সূরায়ে ফাতিহা, যার দ্বারা সূচনা হয়েছে কুরআনের। তার দ্বারাই শুরু হয় নামাজের মতো শ্রেষ্ঠ ইবাদত। আবার এটিই কুরআনের অবতীর্ণ প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। সূরায়ে ফাতিহা সব কুরআনের সার-সংক্ষেপও বটে। সব কুরআনে ঈমান, আমলের যে বিস্তারিত আলোচনা, পর্যালোচনা হয়েছে, সূরায়ে ফাতিহায় এ দু’টি মূল নীতিই বিধৃত হয়েছে সংক্ষিপ্তভাবে। তাই, এ সূরাকে উম্মুল কুরআন বা কুরআন জননীও বলা হয়। আসুন, সূরা ফাতিহার মর্মকথা জেনে সে অনুযায়ী আমল করি।
সূরা ফাতিহার ফজিলত : সূরা ফাতিহার ফজিলত সম্পর্কে নবীজী থেকে অনেক হাদিস বিধৃত হয়েছে। নবীজী বলেছেন, যার হাতে আমার জীবন সেই সত্তার শপথ, সূরা ফাতিহার দৃষ্টান্ত তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিলে তো নেই এমনকি কুরআনেও এর সমপর্যায়ের কোনো সূরা নেই। তিনি আরো বলেছেন, সূরা ফাতেহা প্রত্যেক রোগের ঔষধবিশেষ। হজরত আনাস (রা.) নবীজী হতে বর্ণনা করেন, সমগ্র কুরআনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূরা আল-হামদু-লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন (মা’আরেফুল কুরআন : ১)।
সূরা ফাতিহা বান্দা এবং আল্লাহর মাঝে দু’ভাগে বণ্টিত : হাদিসে কুদসিতে এসেছে, নবীজী বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন। আমি সূরা ফাতিহাকে আমার এবং বান্দার মাঝে দু’ভাগে বণ্টন করেছি। একাংশ আমার জন্য আর অন্যাংশ আমার বান্দার জন্য। অতএব, বান্দা যখন ‘আল-হামদু-লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ বলে, তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, বান্দা আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করল। যখন সে আর-রহমানির-রাহিম বলে, তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার প্রশংসা করল। আর বান্দা যখন ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দিন’ বলে, আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার স্তুতি করল। আল্লাহ বলেন, সূরার বাকি অংশ আমার বান্দার জন্য। তাই বান্দা যখন ‘ওয়া-ইয়্যাকা নাসতায়িন’ বলে, আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা যা চায়, তা তার জন্য। বান্দা যখন ‘সিরাতাল্লাজিনা আন-আমতা-আলাইহিম’ বলে, আল্লাহ বলেন এটাও আমার বান্দার জন্য। এমনিভাবে বান্দা যখন ‘ওয়া-লাদ-দোয়া-ল্লিন’ বললে, আল্লাহ বলেন, এটাও আমার বান্দার জন্য। আর আমার বান্দা জন্য তাই, যা সে চায়। (তাফসিরে মাকাতিল : ৩৭)
বিসমিল্লাহ এবং কিছু কথা : বিসমিল্লাহ সূরা ফাতিহাসহ অন্যান্য সূরার আয়াত কি না সে ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। ইমাম আবু হানিফার মতে, এটি সব সূরার অংশ নয় বরং সূরা নামলের বিশেষ আয়াত। যা সূরা তাওবাহ ব্যতীত অন্যান্য সব সূরার শুরুতে লেখা হয়ছে, পরবর্তী সূরা থেকে পার্থক্য করার জন্য। কুরআনের সূচনাকৃত সূরার প্রারম্ভে বিসমিল্লাহ উল্লেখ করার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, প্রত্যেকটি কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই বিসমিল্লাহ পাঠ করা চাই। নবীজী বলেছেন, যে কাজ বিসমিল্লাহ ব্যতীত শুরু করা হয়। তা বরকতশূন্য হয়। (ইবনে মাজাহ : ৪৮৪০)
প্রত্যেক কাজের প্রারম্ভে বিসমিল্লাহর শিক্ষা : মহামহিম আল্লাহ, মহামান্বিত কিতাবের সর্বাধিক মর্যাদা স¤পন্ন সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ উল্লেখ করে, সকল মানুষকে এ কথার শিক্ষা দিয়েছেন যে, ছোট-বড় প্রত্যেক কাজের শুরুতে বান্দার বিসমিল্লাহ বলা উচিত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, জিবরাঈল (আ.) সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সা.) এর নিকট যা নিয়ে আসেন তা হল, হে মুহাম্মাদ! আপনি বলুন, আমি সর্বশ্রোতা প্রজ্ঞাময় আল্লাহর কাছে বিতারিত শয়তান হতে আশ্রয় চাচ্ছি। বলুন, বিসমিল্লাহ হির-রহমানির রহিম। অতপর জিবরাঈল বলেন, পাঠ করুণ আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর নামেই বসুন এবং তাঁর নামেই উঠুন। (তাফসিরে তবারি : ১৩৯)
সংক্ষিপ্ত অনূবাদ এবং তাফসির : ১. সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। মানুষ, জিন, ফেরেস্তা, আসমান, জমিন, গ্রহ-নক্ষত্রসহ আমাদের জানা-অজানা সব সৃষ্টিজীবের পালনকর্তা তিনিই। ২. যিনি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু। তিনি এতটাই দয়ালু যে, পক্ষ-বিপক্ষ সবাইকেই সমভাবে অনুগ্রহ করেন। অসংখ্য নেয়ামতে ঢেকে রাখেন দুনিয়াতে। তবে কেয়ামতে তিনি শুধু মোমেনদেরকেই অনুগ্রহ করবেন। নবীজী বলেছেন, সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করার পূর্বে আল্লাহতায়ালা একটি কিতাব লিখেন। তাতে লেখা আছে, নিশ্চয়ই আমার দয়া ক্রোধের ওপর প্রাধান্য পাবে। এটা এখনো আরশের লেখা আছে (বোখারি : ৭৫৫৪)। ৩. যিনি বিচার দিনের মালিক। কেয়ামত দিবসের অধিপতি। ইবনে আব্বাস রা: বলেছেন, দুনিয়ার মত কেয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে তাঁর আদেশে অন্য কারো ক্ষমতা থাকবে না। সেদিন সব আওয়াজ আল্লাহর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকবে। (তাফসিরে তাবারি : ১৬৬)। ৪. আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। ইবাদত এবং সাহায্যের যোগ্য মালিক তিনিই। তাই ইবাদতে এবং সাহায্যে তাকেই স্মরিতে হবে।
শাহাদাত হোসাইন