পরিবারে বাবা-মায়ের পর আমরা যা কিছু শিখি তার সবচেয়ে অংশই শিখি শিক্ষকদের কাছ থেকে। পড়াশোনা তো বটেই, কীভাবে একজন মানুষ হওয়া যায় তার মন্ত্রণা পাই এই শিক্ষকদের থেকেই। শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। যারা বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করেন। নিঃস্বার্থভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া সেই শিক্ষকদের জন্যই আজকের দিনটি।
পুরোবিশ্বে শিক্ষকদের সম্মানে ৫ অক্টোবর দিনটি পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬ তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কো মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের যুগান্তকারী ঘোষণার মাধ্যমে ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের শুভ সূচনা করা হয়।
যদিও বিশ্বের অনেক দেশে বছরের অন্যান্য অনেকদিন পালন করা হয় শিক্ষক দিবস হিসেবে। তবে ১৯৯৫ সালের ৫ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ১০০টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। এটি দেশ বিদেশে ‘শিক্ষক’ পেশাজীবিদের জন্য সেরা সম্মান। পরবর্তী প্রজন্মও যেন যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে এই দিনটি পালন করে সেটাও উদ্দেশ্য।
আজ মন প্রাণ খুলে হাসুন
ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালের মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবসকে সব দেশে স্বীকৃতি প্রদান এবং উদযাপিত হওয়া উচিত। শিক্ষকদের অধিকার, করণীয় ও মর্যাদা সুরক্ষায় ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ১৪৫টি সুপারিশ গৃহীত হয়। এসব সুপারিশের মধ্যে শিক্ষকদের মৌলিক ও অব্যাহত প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও পদোন্নতি, চাকরির নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা বিধানের প্রক্রিয়া, পেশাগত স্বাধীনতা, কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, দায়িত্ব ও অধিকার, শিক্ষা সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, কার্যকর শিক্ষাদান ও শিখনের পরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা অন্যতম।
পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) উপর্যুক্ত সুপারিশসমূহ অনুমোদন করে। ১৯৯৩ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম অনুষ্ঠানে ৫ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে প্রথমবার দিবসটি পালন করা হয়। তবে ১৯৯৫ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে শিক্ষকরা মোটা দাগে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উদযাপন শুরু করেন।
তবে শুধু একটি দিনের জন্য নয় প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জীবনে শিক্ষকের মর্যাদা এবং অবদানের কথা স্মরণ রাখতে হবে। শিক্ষকদের সম্মান দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতায়।