কানপুরে সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলনে এসে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার ঘটনা ছিল অবাক করা। কারণ, সিরিজ কাভার করতে ভারতে আসা সাংবাদিকরা আগে থেকে বিষয়টি নিয়ে কিছুই জানতে পারেননি। মাহমুদউল্লাহর টি২০ ছেড়ে দেওয়ার খবর ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। সিরিজ শুরুর আগেই কমবেশি জানা গিয়েছিল– ভারতে টি২০ ক্যারিয়ার শেষ করছেন মিডল অর্ডার এ ব্যাটার। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক সেই ঘোষণা দেন তিনি।
মাহমুদউল্লাহ জানান, হায়দরাবাদে শেষ আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলবেন। তাঁর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে ১৭ বছরের টি২০ ক্যারিয়ার। যেটাকে জয় দিয়ে রাঙানোর খুব ইচ্ছা ৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের। নিজের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে জিততে চান দিল্লিতে। আজ জিতে সিরিজ বাঁচিয়ে রাখতে পুরো দলই অলআউট ক্রিকেট খেলতে চায়।
বিদেশের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ থেকে সাকিবের বিদায়টা ভালো হয়নি। বৃষ্টিবিঘ্নিত কানপুর টেস্ট ভারত জিতে নেয় দু’দিনে। টি২০ সিরিজ হার দিয়ে শুরু হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে। মাহমুদউল্লাহও সেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। কারণ, দিল্লির এই ভেন্যু তাঁর জন্য পয়া। ২০১৯ সালে ভারতের এই মাঠেই তাঁর নেতৃত্বে টি২০ ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। গেল বিশ্বকাপেও সাকিবের দল এই মাঠেই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল। রেকর্ড বলে, এই মাঠে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ হারেনি বাংলাদেশ।
যদিও বিগত পাঁচ বছরে যমুনা নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে। দ্বিতীয়বারের মতো টি২০ বিশ্বকাপও জিতেছে ভারত। বাংলাদেশ দলেও অনেক পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। নাজমুল হোসেন শান্ত নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলকে। সাবেক নেতার বিদায় রাঙাতে শান্তরা মরিয়া ভালো করতে। এ ছাড়া নিজেদের সম্মান বাঁচাতেও ভারতের বিপক্ষে লড়াকু ক্রিকেট খেলতে উন্মুখ সবাই। মাহমুদউল্লাহর মতে, ‘আমাদের শুরুটা ভালো হয়নি। অলআউট ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পারিনি। আমাদের আর একটু গুছিয়ে খেলতে হবে। দিল্লির এই মাঠে ভালো কিছু স্মৃতি আছে। ২০১৯ সালে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে পেরেছিলাম।
আশা করি, কালও (আজ) ভালো ক্রিকেট খেলে জিততে পারব।’ সত্যি বলতে, টি২০ দল খুব একটা ভালো শেপে নেই। বিশ্বকাপের পর প্রথম সিরিজ খেলছে তারা। যদিও বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্পে টি২০-এর ম্যাচ খেলা হয়েছে অনেক। এইচপির হয়ে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে টি২০ টুর্নামেন্ট খেলেছেন কেউ কেউ। তানজিদ তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন তাদের অন্যতম। ইসলামাবাদে পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে সাদা বলের ম্যাচ খেলেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের আলীরা। পাকিস্তানের পর ভারতে টেস্ট সিরিজ খেলেছেন শান্ত, তাসকিনরা। মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তাওহিদ হৃদয়রা লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন।
এত বেশি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার পরও ভারতের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন বাংলাদেশ। একজন ব্যাটারও রান বড় করতে পারেননি প্রথম ম্যাচে। বরং ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলতে গিয়ে ভুল শট খেলার প্রবণতা দেখা গেছে বেশি। মাহমুদউল্লাহর বিশ্বাস, পরের দুই ম্যাচে আগের ম্যাচের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। তিনি মনে করেন, বোলিং ইউনিট ভালো কিছু উপহার দিতে পারবে সিরিজ বাঁচাতে, ‘আমাদের এখনকার বোলিং ইউনিট অনেক ভালো। পেস ও স্পিন মিলিয়ে বৈচিত্র্য আছে। আমি আশা করি, কন্ডিশন যেমনই হোক, ভালো কিছু উপহার দেবে তারা।’
শক্তিশালী পেস ইউনিট খেলালেও স্বাগতিক দলের ব্যাটাররা টেকনিক ব্যবহার করে অকার্যকর করে দেন। গোয়ালিয়রে তাসকিন আহমেদ বেধড়ক পিটুনি খেয়েছেন। স্পিন বিভাগও ভালো করতে পারেনি। লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন, অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ সফল ছিলেন না। ভারত-ভীতি থেকেই হয়তো নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। শান্তও ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, তারা এতটা খারাপ দল না। টাইগার দলপতি এটাও বলেছিলেন, বাংলাদেশ ১৮০ রান করতে জানে না। তাই যদি হয়, তাহলে আজ বোলারদের ভূমিকা পালন করতে হবে স্বাগতিকদের কম রানে অলআউট করতে। সবার আগে শান্তকে টস জিতে বোলিং নিতে হবে, যাতে করে দেড়শ রানের নিচে ভারতের মতো বিশ্বকাপজয়ী দলকে অলআউট করতে পারেন মুস্তাফিজরা। কারণ, শান্তরা ১৪০ থেকে ১৫০ রান করতে পারেন! ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে ম্যাচটি জিতেছিল, সেটিও তো লো স্কোরিং ছিল। ১৪৮ রান করেছিলেন রোহিত শর্মারা।