সাভারের আশুলিয়ায় বিক্ষোভের জেরে শ্রমিক ও যৌথ বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে কাউসার হোসেন খান (২৭) নামের এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ চারজনসহ আহত হয়েছেন আরও ৩৫ শ্রমিক। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কমপক্ষে পাঁচ গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জিরাবো এলাকার মন্ডল গ্রুপের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ অন্যরা হলেন- আশুলিয়ার ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক হাবীব ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিক নাজমুল হাসান, নয়ন ও রাসেল।
এনাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ইনচার্জ নাসির নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
শ্রমিকরা বলেন, সকালে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিটিং চলছিল। এ সময় সমঝোতা না হওয়ায় শ্রমিকরা কারখানার বাইরে অবস্থান নেন। পরে অন্য কারখানার শ্রমিক সেখানে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থান নিলে শ্রমিকরা র্যাব ও পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করেন। পরে শ্রমিকরা আরও উত্তেজিত হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গুলি চালায়। এ সময় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হলে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় পিএমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন।
ন্যাচারাল ডেনিমসের শ্রমিক সুমন বলেন, সকালে আমাদের কারখানায় সবাই কাজ করছিল। কারখানায় কোন ধরনের আন্দোলন হয়নি। তবে মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকরা কারখানার সামনে আন্দোলন শুরু করলে আমাদের শ্রমিকরা সংহতি জানিয়ে মন্ডলের সামনে যায়। সেখানে আরও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা যোগ দেন। এ সময় শ্রমিকদের লাঠিচার্জ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একপর্যায়ে গুলি ছুড়লে দুই জনের পায়ে গুলি লাগে। পরে আমি তাদের দুই জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এ ছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে এনামে এক শ্রমিক মারা গেছে। সেখানেও গুলিবিদ্ধ দুই জন ভর্তি রয়েছে।
পিএমকে হাসপাতালের অ্যাডমিন ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের হাসপাতালে চার শ্রমিককে আহতবস্থায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে দুই জনের পায়ে গুলি লেগেছে। চিকিৎসা চলছে।
ন্যাচরাল ডেনিম কারখানার এইচআর অ্যাডমিন সবুজ হাওলাদার বলেন, আমাদের কারখানায় কোনও সমস্যা ছিল না। সকাল থেকেই শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছিল। হঠাৎ শ্রমিকদের কাছে গুজব আসে, পাশের মন্ডল গার্মেন্টের শ্রমিক মারা গেছে। এটা শুনেই সব শ্রমিক একসঙ্গে কারখানা থেকে বেরিয়ে মন্ডল গার্মেন্টের সামনে চলে যায়। পরে ওখানে কী ঘটেছে আমার জানা নেই।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে শিল্পপুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।