মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন




‘আমি কোনো পদ চাই নাই’ বিতর্ক নিয়ে মুখ খুললেন ফারুকী

আউটলুক বাংলা রিপোর্ট
  • প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪ ৯:৩০ pm
Mostofa Sarwar Farooki film director producer মোস্তফা সরয়ার ফারুকী চলচ্চিত্র পরিচালক farooki ফারুকী
file pic

জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা হয়েছেন। রোববার (১০ নভেম্বর) শপথ নিয়েছেন তিনি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর সোমবার প্রথম অফিসও করেন ফারুকী। এরমধ্যে তাকে নিয়ে নানা অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই, যা নজর এড়ায়নি এই নির্মাতার।

মঙ্গলবার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোর প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্য তুলে ধরলেন তিনি। বিষয়গুলো নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন ফারুকী। ফারুকীর সেই স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো।

‘‘প্রিয় ভাই-বোনেরা, ঘুণাক্ষরেও যা আগে ভাবি নাই, এখন আমাকে সেটাই করতে হচ্ছে। যাই হোক শুরু করি।

আমি মাত্রই দুই দিন হলো কাজ করছি। এর মধ্যে আমার ধারণা আমার মন্ত্রনালয়ে সহকর্মীদের মাঝে এই ধারণা দিতে পেরেছি যে আমরা কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটাতে চাই যেটা স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে আমাদের সংস্কৃতি কর্মীদের কাজে আসবে।

যাই হোক, যদিও আমি কোনও পদ চাই নাই, তবুও দায়িত্বটা নেয়ার পর আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে করার চেষ্টা করছি।

কিন্তু এর মধ্যে আমাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে এক অবিশ্বাস্য অভিযোগের- আমি নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর! যেই ফ্যাসিস্টকে তাড়ানোর জন্য জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালাম ১৬ জুলাই থেকে, অল আউট অ্যাটাকে গেলাম এটা জেনে যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা টিকে গেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু অথবা জেল, আমি তারই সহযোগী?

আমি আমার চেয়ারের জন্য কোনো সাফাই দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। কিন্তু শিল্পী হিসাবে অপমানিত বোধ করেছি বলেই কয়টা কথা বলছি।

শাহবাগ আন্দোলন যখন শুরু হয় আর সবার মত আমিও ভেবেছিলাম এটা নির্দলীয়। যে কারনে আমার সব পোস্টে এটাকে ঠেলে “রাষ্ট্র মেরামতে” এজেন্ডার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই যখন বুঝে যাই, তখনই লিখি “কিন্তু এবং যদির খোঁজে”। যে কিন্তু এবং যদি শাহবাগ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো। বাঙালী জাতীয়তাবাদ আর ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে আজকের যে ফ্যাসিবাদের সুচনা করা হয়েছিলো তার প্রতিবাদে লিখি, “এই চেতনা লইয়া আমরা কি করিবো”। ২০১৪ সালে। এই দুইটা লেখার যে কোনো একটা লেখা ছাপা হওয়ার পর বিএনপির শিমুল বিশ্বাস সাহেব ফোন দিয়েছিলেন কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য! আমি কোনো দল করি না। কিন্তু আমি আওয়ামী লীগ হলে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা আমার লেখায় কি খুঁজে পেলেন যে আমার সাথে পরিচয় না থাকা স্বত্বেও আমার নম্বর জোগাড় করে ফোন দিলেন?

আমি ঘটনাচক্রে একজন পরিচিত মুখ, ভাই ও বোনেরা। একজন লেখক যতোটা স্বাধীন ভাবে লিখতে পারেন, ফ্যাসিবাদের কালে আমার সেই স্বাধীনতা পাওয়ার সুযোগ ছিলো না। তার মধ্যেও যতোটুকু করেছি তার ফলও আমাকে ভোগ করতে হয়েছে। ২০১৫ সালে সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন সেলের হেনস্তার শিকার হওয়ার মধ্যে যে দীর্ঘ অত্যাচারের শুরু। সেই বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আমার সিমপ্যাথি পাওয়ার ইচ্ছা এবং প্রয়োজন নাই।

অনেকে বলছে, আমি ভারতীয় হেজেমনির অংশ। যে লোককে বাংলাদেশের কালচারাল এস্টাবলিশমেন্ট ঘৃণা করে আমি কোলকাতা কেন্দ্রিক ভাষার হেজেমনি ভেঙ্গে দিয়েছি বলে, সেই কিনা এই হেজেমনির অংশ!!! আমি পৃথিবীর কোনো দেশেরই ঢালাও নিন্দা করি না। কারন দেশে নানা চিন্তার মানুষ থাকে। আমি সবার সাথেই কথা বলতে চাই, কাজ করতে চাই। কিন্তু আমার দেশের ক্ষতি হলে, আমি তার বিরুদ্ধে বলতে কুন্ঠা করি না। ফেলানীর মৃত্যুর পর কি পোস্ট দিয়েছিলাম ২০১৩ সালে সেটা দেখতে পারেন নীচে।

আমার অবস্থানের উপহার হিসাবে ভারতীয় হাই কমিশনে একসময় কর্মরত রন্জন মন্ডল নামের এক কর্মকর্তা তার ফেসবুকে পাবলিক পোস্ট দিয়ে বহুবার কি অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করেছিলো সেটা খোঁজ করে দেখুন। আর সেই আমি পার্ট অব হেজেমনি? আমরা এক অনন্ত ভয়ের ঘরে বাস করে এসেছি। আমরা কথা বলতে ভয় পেতাম। এমন কি কথা বলার সময় ঘরে ফোন থাকলে সরিয়ে ফেলতাম। পাছে আড়ি পাতে। আমার মনে আছে ২০১২ সালে শুধুমাত্র কথা বলার জন্য আমি আর ‘আরিফ আর হোসাইন’ লুকিয়ে আমেরিকান ক্লাবে গিয়ে বসে আলাপ করতাম কিভাবে এই জালিম সরকারকে হটানো যায়। বিএনপি এবং জামাত কিছু করতে পারবে? আর্মির মনোভাব কি? জোনায়েদ সাকির সাথে বাটন ফোনে কথা বলে গোপনে দেখা করতাম আর পরামর্শ করতাম কি করা যায়। সেই আমি আওয়ামী ফ্যাসিজমের পার্ট?

আমি তো কোনো বিপ্লবী নই। ছিলাম না কোনো কালে। আমি ফিল্মমেকার। ঘটনাচক্রে এবং আল্লাহর রহমতে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি আমার সেই পরিচয়েই গর্বিত। আমি মারা গেলে আমাকে ফিল্মমেকার হিসাবেই মনে রাখা হবে, মন্ত্রী হিসাবে না। ফলে মন্ত্রীত্ব আমার কাছে কোনো অর্জন না, পাবলিক সারভেন্টের দায়িত্ব মাত্র। আমি এটা ফাইনালি অ্যাকসেপ্ট করেছি নিজের ফিল্মের বাইরেও আমার দেশকে কিছু দেয়ার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছে- এটা বিশ্বাস করেছি বলে। আমার মনে হয়েছে, জীবনের এই পর্যায়ে এসে নিজের লাভ-ক্ষতি না ভেবে এই ক্ষমতা দেশের কাজে লাগাই।

লাস্টলি, আই অ্যাম লাভিং মাই জব। বাট আই অ্যাম হেইটিং দ্য ফ্যাক্ট দ্যাট আই হ্যাড টু রাইট দিস!’’




আরো






© All rights reserved © outlookbangla

Developer Design Host BD