যাদার অবহেলা না করা। হাদিসে পাকে এসেছে-
কায়িস ইবনু সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, ‘আমি যদি কোনো মানুষকে মেজদা করার অনুমতি দিতাম তবে স্ত্রীদেরকে দিতাম তাদের স্বামীদেরকে সেজদা করতে। কেননা আল্লাহ স্ত্রীদের উপর স্বামীদের অধিকার দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ ২১৪০)
স্বামীর কথা মেনে চলা
স্ত্রীর জন্য স্বামীর কথা মেনে চলা অপরিহার্য। তবে ইসলামের নির্দেশের বর্হিভূত কোনো কথার নির্দেশ দিলে তা মানা যাবে না। হাদিসে পাকে এসেছে-
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘স্বামী যখন তার প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকে, সে যেন অবশ্যই তার কাছে আসে, যদিও সে চুলার ওপর (রান্নার কাজে) ব্যস্ত থাকুক।’ (তিরমিজি)
স্বামীকে কষ্ট না দেওয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে নারী তার স্বামীকে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে দুনিয়াতে কষ্ট দেয়, তাকে জান্নাতের হুর-গেলমানরা লানত দিয়ে বলে, হে হতভাগা! তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তাআলা তোমাকে নিশ্চিহ্ন করুন!’(তিরমিজি)
স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা
স্বামীর সন্তুষ্টিতে রয়েছে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ কোনো স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট হলে পরকালে সে সফলকাম। হাদিসে পাকে এসেছে-
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কোনো স্ত্রী এমতাবস্থায় মারা যায় যে, তার স্বামী তার ওপর সন্তুষ্ট ছিল, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি)
স্বামীর জন্য সাজগোজ
একবার নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সফর থেকে ফিরে মদিনায় আসার পর বাড়িতে না গিয়ে সাহাবিদের বললেন, তোমরা এখানে থেমে যাও এবং বাড়িতে খবর পাঠাও যেনো তোমাদের স্ত্রীরা নিজেদের তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে সাজগোজ করে নিজেকে উপস্থাপন করতেন।’ (বুখারি)
স্বামীর দোষ গোপন রাখা
নারীদের মধ্যে এ প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায় যে, তারা স্বামী দোষ অন্যের কাছে বলে বেড়ায়। অনেকে এটাকে মন হালকা করার অজুহাত দেখায়। না এমনটি করা যাবে না। এটা ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এতে করে সংসারে কলহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয় এবং সুখ-শান্তি চলে যায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সুরা হুমাজাহ: আয়াত ১)
স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা
সুখী পারিবারিক জীবনের জন্য স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের প্রতি স্ত্রীর এবং স্ত্রীর আত্মীয়দের প্রতি স্বামীর সুসম্পর্ক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার প্রতি ইসলামে খুব বেশি গুরুত্বারোপ করেছে। হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা সম্পর্কে খুব কড়াকড়ি করা হয়েছে।
IFM desk