বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর (বিবিএস) বিভিন্ন জরিপ ও শুমারির তথ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন তুলে আসছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। সংস্থাটি থেকে জনসংখ্যা, মূল্যস্ফীতি, জিডিপি’র আকার-প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে অর্থনীতির প্রতিটি খাতেই ভুল ও প্রশ্নবিদ্ধ পরিসংখ্যান তৈরি ও উপস্থাপন করা হয় বলে মনে করেন তারা। এজন্য নিজেদের তথ্য কতোটা গ্রহণযোগ্য এবং স্টেক হোল্ডাররা তাদের তথ্য কীভাবে নিচ্ছেন, তার উপর যৌথভাবে একটি জরিপ চালায় বিবিএস ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। এ জরিপে উঠে এসেছে, বিবিএস’র তথ্য ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশই সংস্থাটির পরিসংখ্যান মানসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন না।
জরিপ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিবিএস’র মাধ্যমে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানের তথ্যে সন্তুষ্ট ২৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ ব্যবহারকারী। পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় ৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, আর কিছুটা অসন্তুষ্ট ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অন্যদিকে বিবিএস’র প্রকাশিত তথ্যে পুরোপুরি অসন্তুষ্ট ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ ব্যবহারকারী। এ ছাড়া ৩৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ ব্যবহারকারী মনে করেন বিবিএস’র তথ্য নির্ভরযোগ্য নয়।
জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গুণগত মানের দিক থেকে পণ্যমূল্য এবং শ্রম পরিসংখ্যান নিয়ে সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে ব্যবহারকারী। তথ্য অনুযায়ী, পণ্যমূল্যের পরিসংখ্যানে সন্তুষ্ট মাত্র ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, আর পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় ৬০ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্যদিকে শ্রম পরিসংখ্যানে সন্তুষ্ট ২৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন ৫৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। এই দুই পরিসংখ্যানে ২০২২ সালের তুলনায় ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টি কমেছে। এ ছাড়া আয় ও দরিদ্র পরিসংখ্যানে সন্তুষ্ট ২৯ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন ৫৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর কিছুটা অসন্তুষ্ট ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও পুরোপুরি অসন্তুষ্ট ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ ব্যবহারকারী।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বিবিএস’র অফিসিয়াল পরিসংখ্যানের সঠিকতা নিয়ে ৬৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ ব্যবহারকারী সন্তুষ্ট। আর ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ ব্যবহারকারী অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে ১০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহারকারীর তথ্যে সঠিকতা জানা যায় না। তথ্যের সঠিকতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার পরিসংখ্যানে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, বিবিএস’র পরিসংখ্যানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে সন্তুষ্ট ৭৭ দশমিক ০৬ শতাংশ ব্যবহারকারী। অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে ১৭ শতাংশ ব্যবহারকারী। পরিসংখ্যানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ধারণা নেই ৬ শতাংশ ব্যবহারকারীর।
অন্যদিকে বিবিএস’র পরিসংখ্যানের সময়োপযোগিতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট ব্যবহারকারীরা। জরিপ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিবিএস’র পরিসংখ্যানের সময়োপযোগিতা নিয়ে সন্তুষ্ট ৫৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ আর অসন্তুষ্ট ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ ব্যবহারকারী। ৭ শতাংশের বেশি ব্যবহারকারীর এ বিষয়ে ধারণা নেই।
জরিপের ফলে দেখা যায়, বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত ডোমেনের মধ্যে শিক্ষার পরিসংখ্যান সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। ৭৩ দশমিক ২১ শতাংশ ব্যবহারকারী এই ডেটার সঙ্গে জড়িত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তথ্য ব্যবহার হয় জনসংখ্যা এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান (৭২ দশমিক ১০ শতাংশ) এবং আয় এবং দারিদ্র্য পরিসংখ্যান (৬৮ দশমিক ৫২ শতাংশ) তৃতীয় সর্বোচ্চ।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৬৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ তথ্য ব্যবহারকারী জনসংখ্যা, জনসংখ্যাগত এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান বেশি ঘন ঘন ব্যবহার করে। তথ্য সংগ্রহের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে আয় এবং দারিদ্র্য পরিসংখ্যান (৬০ দশমিক ৭৭ শতাংশ) এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় জাতীয় অ্যাকাউন্ট পরিসংখ্যান (৫৪ দশমিক ৯১ শতাংশ)। সবচেয়ে কম ব্যবহার হয় অপরাধ ও বিচার বিভাগীয় পরিসংখ্যান (৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার (১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ)।
এসব তথ্য সংগ্রহের সিংহভাগই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নেয় ব্যবহারকারীরা। বিবিএস ওয়েবসাইট বা ডেটা পোর্টালে গিয়ে ৮৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ তথ্য সংগ্রহ করেছে, যেখানে ৪৮ দশমিক ১৬ শতাংশ এটি প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে পেয়েছে। ৪১ দশমিক ২৬ শতাংশ বিনামূল্যে পেয়েছে।
mzamin.com