বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০২:০২ পূর্বাহ্ন




শেরপুরে হঠাৎ বন্যা, স্রোতে ভেসে দু’জনের মৃত্যু

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:৪৭ pm
Waterlogging waterlogs waterlog প্লাবন flood Disaster Flood Safety adb Flood Flooding overflow water rain snow coastal storms storm surges dangerous floodwaters floodwater বন্যা কবলিত পানি প্রবাহ প্রবাহিত পানি জোয়ার ভাটা কৃষি জোয়ার-ভাটা দুর্যোগ বন্যা বন্যার্ত পানি
file pic

টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের মহারশি, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর দুই কূল উপচে দুই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে উপজেলা দুটির গ্রামীণ অধিকাংশ সড়ক ও ফসলের মাঠ। পানির তোড়ে ভেসে প্রাণ হারিয়েছেন নারীসহ দু’জন। অনেক বাড়িঘর হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। এমন আকস্মিক বন্যায় মহাদুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত ৫০টি গ্রামের মানুষ। মৃত দু’জন হলেন– নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়ন পরিষদের বালুচর এলাকার মানিক মিয়ার স্ত্রী রহিজা বেগম (৪০) এবং নয়াবিল ইউনিয়নের আন্ধারপাড়া এলাকার বাসিন্দা কৃষক ইদ্রিস আলী (৭৫)।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে খলিসাকুড়া গারোবাজার থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে পানির তোড়ে ভেসে ইদ্রিস আলীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে উপজেলায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। টানা বৃষ্টিতে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর পানি বেড়ে উপজেলার সদর বাজার, উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। একই কারণে সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতেও পানি বেড়েছে। ডুবে গেছে পৌরসভাসহ তিনটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। ভোগাই নদীর দুই পাড়ের কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

তারা বলছেন, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার থেকেই মহারশি নদীতে পানি বাড়ছিল। গভীর রাতে নদীর কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যায়। এর পর পানি ঢুকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। ঝিনাইগাতী বাজার ও রাংটিয়া সড়কের ওপর দিয়ে এবং ভোগাই নদীর ভাঙন অংশ দিয়ে পানি ঢুকে গড়কান্দা ও শিমুলতলী এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকছে। ভেঙে গেছে বাড়িঘর। জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটছে মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষিত অনেক এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা তলিয়ে গেছে। তাই সেখানে না গিয়ে সড়ক ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন দুর্গতরা।

এদিকে শ্রীবরদী উপজেলায় সোমেশ্বরী নদীর পানিও বাড়ছে। টানা ভারী বর্ষণের কারণে শেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত নালিতাবাড়ীতে ২২৫ মিলিমিটার, নাকুগাঁওয়ে ২৬০ মিলিমিটার ও শেরপুর সদরে ১৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে নালিতাবাড়ীতে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার ও ভোগাই নদীর পানি ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মহারশির পানি। সোমেশ্বরী, মৃগী নদী ও পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও বেড়েছে।

ইউএনও মাসুদ রানা জানান, নালিতাবাড়ীর পোড়াগাঁও, নালিতাবাড়ীর রামচন্দ্রকুড়া ও নয়াবিল ইউনিয়নের পাঁচ-ছয়টি গ্রামের কোথাও কোমর ও গলাপানি উঠে পড়েছে। আটকে পড়াদের উদ্ধারে স্পিডবোট ও নৌকা পেতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ ইউনিয়নের প্রতিটিতে শুকনো খাবার ও পানি বরাদ্দ দিয়েছি। বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ কাজ শুরু হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, সদর, ধানশাইল, কাংশা ও নলকুড়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করছেন। একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

শেরপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের মেরামত কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুই উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে নৌকা নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে। পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলো পৌঁছে দেওয়া হবে।

ধোবাউড়ায় বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত: ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় টানা ২২ ঘণ্টার বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আমন ধানের ক্ষেত। ডুবেছে রাস্তাঘাট, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল জানান, পানি কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD